প্রার্থী ঘোষণা না হলেও পুরুলিয়ায় ফ্লেক্স তৈরির কাজ এগিয়ে রাখছে ফরোয়ার্ড ব্লক। ছবি: সুজিত মাহাতো।
যত জট যেন পুরুলিয়ায়!
বাম ও কংগ্রেসের আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হয়নি। এর মধ্যেই ফরওয়ার্ড ব্লক ও কংগ্রেস দু’দলই পুরুলিয়া কেন্দ্রে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলছে। ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের কর্মীরা দেওয়াল লিখতে নেমে পড়েছে। পিছিয়ে নেই ফরওয়ার্ড ব্লকও।
গত লোকসভা নির্বাচনে পুরুলিয়ায় জোট হয়নি। বামফ্রন্টের শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী দিয়েছিল। পাল্টা প্রার্থী দেয় কংগ্রেস। দু’দলের ভোট প্রাপ্তি শতাংশের বিচারে ছিল নগণ্য। কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতো পান ৮৪,৪৭৭ (৬.২৩ শতাংশ) ভোট। ফব-র বীর সিং মাহাতো (বর্তমানে প্রয়াত) পান ৬৮,৪৩৪ (৫.০৫ শতাংশ)। সেই প্রেক্ষিতেই এ বার পুরুলিয়া আসনে তাদের ছেড়ে দেওয়ার জোরাল দাবি তুলেছে কংগ্রেস।
সূত্রের খবর, জোট হলে রাজ্যে যে আসনগুলিতে কংগ্রেস লড়তে চায়, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর উপস্থিতিতে তার একটি তালিকা তৈরি হয়েছে। তার প্রথম দিকেই আছে পুরুলিয়া কেন্দ্র। সেই তালিকা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হয়েছে।
জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর দাবি, ‘‘গত লোকসভা ভোটে সিপিএম তাদের শরিক দল ফরওয়ার্ড ব্লককে সমর্থন করেছিল। তারপরেও এখানে আমরা ফরওয়ার্ড ব্লকের থেকে অনেক বেশি ভোট পাই। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটেও পুরুলিয়ার সাত আসনের মিলিত ভোট বামফ্রন্টের থেকে আমাদেরই বেশি। তাই দলের কর্মী-সমর্থকেরা দাবি তুলেছেন, পুরুলিয়ায় লড়াই করবে কংগ্রেসই। বামেদের শরিকরা কী করবেন, সেটা তাঁদের নিজস্ব বিষয়। তবে জোট হোক বা না হোক, পুরুলিয়ায় হাত চিহ্ন লড়াই করবে।’’ তবে নেপাল অনুগামীদের আশা, সিপিএমের সঙ্গে তাঁদের আসন সমঝোতা হবে।
দাবি থেকে সরতে নারাজ ফব-ও। ১৯৭১ সাল থেকে পুরুলিয়া কেন্দ্রে লড়ছে তারা।১৯৭৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত টানা এই আসন জিতে এসেছে ফব। সেই প্রেক্ষিতেই পুরুলিয়া ছাড়তে নারাজ দলের স্থানীয় নেতৃত্ব। ফব-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অসীম সিংহের দাবি, ‘‘পুরুলিয়ায় আমাদের লড়াইয়ের ইতিহাস দীর্ঘ। টানা ৩২ বছর ধরে পুরুলিয়া লোকসভা আসনে জিতেছেন আমাদের প্রার্থীরা। এই আসন ঘিরে দলের কর্মীদের একটা আলাদা আবেগ আছে। যাই হোক না কেন, পুরুলিয়াতে আমরাই লড়ব।”
সূত্রের খবর, রাজ্যে পুরুলিয়া-সহ তিনটি আসনে লড়াই করতে চেয়ে বামফ্রন্ট নেতৃত্বের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে ফব। পুরুলিয়ার শ্রমিক নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক ধীরেন্দ্রনাথ মাহাতো এবং প্রাক্তন সাংসদ চিত্তরঞ্জন মাহাতোর ছেলে দেবরঞ্জন মাহাতোর নাম প্রার্থী হিসাবে বামফ্রন্টের কাছে পাঠিয়েছে ফব।
এ বার আদিবাসী কুড়মি সমাজ ভোটে লড়াই করার কথা ঘোষণা করায় অতীতের রাজনৈতিক সমীকরণ এই নির্বাচনে বদলের সম্ভাবনা দেখছেন জেলার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। সেক্ষেত্রে পুরুলিয়ায় কংগ্রেস ও ফব-র ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ লড়াইয়ে তা প্রভাব ফেলতে পারে।
তাই দু’দলের নিচুতলার কর্মীরা চাইছেন, প্রার্থীর নাম দেরিতে ঘোষণা হলেও, কোন দল পুরুলিয়ায় লড়াই করবে, তা দ্রুত জানানো হোক। তবে ফব-র অভিযোগ, কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব রাজ্যে বামেদের বদলে তৃণমূলের সঙ্গেই জোটে আগ্রহী ছিলেন। তৃণমূল একক ভাবে সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরেই তাঁরা বামেদের সঙ্গে জোটে আগ্রহী হন। সময় নষ্টের জন্য কংগ্রেসই দায়ি।
ফব যদি জোটের সমীকরণ অগ্রাহ্য করে পুরুলিয়ায় প্রার্থী দেয়, তাহলে বড় শরিক সিপিএম কী ভূমিকা নেবে? প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জেলা রাজনীতির অলিন্দে। সরাসরি জবাব মেলেনি সিপিএমের জেলা সম্পাদক তথা বামফ্রন্টের জেলা আহ্বায়ক প্রদীপ রায়ের কাছে। তিনি বলেন, ‘‘বরাবরই রাজ্য বামফ্রন্ট নেতৃত্ব বৈঠক করে প্রার্থী তালিকা রাজ্যগত ভাবেই চূড়ান্ত করেন। সেই প্রক্রিয়া চলছে। তালিকা ঘোষণা হলেই আমরাও জেলায় বামফ্রন্ট গতভাবে বসে নির্বাচনী কৌশল চূড়ান্ত করব। তার আগে স্থানীয় স্তরে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়া হয়েছে।”