Abhishek Banerjee

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে টর্নেডোয় দুর্গতদের ১.২০ লক্ষ টাকা দেবেন মমতা, ব্যবস্থা নিলে নিক কমিশন: অভিষেক

গত বুধবার ঝড়ে দুর্গতদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেছিলেন অভিষেক। এর পর শুক্রবার ময়নাগুড়িতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তার পরেই এই ঘোষণা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা ও জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৪৪
Share:

বড় ঘোষণা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। —ফাইল চিত্র।

নির্বাচন কমিশন ‘অনুমতি’ দিক বা না-দিক, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার জলপাইগুড়িতে ঝড়ে দুর্গতদের ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে দেবে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ওই টাকা পৌঁছে যাবে বলে জানিয়ে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

গত বুধবারের ঝড়ে দুর্গতদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করেছিলেন অভিষেক। এর পর শুক্রবার ময়নাগুড়ির বার্নিশে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পরে তৃণমূলের সেনাপতি জানান, যদি কমিশন চায়, সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতেই পারে। কিন্তু রাজ্য সরকার আর্থিক সাহায্য করবেই। তাঁর কথায়, ‘‘ইসি (নির্বাচন কমিশন) আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে কেস করতে চাইলে করতেই পারে, কিন্তু আমরা অর্থসাহায্য করবই।’’ পাশাপাশি, আবাস প্রকল্পে ‘বঞ্চনা’ নিয়েও বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘আবাসের টাকাও ওরা আটকেছে!’’

ঘূর্ণিঝড়ের ১২ দিন পরে এখনও বিপর্যস্ত অঞ্চলের দুর্গতদের অনেকেই খোলা আকাশের নীচে ত্রিপল টাঙিয়ে রয়েছেন বলে স্থানীয়দের দাবি। সরকারি সূত্রে খবর, প্রশাসনের তরফে ত্রাণশিবির করে দেওয়া হলেও দুর্গতদের অনেকেই সেখানে নানা কারণে থাকতে চাইছেন না। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, কবে ভেঙে যাওয়া ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে? যদিও এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক নির্বাচনী জনসভায় জানিয়েছেন, নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি চালু থাকায় তিনি সরকারি ভাবে কোনও ঘোষণা করতে পারবেন না। কিন্তু, আইনি পরিকাঠামোর মধ্যে রাজ্য প্রশাসনের তরফে যাতে দুর্গতদের ঘর তৈরি করে দেওয়া যায়, সে জন্য নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনিক সূত্রে খবর, সেই চিঠির কোনও জবাব এখনও আসেনি। তা নিয়ে ‘টানাপড়েনের’ মধ্যেই এই ঘোষণা করে দিলেন অভিষেক।

Advertisement

শুক্রবার জলপাইগুড়ির ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিল তৃণমূলের ১০ জনের প্রতিনিধি দলও। শাসকদল সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের রাজ্য প্রশাসন যাতে সাহায্য করতে পারে, তার বিশেষ অনুমোদনের দাবি নিয়ে গত সোমবার নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হতে গিয়ে ‘হেনস্থা’র শিকার হতে হয়েছিল নেতাদের। তাঁরাই শুক্রবার জলপাইগুড়ি যান। সেই দলে ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, দোলা সেন, শান্তনু সেন, সাগরিকা ঘোষেরা। বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌঁছে দোলা বলেন, ‘‘তৃণমূলের পক্ষ থেকে যে ১০ জন প্রতিনিধি নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়েছিলাম, তাঁরাই এসেছিলেন। আমরা কমিশনের কাছে গিয়েছিলাম এই মানবিক আবেদন জানাতে যে, ময়নাগুড়িতে টর্নেডোয় যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সেই পরিবারগুলিকে যাতে রাজ্য প্রশাসন সাহায্য করতে পারেন। এই বিশেষ অনুমতিটুকুই চাইতে গিয়েছিলাম আমরা। সেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করতে আমরা উত্তরবঙ্গে এসেছি।’’ সাগরিকা বলেন, ‘‘আমরা মূলত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের কথা শুনতে এসেছি। তাঁরা কেমন আছেন, কী ভাবে দিন কাটাচ্ছেন, এই পরিস্থিতিতে তাঁদের কী কী দরকার, তাঁদের কোথায় কী অসুবিধা হচ্ছে— এ সব জানতে।’’

তৃণমূলের অভিযোগ, অসমেও বিপর্যয়ের ঘটনায় সেখানকার রাজ্য সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সাহায্য করার বিশেষ অনুমতি দিয়েছে কমিশন। তাদের প্রশ্ন, তা হলে পশ্চিমবঙ্গের সরকারকে কেন সেই সুযোগ দেওয়া হবে না? দোলা বলেন, ‘‘আমরা কমিশনের কাছে আশা করব, ভোটের মাঠে সমানে সমানে খেলার ব্যবস্থা করবে তারা। মানবিকতার খাতিরে বাংলা ও অসমের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ করবে না তারা।’’

এ ব্যাপারে কমিশন সরকারি ভাবে কিছু জানায়নি। তবে কমিশনের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, কোনও বিপর্যয়ে আপৎকালীন ত্রাণ-পুনর্গঠনের প্রশ্নে ভোটের বিধি বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। কমিশনকে জানিয়ে সে সব করলেই চলে। তবে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কোনও রাজনৈতিক প্রতিনিধি বা মন্ত্রী যুক্ত থাকতে পারেন না। একমাত্র আধিকারিকেরা সে কাজ করতে পারেন। কমিশনের এক কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘প্রশাসন নিজে তো বাড়ি তৈরি করে দেবে না। বরং উপভোক্তাকে সেই টাকা দেবে। সে ক্ষেত্রে তা ক্ষতিপূরণের মতোই। ক্ষতিপূরণের যে মানদণ্ড থাকে, সেই অনুয়ায়ী অর্থের পরিমাণ কমিশনকে জানিয়ে দিলে কোনও সমস্যা থাকার কথা নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement