Lok Sabha Election 2024

দলীয় নেতৃত্বের নিন্দা এবং অভিষেকের প্রশংসায় সৌমিত্র, শংসা সুজাতাকেও, ‘বার্তা’ তৃণমূলকে?

কঠিন লড়াইয়ের পরে জিতেছেন সৌমিত্র খাঁ। নিজের গড় ধরে রাখতে পারলেও তাঁর দল বিজেপি রাজ্যে খারাপ ফল করেছে। আটটি জেতা আসন ধরে রাখতেই পারেনি। এর পরেই নেতৃত্বের সমালোচনায় বিষ্ণুপুরে জয়ী সৌমিত্র।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২৪ ১৭:২৬
Share:

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি সুজাতা মণ্ডলেরও সুখ্যাতি সৌমিত্র খাঁয়ের মুখে। — ফাইল চিত্র।

দলের নেতৃত্বে অনভিজ্ঞেরা থাকাতেই এমন বিপর্যয়। ফলঘোষণার পরদিন বিজেপি নেতৃত্বের এমন সমালোচনার পাশাপাশি তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করলেন বিষ্ণুপুর লোকসভা আসনে টানা তিন বার জয়ী সৌমিত্র খাঁ। কিন্তু খোলাখুলি অভিষেকের প্রশংসা করে বিজেপির সাংসদ কি তৃণমূলকে ‘বার্তা’ দিলেন? না কি শুভেন্দু অধিকারীকে? এমন জল্পনাও বিজেপির অন্দরে উঠতে শুরু করেছে।

Advertisement

২০১৪ সালে তৃণমূলের টিকিটে প্রথম বার সাংসদ হয়েছিলেন কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক সৌমিত্র। দ্বিতীয় বার দলবদল করেও ২০১৯ সালে সাংসদ হন বিষ্ণুপুর থেকে। অনেক কম ব্যবধানে হলেও শেষ পর্যন্ত নিজের আসন টিকিয়ে রেখেছেন। সৌমিত্র জিতেছেন তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী তথা হুগলি জেলা পরিষদের তৃণমূল কর্মাধ্যক্ষ সুজাতা মণ্ডলের বিরুদ্ধে। প্রথম বার প্রায় দেড় লাখ এবং দ্বিতীয় বার ৭৮ হাজার ভোটে জেতা সৌমিত্রের এ বারের জয়ের ব্যবধান মাত্র ৫,৫৬৭ ভোট। তবে এই জয় বিজেপি নয়, বরং আরএসএসের ‘সৌজন্যে’ এসেছে বলেই দাবি করেছেন সৌমিত্র। তাঁর দাবি, রাজ্য নেতৃত্বের ‘গাফিলতি’র জন্যই বাংলায় এই বিপর্যয়। যদিও দিল্লির নেতৃত্বদের সাধুবাদ জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গেই সৌমিত্র বলেন, ‘‘আরএসএস না থাকলে বাংলায় এই কয়েকটা আসনও আমরা পেতাম না।’’ সৌমিত্রের মুখে দলীয় নেতৃত্বকে আক্রমণ নতুন কিছু নয়। কখনও কখনও নাম করেও রাজ্য নেতাদের সমালোচনা করেছেন তিনি। তবে বুধবার সামগ্রিক ভাবে রাজ্য নেতৃত্বের নিন্দা করলেও আলাদা করে কোনও নেতার নামোল্লেখ করেননি সৌমিত্র। তবে তাঁর বক্তব্যে ‘ইশারা’ রয়েছে।

সৌমিত্র বরাবর অভিষেকের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন। তাঁর তৃণমূলে ফেরার জল্পনা শুরু হলেই তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘যে দিন অভিষেক বিজেপিতে যোগ দেবেন, সে দিন আমি তৃণমূলে ফেরার কথা ভাবব।’’ ঘটনাচক্রে, বুধবার তাঁর মুখে শোনা গেল অভিষেকের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশংসার কথা। সৌমিত্র বলেছেন, ‘‘অভিষেকরা এক-একটা লোকসভার দুটো করে বিধানসভা টার্গেট করে নিয়েছিল। ভোটের প্রস্তুতির দিন থেকেই তৃণমূলের স্থানীয় কর্মীরা সতর্ক ছিল। সেখানে বিজেপির নেতৃত্ব এ সব কিছুই করেনি। অভিষেকের ছকও বুঝতে পারেনি।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘অভিষেক ভাল কাজ করেছেন বলেই তৃণমূল ভাল ফল করেছে।’’

Advertisement

লোকসভা ভোট ২০২৪

২০২১ সালে নীলবাড়ির লড়াইয়ের সময় থেকেই সৌমিত্রের সঙ্গে সুজাতার দূরত্ব তৈরি হয়। গত লোকসভা নির্বাচনে আইনি প্রশ্নে সৌমিত্র বিষ্ণুপুর লোকসভা এলাকায় ঢুকতে না পারায় সুজাতাই তাঁর প্রচারে প্রধান ভূমিকা নেন। কিন্তু সুজাতা তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে তাঁদের দাম্পত্যেও সংঘাতের ছায়া পড়ে। বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। সেই সময়ে তো বটেই, বিষ্ণুপুরে মুখোমুখি লড়াইয়ের সময়েও একে অপরকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন। মঙ্গলবার গণনাকেন্দ্রেও দু’জনের মধ্যে গোলমাল হয়। একই সঙ্গে লড়াইও চলে হাড্ডাহাড্ডি। অনেক সময়েই সুজাতা এগিয়ে ছিলেন। শেষের কয়েক রাউন্ড গণনায় সৌমিত্র জয় নিশ্চিত করতে পারলেও ব্যবধান বাড়াতে পারেননি। বুধবার অবশ্য সৌমিত্রের মুখে শোনা গেল সুজাতার প্রশস্তিও। তিনি বলেন, ‘‘সুজাতাও ভাল ফল করেছে। ও ভাল খেটেছে।’’

অভিষেক বা সুজাতার প্রশংসার পাশাপাশি সৌমিত্র দলীয় নেতৃত্বের নিন্দাতেই বেশি সরব হয়েছেন। দাবি করেছেন, রাজ্য বিজেপিতে এমন কোনও নেতা নেই, যিনি ভোটে জিতে এসেছেন। সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমনও কেউ নেই। সেই সঙ্গে বিজেপির হারের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডার এবং সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূলের জন্য কাজ করেছে। পাশাপাশি বিজেপিও রাজ্যে কোনও মহিলা মুখ তৈরি করতে পারেনি।’’ সেই সঙ্গে সৌমিত্রের অভিযোগ, ‘‘রাজ্য বিজেপির উপরতলার কয়েক জন নেতা তৃণমূলের সঙ্গে একটা বোঝাপড়া করে থাকতে পারেন। সেটা না হলে আরও কয়েকটি আসন জিততে পারত বিজেপি।’’ দিলীপ ঘোষের মতো নেতার আসন বদলে দেওয়াটাও ঠিক হয়নি বলেও তাঁর অভিমত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement