অধীর চৌধুরী। — ফাইল চিত্র।
বামফ্রন্ট ঘোষণা করেছে রাজ্যের ১৭ আসনে প্রার্থীর নাম। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এ বার জানালেন, প্রাথমিক ভাবে ৭টি আসনে তাঁদের প্রার্থী থাকছে। তার মধ্যে দুই আসনে প্রার্থীদের নামও ঘোষণা করলেন। একই সঙ্গে কটাক্ষ করলেন দুই বাম শরিক আরএসপি এবং ফরওয়ার্ড ব্লককে। যদিও বামেদের সঙ্গে আসন-রফা নিয়ে কংগ্রেসের আলোচনা এখনও চলছে। প্রথম দফার ভোটের মনোনয়ন-পর্ব যখন শুরু হয়ে গিয়েছে, সেই সময়েই এমন ঘটনাপ্রবাহে বিভ্রান্তি বাড়ছে বিরোধী শিবিরে। কংগ্রেসের মনোভাব নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।
সূত্রের খবর, সিপিএমের সঙ্গে আলোচনায় কংগ্রেসের জন্য ৯টি আসনের বিষয়ে নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছে। আলোচনা চলছে আরও তিনটি আসনের দাবি নিয়ে। কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠকে মঙ্গলবারই বাংলার কিছু আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঠিক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এআইসিসি-র তরফে বুধবারও কোনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। যদিও বহরমপুরে বসে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী জানিয়েছেন, জঙ্গিপুর আসনে দলের প্রয়াত নেতা আব্দুস সাত্তারের নাতি ও জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য মুর্তাজা হোসেন (বকুল) এবং বহরমপুরে তিনি নিজে প্রার্থী হচ্ছেন। বাকি প্রার্থীরাও তাঁদের ব্যাপারে জেনে গিয়েছেন এবং দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে গিয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি অবশ্য বলেছেন, ‘‘এটা ঘোষণা করা আমার দায়িত্ব নয়। প্রার্থী ঠিক হয়ে গিয়েছে। এআইসিসি ঘোষণা করবে। মুর্শিদাবাদটা (জেলা) আপনারা জানতে চাইছেন, তাই বলে দিলাম!’’
অধীরের কথায় স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে, দার্জিলিং, রায়গঞ্জ, উত্তর ও দক্ষিণ মালদহ, জঙ্গিপুর, বহরমপুর ও পুরুলিয়া আসনে কংগ্রেস প্রার্থী দেবে। যদিও তার বাইরেও কিছু আসন নিয়ে বামেদের সঙ্গে আলোচনা চলছে, যা নিয়ে প্রদেশ সভাপতি মন্তব্য করেননি। প্রথম পর্বে ভোট হওয়ার কথা কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি আসনে। সেই প্রসঙ্গে অধীর বলেছেন, ‘‘আলিপুরদুয়ারটা আমরা চেয়েছিলাম বামেদের কাছে। ওরা বলেওছিল প্রথমে আমাদের দেবে। তার পরে শুনলাম ওদের নাকি আরএসপি বলে কোনও দল আছে! তারা প্রার্থী দিয়েছে। বামেদের কথা শুনছে না আরএসপি বা ফরওয়ার্ড ব্লক। এটা দেখতে পাচ্ছি আমি।’’ মুর্শিদাবাদ জেলায় আরএসপি-র প্রয়াত নেতা ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যাঁর রাজনৈতিক উত্থান জড়িত, সেই বহরমপুরের সাংসদের মুখে আরএসপি সম্পর্কে ‘তাচ্ছিল্যের সুর’ শুনে বাম নেতারা স্তম্ভিত ও মর্মাহত! তবে রফার প্রক্রিয়া চলাকালীন প্রকাশ্যে কেউ তরজায় জড়াচ্ছেন না।
আসন সমঝোতার বিযয়ে বারংবার প্রদেশ সভাপতির মনোভাব বুঝেই এগোচ্ছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, দফায় দফায় নানা তালিকা আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির রাজনৈতিক সচিব মারফত। আসন সমঝোতার বিষয়ে দলীয় স্তরে কংগ্রেসে কোনও আলোচনা নেই, এই কাজের জন্য কোনও কমিটি বা দল ও গড়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের নানা স্তরের নেতারা ধারণা, অনুমান এবং কল্পনার ভিত্তিতে নানা পদক্ষেপ করছেন। দক্ষিণ কলকাতা আসনে যেমন টিকিট-প্রত্যাশী ছিলেন জেলা সভাপতি প্রদীপ প্রসাদ। তিনি, জলপাইগুড়ি ও পূর্ব মেদিনীপুরের দুই জেলা সভাপতি পিনাকী সেনগুপ্ত ও মানস কর মহাপাত্র এবং ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন জেলা সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য সই করে দলের হাই কম্যান্ডকে চিঠি লিখে অভিযোগ করেছেন, কোনও আলোচনা ছাড়াই সিপিএম একতরফা প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে! তাঁদের যুক্তি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, দক্ষিণ কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি, হাওড়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, নদিয়ার মতো জেলায় কংগ্রেসকে আসন দেওয়া না হলে দলের অস্তিত্বই বিপন্ন হবে। যদিও সিপিএম সূত্রের খবর, নদিয়ার রানাঘাট বা হাওড়ার উলুবেড়িয়ার মতো আসন নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বস্তুত, উলুবেড়িয়া আসন সিপিএম আইএসএফ-কে ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়ার পরে কংগ্রেস ওই আসন দাবি করায় পরিস্থিতি জটিল হয়েছে! চাপ বাড়াতে আইএসএফ-ও ফের জানিয়েছে, তারা শীঘ্রই তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে দেবে।
বাম সূত্রের খবর, কংগ্রেসের সঙ্গে আরও কথা বলে জট খোলার চেষ্টা চলবে। আইএসএফের সঙ্গেও সিপিএমের তরফে ফের আলোচনা করবেন বিকাশ ভট্টাচার্য। তার পরে কাল, শুক্রবার ডাকা হতে পারে বামফ্রন্টের বৈঠক। সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘আমরা চাই, রাজ্যে বিজেপি ও তৃণমূল-বিরোধী ভোটকে একত্র করতে। খুব দ্রুতই চিত্রটা পরিষ্কার হবে। এর বেশি আমরা কিছু বলছি না।’’