নীতিশ কুমার। ছবি: পিটিআই।
বিরোধী জোট থেকে ডিগবাজি খেয়ে বিজেপির হাত ধরার পরেও মনের ব্যথা দূর হচ্ছে না বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের। গত বছর জুলাইয়ে বেঙ্গালুরুতে বিরোধী জোটের দ্বিতীয় বৈঠকে ‘ইন্ডিয়া’ নামের আত্মপ্রকাশের সময়ে তাঁর কথা না-শোনার বেদনা চাড়া দিচ্ছে এখনও। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, সেই রোষেই তিনি বলছেন, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র অস্তিত্ব অনেক দিন আগেই খতম হয়ে গিয়েছে। আর তিনি বিহারের স্বার্থ রক্ষায় মন দিয়েছেন।
এনসি প্রধান ফারুক আবদুল্লা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর দল একাই লড়বে। ‘ইন্ডিয়া’ ছেড়ে গিয়েছেন আরএলডি-র জয়ন্ত চৌধরীও। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের ক্ষতে কিছুটা নুনের ছিটে ছড়িয়ে আজ নীতীশ বলেছেন, “আমি আমার সর্বসাধ্য দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম (বিরোধী জোট দাঁড় করানোর)। এমনকি, জোটের এই নামও (ইন্ডিয়া) আমার পছন্দ ছিল না। অন্য কিছু আমার মাথায় ছিল। সে যাই হোক, জোট অনেক দিন হল খতম হয়ে গিয়েছে। আমি এখন বিহারের মানুষের জন্য কাজ করছি এবং সেটাই করে যাব।” তাঁর দাবি, “ওই জোটকে ঐক্যবদ্ধ করতে আমি পরিশ্রম করেছিলাম। কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের মতো করে নাম রেখে দিল। এই জোট আর কি কোনও কাজ করছে, সব তো শেষ হয়ে গিয়েছে। বিহারের দ্রুত উন্নয়নের স্বার্থে আমি ওই জোট ছেড়েছি।”
এখানেই না থেমে লালুপ্রসাদ, তেজস্বী যাদবদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগগুলি নিয়েও সরব হয়েছেন নীতীশ। বলেছেন, “যে যে অনিয়ম পাওয়া গিয়েছে তার তদন্ত করা হবে। আমাদের নাকের ডগায় দুর্নীতি হবে, তা আমরা সহ্য করব না।”
সদ্য প্রাক্তন সঙ্গীর উদ্দেশে ‘সদর্থক’ বার্তা দিয়েছিলেন আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ। নীতীশের ‘মহাজোটবন্ধনে’ ফেরার সম্ভাবনা উস্কে দিয়ে জানিয়েছিলেন যে, জেডিইউ প্রধানের জন্য ‘সর্বদাই দরজা খোলা’ রয়েছে। শনিবার এই বিষয়ে নীতীশকে প্রশ্ন করা হলে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কে কী বলল, তাতে আমি গুরুত্ব দিতে চাই না। সব কিছু ঠিক ভাবে চলছিল না। তাই আমি তাদের (আরজেডি) ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি।” নীতীশের সংযোজন, “কী ভুল ছিল, তা আমরা খতিয়ে দেখব।” কংগ্রেসকে আলাদা করে নিশানা করে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাহুল গান্ধীর দ্বিতীয় পর্যায়ের ভারত যাত্রা একেবারেই ‘গুরুত্বহীন’।
এটা ঘটনা যে বিজেপি বিরোধী মঞ্চের নাম ‘ইন্ডিয়া’ রাখা নিয়ে আপত্তি ছিল নীতীশ কুমারের। ইন্ডিয়া নামের ইংরেজি দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং পঞ্চম অক্ষরে ‘এনডিএ’-র উজ্জ্বল উপস্থিতিকে ভাল ভাবে নেননি নীতীশ। রাজনৈতিক সূত্র জানিয়েছিল, বেঙ্গালুরুর ওই বৈঠকে কিছুটা অসন্তোষের সঙ্গেই বিহারের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “আপনারা যদি সবাই এতে (ইন্ডিয়া নামে) রাজি থাকেন, তা হলে ঠিকই আছে।
কংগ্রেস সূত্রের মতে, শুধুমাত্র ওই নামের কারণে এত দিন পর তিনি বিজেপি বিরোধী মঞ্চ ছাড়লেন, এটা বাজে অজুহাত ছাড়া কিছু নয়। আসলে বিরোধী জোটে প্রধানমন্ত্রী ‘মুখ’ হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন নীতীশ, সে জন্যই গোড়ায় ঝাঁপিয়েছিলেন। পরে সেই সম্ভাবনা ফিকে হয়ে যাওয়ায় সরে গিয়েছেন।