Lok Sabha Election 2024

উঠে এসে মোদীকে নমস্কার নীতীশের, উপেক্ষা খড়্গেকে

নরসিংহ রাও, কর্পূরী ঠাকুর, চৌধরি চরণ সিংহ, এম এস স্বামীনাথনকে ভারতরত্ন দেওয়ার ঘোষণার সময়ই সংশ্লিষ্ট শিবিরে আলোচনা শুরু হয়েছিল, আসন্ন লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৪ ০৫:৫৭
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে নীতীশ কুমার। ছবি: পিটিআই।

রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতরত্ন প্রদান অনুষ্ঠানকক্ষে তখনও গুছিয়ে বসতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সম্পূর্ণ বিপরীত দিক থেকে নিজের আসন ছেড়ে উঠে এসে তাঁর সামনে নত হয়ে নমস্কার করলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। উঠে দাঁড়ালেন মোদী। পাশে বসা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার সঙ্গেও নমস্কার বিনিময় হল নীতীশের। তাঁদের ঠিক পাশের আসনেই ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। যাঁকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে, পিছন ফিরে নিজের নির্দিষ্ট আসনের দিকে হাঁটা দিলেন নীতীশ। গোটা বিষয়টিতে পুলকিত খড়্গের পাশে বসা বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, হাসতে দেখা গেল তাঁকে। একই সঙ্গে খড়্গের মুখ গম্ভীর!

Advertisement

নরসিংহ রাও, কর্পূরী ঠাকুর, চৌধরি চরণ সিংহ, এম এস স্বামীনাথনকে ভারতরত্ন দেওয়ার ঘোষণার সময়ই সংশ্লিষ্ট শিবিরে আলোচনা শুরু হয়েছিল, আসন্ন লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। আর আজ পুরস্কার প্রদানের দিন উপরোক্ত খণ্ডচিত্রটিও বর্তমান রাজনৈতিক সমীকরণকেই তুলে ধরল।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই নীতীশই গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে মোদী-বিরোধী রাজনৈতিক জোটের সলতে পাকানোর কাজ প্রথম শুরু করেছিলেন। নিজের উদ্যোগে প্রবল উৎসাহে মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশে গিয়ে দেখা করেছিলেন বিরোধী নেতাদের সঙ্গে। জোট বৈঠকেও তাঁর উপস্থিতি ছিল অগ্রগণ্য। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, জোটের জল যত গড়াতে লাগল, ‘ইন্ডিয়া’ নামকরণ হল, নীতীশের উৎসাহ যাচ্ছিল নিভে।। তিনি বুঝে গিয়েছিলেন, তাঁকে এই জোটের নেতৃত্ব দিতে বা ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী মুখ হিসেবে আসরে অবতীর্ণ হতে কংগ্রেস দেবে না। তিনি এই বছরের জানুয়ারিতে ফিরে যান এনডিএ-তে, দেখা করেন মোদীর সঙ্গে। আগে যে কোনও সরকারি অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদীকে দেখলে মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতেন নীতীশ। আর আজ প্রোটোকল ভেঙে রাষ্ট্রপতি আসার আগেই আসন ছেড়ে, মোদীর সামনে যেতে দেখা গেল তাঁকে।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী আজ ভারতরত্ন প্রাপকদের সম্পর্কে আলাদা আলাদা করে এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেছেন। কর্পূরী ঠাকুর সম্পর্কে লিখেছেন, ‘কর্পূরী ঠাকুরজির মতো মহান ব্যক্তিকে ভারতরত্ন প্রদান, সামাজিক ন্যায় ও সাম্যের জন্য নিবেদিত তাঁর জীবনকেই সম্মান প্রদর্শন। পিছড়ে বর্গের অধিকারের জন্য তাঁর নিরন্তর লড়াই, প্রান্তিক মানুষদের উত্তরণ ঘটাতে তাঁর অবদান, দরিদ্রদের জন্য তাঁর কাজ ভারতীয় সমাজে উজ্জ্বল অক্ষরে প্রোথিত থাকবে। তাঁকে ভারতরত্ন দেওয়া সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলা এবং সহমর্মিতার বার্তাই তুলে ধরছে, যা ভারতের নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ’।

রাজনৈতিক শিবিরের মতে, বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলির মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’ যখন সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছে, সেই সময়ে অনগ্রসর শ্রেণির সংরক্ষণের রূপকার, সোশ্যালিস্ট (সমাজবাদী) নেতা কর্পূরীকে ভারতরত্ন প্রদান বিজেপির জন্য ইতিবাচক হতে পারে। প্রসঙ্গত, বিহারের দু’বারের মুখ্যমন্ত্রী কর্পূরী ঠাকুরকে ভারতরত্ন দেওয়ার জন্য সওয়াল করতে দেখা গিয়েছিল নীতীশকেও।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিংহ রাও সম্পর্কে আজ মোদীর পোস্ট, ‘পি ভি নরসিংহ রাওকে ভারতরত্ন দেওয়ার সংবাদে দেশ গর্বিত। দেশের প্রগতির জন্য এবং আধুনিকীরণের জন্য তিনি নিরন্তর পরিশ্রম করে গিয়েছেন। একজন সম্মাননীয় পণ্ডিত এবং চিন্তাবিদ ছিলেন তিনি’।

রাজনৈতিক সূত্রের মতে, এ বারের লোকসভা ভোটে দাক্ষিণাত্যকে পাখির চোখ করে এগোচ্ছেন মোদী। নরসিংহ রাওকে ভারতরত্ন সম্মান দেওয়ার কথা ঘোষণা করে তিনি লোকসভা ভোটের আগে চমক দিয়েছিলেন। নরসিংহ রাওয়ের সঙ্গে গান্ধী পরিবারের সঙ্ঘাতের কথা সুবিদিত। তাঁর নাম ভারতরত্নের জন্য ঘোষণা হওয়ার পর সনিয়া গান্ধীকে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি কি খুশি? সনিয়া বলেছিলেন, ‘কেন হব না? স্বাগত জানাচ্ছি।’

পাশাপাশি কৃষক আন্দোলনের পুরোধা দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধরি চরণ সিংহ ও সবুজ বিপ্লবের রূপকার এম এস স্বামীনাথনকেও ভারতরত্ন সম্মান রাজনৈতিক কৌশল বলেই মনে করা হচ্ছে। আজ মোদীর পোস্ট, ‘কৃষি এবং গ্রামোন্নয়নের ক্ষেত্রে চৌধরি চরণ সিংজির অবদানকে স্বীকৃতি দিতেই তাঁকে ভারতরত্ন দেওয়া হয়েছে’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement