প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। — ফাইল চিত্র।
রাজ্যে আসন সমঝোতা ঘিরে জলঘোলা আরও বাড়ল! কংগ্রেস বড় দল, তাই তাদের সিদ্ধান্তের জন্য আরও অপক্ষা করতে হবে বলে মন্তব্য করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে করতে উষ্মা বাড়ছে বাম শিবিরের অন্দরে। জোটের স্বার্থে যাদের ভাগ থেকে আসন বার করার পরিকল্পনা নিয়েছে সিপিএম, সেই বাম শরিক দলের নেতৃত্ব প্রশ্ন তুলছেন, কংগ্রেস কি আদৌ বামেদের হাত ধরবে? এ ভাবে দুই নৌকোয় পা দিয়ে কত দিন চলবে! আর এরই মধ্যে বামেরা কংগ্রেসের সঙ্গেই জোট করতে চলেছে ধরে নিয়ে আক্রমণে নেমে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতায় তাঁরা যে আগ্রহী, বেশ কিছু দিন আগেই বলেছিলেন প্রদেশ সভাপতি অধীর। তার পরে প্রদেশ নির্বাচন কমিটির বৈঠকেও এআইসিসি পর্যবেক্ষকদের সামনে তাঁর বক্তব্য ছিল, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পরিষ্কার নির্দেশিকা না দিলে বাংলায় তাঁরা এগোতে পারছেন না। সেই বৈঠকের পরে সপ্তাহ গড়িয়ে গেলেও কংগ্রেসের তরফে আর কিছুই এগোয়নি। বরং, তলে তলে তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা এআইসিসি এখনও চালিয়ে যাচ্ছে কি না, সেই জল্পনা নতুন করে ভেসে উঠেছে! এমতাবস্থায় নিজেদের ভোট-প্রস্তুতিতে ধাক্কার যুক্তিতে বাম শিবিরে উষ্মা তৈরি হচ্ছে। এমনিতেই সিপিএমকে চলতে হয় শরিকদের নিয়ে। তার উপরে এ বার কংগ্রেস এবং আইএসএফের সঙ্গে সমঝোতার লক্ষ্যে তারা তৈরি। বামফ্রন্টের অন্দরে বাম নেতাদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা কত দিন চলবে? বিশেষত, বিজেপি প্রথম তালিকা ঘোষণা করে ময়দানে নেমে পড়েছে। তৃণমূলও সেই পথে এগোচ্ছে।
বহরমপুরে এ দিন এই সংক্রান্ত প্রশ্নে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস দু’ নৌকোয় না পাঁচ নৌকোয়, তা নিয়ে কারও ভেবে লাভ নেই! কংগ্রেস বড় দল, সেখানে আলোচনা হবে। দিল্লি সিদ্ধান্ত নেবে। অপেক্ষা করতে হবে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘রাজ্যের ক্ষেত্রে সিপিএমের সঙ্গে এক দিন সামান্য আলোচনা হয়েছে। সেখানে প্রারম্ভিক কথা-বার্তা হয়েছে। তার পরে আর হয়নি।’’ বাম শিবিরের এক প্রবীণ নেতা অবশ্য বলছেন, ‘‘কংগ্রেস যদি সমঝোতায় না আসে এবং রাজ্যে চতুর্মুখী লড়াই হয়, তা হলে আমাদের দু’পক্ষেরই ক্ষতি। কিন্তু বামেরা তো শূন্য! নতুন করে কিছু হারানোর নেই। বরং, বামেরা প্রার্থী দিয়ে দিলে ভোট ভাগাভাগিতে কংগ্রেসের দখলে থাকা আসন হাতছাড়া হতে পারে। তাই তাগিদ কংগ্রেসেরই বেশি থাকা উচিত!’’
এই আবহে তৃণমূলের নেতা কুণাল ঘোষ মন্তব্য করেছেন, ‘‘বামফ্রন্টকে চ্যালেঞ্জ করছি, ক্ষমতা থাকলে একা লড়ে দেখাক!’’ ইন্দিরা ও রাজীব গান্ধীকে বামেদের আক্রমণের পুরনো প্রসঙ্গ তুলে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘যদি এতই বামেদের সংগঠন আর সমর্থন, এতই ইনসাফ যাত্রার নাটক, দম থাকলে বামফ্রন্ট একা লড়ুক!’’ প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক সুমন রায় চৌধুরীর পাল্টা মন্তব্য, ‘‘প্রমাণিত হয়ে গেল, তৃণমূল ভয় পাচ্ছে বাম-কংগ্রেস জোটকে! সাগরদিঘির উপনির্বাচনে পরাজয়ের ভীতি কুরে খাচ্ছে তৃণমূল নেত্রীকে! কংগ্রেস ও বাম একা লড়লে কোথাও তৃণমূলের নিজের, কোথাও আবার বিজেপিকে সাহায্য করতে সুবিধা হবে। তাই ভোট ভাগের খেলা রুখতে হবে।’’