কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ। ছবি: পিটিআই।
‘রামরাজ্যে’ মানুষ কেন এত বৈষম্যের শিকার, কেন বঞ্চনার মুখে পড়ছেন যোগ্য প্রার্থীরা, রামমন্দির বিতর্কে আজ লোকসভায় প্রশ্ন তুললেন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ। বিতর্ক এড়াতে রামমন্দির সংক্রান্ত আলোচনায় তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য আজ অংশ নেননি।
চলতি লোকসভা অধিবেশনের শেষ দিনটিকে রামমন্দির নিয়ে আলোচনার জন্য বেছে নিয়েছিল শাসক শিবির। এক দিকে রামমন্দির প্রতিষ্ঠা নিয়ে গোটা দিন আলোচনা করে হিন্দু ভোটকে বার্তা দেওয়া, তেমনই বিরোধী শিবিরকে রামমন্দির নিয়ে আলোচনায় টেনে এনে এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশল নেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা, যা অনেকাংশে খেটেও যায়। আজ দু’কক্ষেই অধিকাংশ বিরোধী দলের আসন ছিল খালি। লোকসভায় তৃণমূল ও সিপিএম সাংসদেরা সকাল থেকেই অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে আলোচনায় অংশ নেননি তাঁরা। অন্য দিকে রাজ্যসভায় আর্থিক শ্বেতপত্র নিয়ে আলোচনায় তৃণমূল সাংসদ সাকেত গোখলে যোগ দিলেও, পরে রামমন্দির নিয়ে আলোচনা শুরু হলে সাকেতকে আর দেখা যায়নি। তৃণমূলের লোকসভার সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘ধর্মীয় ব্যাপারে মন্তব্য না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। ধর্মের সঙ্গে মানুষের আবেগ জড়িত। তবে একই সঙ্গে মাথায় রাখতে হবে ধর্ম নিয়ে যাতে বিভাজনের রাজনীতি না হয়।’’
কংগ্রেস অবশ্য গোড়া থেকেই আলোচনায় অংশ নিয়েছে। আজ দলের হয়ে বলতে উঠে গোড়াতেই রামমন্দির নির্মাণের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান গৌরব গগৈ। গত ২২ জানুয়ারি রাম মন্দির উদ্বোধন ও রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশে ‘রামরাজ্য’ প্রতিষ্ঠা হয়ে গিয়েছে বলে প্রচারের হাওয়া তুলেছে গেরুয়া শিবির। সেই তথাকথিত ‘রামরাজ্যে’ কেন দলিত, গরিব, পিছিয়ে থাকা সমাজের মানুষেরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন গৌরব। তিনি বলেন, ‘‘শাসক শিবিরকে ভেবে দেখতে হবে, মহাত্মা গান্ধীর রামরাজ্যের পরিভাষা অনুয়ায়ী আজকের দিনে অত্যন্ত পিছিয়ে থাকা শ্রেণির মানুষ, বঞ্চিত ও সংখ্যালঘুরা আদৌ খুশি কি না? দেখা যাচ্ছে তফসিলি জাতি, জনজাতির উপর হামলার সংখ্যা বাড়ছে। পিছিয়ে থাকা শ্রেণি আজ জাতভিত্তিক জনগণনার দাবি তুলে সরব। কারণ তাঁরা দেখছেন, শিক্ষা-চাকরি সব ক্ষেত্রেই তারা বঞ্চিত হচ্ছেন।’’ পাশাপাশি রামমন্দির উদ্বোধনকে যে ভাবে ভোটের আগে রাজনৈতিক নম্বর বাড়ানোর জন্য শাসক শিবির ব্যবহার করছে, তারও সমালোচনায় সরব হন গৌরব। বিজেপিকে নাথুরাম গডসের হাত ছাড়ার পরামর্শ দেন। যা নিয়ে আপত্তি জানায় শাসক শিবির।
শরদ পওয়ারের এনসিপি-র সাংসদ অমল কোলেও প্রশ্ন তুলেছেন ‘রামরাজ্যের’ পরিভাষা নিয়ে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘সব সম্প্রদায় মিলেমিশে একসঙ্গে থাকতে পারে, এমন ‘রামরাজ্য’ কবে আসবে?’’ সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে নিজের দলের প্রতীক হারিয়েছেন শরদ পওয়ার। তিনি দলের প্রতিষ্ঠাতা হলেও, দল ভেঙে বেরিয়ে যাওয়া ভাইপো অজিত পওয়ারের গোষ্ঠীকেই এনসিপি-র প্রতীক ব্যবহারের যোগ্য বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তা নিয়ে কটাক্ষ করে আজ কোলে বলেন, ‘‘রামায়ণে রাবণ সীতাকে হরণ করেছিল। এখন ইডি-সিবিআইয়ের মতো শক্তিকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক দলের নাম-প্রতীক হরণ করে নেওয়া হচ্ছে।’’