প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে নবীন পট্টনায়ক। ছবি: পিটিআই।
নবীনবাবু এখনও রাজি না হলেও চন্দ্রবাবু রাজি হলেন। লোকসভা নির্বাচন ও তার সঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশের বিধানসভা ভোটে চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলুগু দেশম, বিজেপি ও পবন কল্যাণের জনসেনা পার্টির মধ্যে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হয়ে গেল। এনডিএ-র শরিক দলের সংখ্যা আরও বাড়ল।
চন্দ্রবাবু অন্ধ্রপ্রদেশের ২৫টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৬টি বিজেপি ও ২টি জনসেনা পার্টিকে ছাড়তে রাজি হয়েছেন। তেলুগু দেশম বাকি ১৭টি আসনে লড়বে। তিনটি দল আজ সম্মিলিত বিবৃতি জারি করে আসন সমঝোতার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। অন্ধ্রপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে চন্দ্রবাবু ১৭৫টি আসনের মধ্যে বিজেপি ও জনসেনাকে ৩০টি আসন ছেড়ে দেবেন। তবে অন্ধ্রে চন্দ্রবাবুর এনডিএ-তে প্রত্যাবর্তন হলেও ওড়িশার ‘নবীনবাবু’, অর্থাৎ নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে বিজেপির আসন সমঝোতা ধাক্কা খেয়েছে। ওড়িশাতেও লোকসভা ভোটের সঙ্গেই বিধানসভা নির্বাচন হবে। বিজেডি ওরফে বিজু জনতা দল কোনও ভাবেই বিধানসভায় বেশি আসন ছাড়তে রাজি হচ্ছে না। নবীন চাইছেন, তাঁরা বিধানসভায় ১৪৭টি কেন্দ্রের মধ্যে অন্তত ১০০টি আসনে লড়বেন। কিন্তু বিজেপি চাইছে, বিজু জনতা দলের সঙ্গে আগে যখন বিজেপির জোট ছিল, সে সময়ের মতো বিজু জনতা দল ৮৪টি-র মতো আসনে লড়ুক। বিজু জনতা দল অবশ্য লোকসভার ২১টি আসনের মধ্যে বিজেপিকে ১৪টি আসন ছাড়তে রাজি হয়েছে। কিন্তু বিধানসভা আসন নিয়ে জটে কথাবার্তা আপাতত থমকে গিয়েছে।
নরেন্দ্র মোদী এ বার লোকসভা নির্বাচনে ৩৭০টি আসন জয়ের লক্ষ্য স্থির করেছেন। তাই বিজেপি যত বেশি সম্ভব আসনে লড়তে চাইছে। কিন্তু উত্তর ভারত থেকে আসন বাড়ানোর তেমন সুযোগ না থাকায় নতুন শরিকদের সঙ্গেও হাত মেলাতে মরিয়া বিজেপি। যা দেখেই কংগ্রেস বলছে, মুখে বিজেপির ৩৭০ আসন, এনডিএ-র ৪০০ পার স্লোগান দিলেও আসলে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা আসন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। তাই ২০১৮-এ এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া তেলুগু দেশমকে আবার ডেকে আনতে হচ্ছে।
নীতীশ কুমারের মতো চন্দ্রবাবু নায়ডুও এক সময়ে এনডিএ-তে ছিলেন। পরে এনডিএ ত্যাগ করেন। আবার তাঁর এনডিএ-তে প্রত্যাবর্তন ঘটল। আজ ওই সম্মিলিত বিবৃতিতে এক দিকে, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে দশ বছরে দেশে উন্নয়নের কাজের প্রশংসা করা হয়েছে। অন্য দিকে, ১৯৯৬ থেকে ২০১৮-এর মধ্যে বিজেপি ও তেলুগু দেশমের পুরনো সম্পর্কের কথাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০১৪-তে তেলুগু দেশম ও বিজেপি জোট বেঁধে ভোটে লড়েছিল। সে সময়েও জনসেনা পার্টি এই জোটকে সমর্থন করেছিল। প্রথমে চন্দ্রবাবু বিজেপিকে লোকসভা ভোটে ৪-৫টির বেশি আসন ছাড়তে রাজি না হলেও শুক্রবার অমিত শাহ, জে পি নড্ডার সঙ্গে চন্দ্রবাবু, জনসেনা পার্টির বৈঠকে জট কাটে।
অন্য দিকে ২০১৮-তে বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করলেও ২০১৯-এর লোকসভা বা বিধানসভার নির্বাচনে চন্দ্রবাবু ব্যর্থ হন। লোকসভায় আসন কমে যায়। তার পর থেকেই তিনি এনডিএ-তে ফেরার চেষ্টা করছিলেন। বিশেষত ওয়াই এস আর জগন্মোহন রেড্ডি সরকার তাঁকে জেলে পাঠানোর পরে চন্দ্রবাবু আরও মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। কংগ্রেস যখন জগন্মোহনের বোন ওয়াই এস আর শর্মিলাকে সামনে রেখে ফের অন্ধ্রে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে, তখন চন্দ্রবাবুর সামনে বিজেপির হাত ধরা ছাড়া আর উপায় ছিল না।