NIA attacked in Bhupatinagar

‘ভোট-মাস্টার’রা কি নজরে, বাড়ছে তরজা

ভূপতিনগরে এনআইএ-র ধরপাকড় নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই রবিবার ফের পুরনো ওই মামলায় তৃণমূলের জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মানব পড়ুয়া-সহ তিন নেতাকে ফের তলব করেছে এনআইএ।

Advertisement

কেশব মান্না

ভূপতিনগর শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৩৩
Share:

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

এনআইএ-র হাতে গ্রেফতার হয়েছেন দু’জন। তালিকায় আছে আরও ৬জনের নাম। দু’বছরের পুরনো ভূপতিনগর বিস্ফোরণ মামলায় এই ৮ তৃণমূল নেতা-কর্মীই পরপর দু’বার জিজ্ঞাসাবাদ এড়িয়েছিলেন। তার পরই শনিবারের অভিযান ও ধুন্ধুমার।

Advertisement

এ সবের পিছনেই কি ভোট-অঙ্ক? এলাকায় চর্চা তেমনই।

ভূপতিনগরে এনআইএ-র ধরপাকড় নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই রবিবার ফের পুরনো ওই মামলায় তৃণমূলের জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মানব পড়ুয়া-সহ তিন নেতাকে ফের তলব করেছে এনআইএ। সোমবার তাঁদের কলকাতায় হাজির হতে বলা হয়েছে। তবে মানব-সহ কেউই এলাকায় নেই।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রে খবর, জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মানব অত্যন্ত দক্ষ সংগঠক। এ ছাড়াও অভিযুক্তের তালিকায় নাম থাকা নবকুমার পণ্ডা, সুবীর মাইতি, অরুণ ওরফে উত্তম মাইতি, মিলন বর্মন এবং শিবপ্রসাদ গায়েনও দলের ‘ভোট-মাস্টার’। যে দু’জন গ্রেফতার হয়েছে, তৃণমূলের সেই অঞ্চল সভাপতি বলাইচরণ মাইতি এবং বুথ সভাপতি মনোব্রত জানাও এলাকায় শাসকদলের দাপুটে নেতা হিসেবেই পরিচিত। পঞ্চায়েত ভোটের সময় তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগও তুলেছিল বিজেপি। ফলে, ভোটের মুখে এই সব নেতারা এলাকাছাড়া হলে তৃণমূলকে তা বেগ দেবে বলেই রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ।

রবিবার পুরুলিয়ার সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও অভিযোগ করেছেন, ‘‘ওরা (বিজেপি) বলছে তৃণমূলের সব বুথ এজেন্টদের গ্রেফতার করো। সব প্রার্থীদের গ্রেফতার করো। একটা চকলেট বোম পড়লেও দেখবে ওই এনআইএ-কে ঢুকিয়ে দেবে।’’ ভগবানপুর- ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি অম্বিকেশ মান্নারও বক্তব্য, ‘‘ভগবানপুরের ওই ৮ জনই হচ্ছেন আমাদের দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক। তাই ভোটের আগে বিজেপি-র মদতে তাঁদের ধরপাকড়ের জন্য তৎপর হয়ে গিয়েছে এনআইএ।"

বিজেপি অভিযোগ মানতে নারাজ। বরং তাদের পাল্টা নালিশ, তৃণমূলের এই ভোট মাস্টাররা বুথ দখল, ছাপ্পা দিয়েই ভোট করিয়েছে বরাবর। তাই এখন ভয় পাচ্ছে। বিজেপির স্থানীয় বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি বলছেন, ‘‘এরা সবাই অপরাধে জড়িত। তাই গ্রেফতার হলে আর বুথ দখলের ক্ষমতা থাকবে না। সে জন্য মিথ্যা অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নেমেছে।’’

কাঁথি লোকসভায় এ বার যুযুধান বিজেপির সৌমেন্দু অধিকারী ও তৃণমূলের উত্তম বারিক। এই লোকসভায় জয়-পরাজয়ে অন্যতম নির্ণায়ক এলাকা হল ভগবানপুর-২ ব্লকের বরজ এবং অর্জুননগর। একদা ‘লাল দুর্গ’ এই দুই অঞ্চল রাজ্যে পালাবদলের পর থেকেই হয়ে উঠেছিল তৃণমূলের ঘাঁটি। তবে ২০২১ এর বিধানসভা ভোটের আগে শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যাওয়ার পরে ছবিটা কিছুটা বদলায়। ক্রমে এখানে শক্তি বাড়াতে শুরু করে গেরুয়া শিবির। গত বিধানসভায় ভগবানপুরে জিতেছেন বিজেপির রবীন্দ্রনাথ মাইতি। অর্জুননগর থেকে প্রায় ৮ হাজার ও বরজ থেকে প্রায় ৭ হাজারের লিড পেয়েছিলেন তিনি। এ বার লোকসভাতেও বিজেপি, তৃণমূল দু’দলই এই এলাকার দিকে তাকিয়ে।

শুভেন্দু তৃণমূলে থাকাকালীন ‘দাদার অনুগামী’ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন মানবরা। শুভেন্দুর সঙ্গে তৃণমূলের টানাপড়েন পর্বে তাঁরা নিষ্ক্রিয়ও হয়ে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য হিসেব বদলেছে। ওই ৮ তৃণমূল নেতাই রয়েছেন পঞ্চায়েতের অথবা দলের কোনও না কোনও পদে। আর মূলত তাঁদের সক্রিয়তাতেই গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে ওই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতই দখল করেছে তৃণমূল। এখন তৃণমূল শিবিরের অভিযোগ, একদা শুভেন্দু ঘনিষ্ঠতার কারণে ভোটে এঁদের ভূমিকা ভালই জানে গেরুয়া শিবির। তাই পরিকল্পনা করেই দু’বছরের পুরনো মামলায় ধরপাকড় চলছে। তারা মনে করিয়ে দিচ্ছে, শুধু ভগবানপুর নয়, গত বিধানসভা ভোট পরবর্তী হিংসার মামলায় উত্তর কাঁথি বিধানসভার ১৩ জন তৃণমূল নেতাকেও জিজ্ঞাসাবাদের নোটিস পাঠিয়েছে সিবিআই। এই যাবতীয় দাবি-অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির বক্তব্য, আইন আইনের পথে চলছে। এর সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement