মুকুল রায়ের (ডান দিকে) হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিচ্ছেন ব্যারাকপুরের বিজেপির লোকসভা প্রার্থী অর্জুন সিংহ (বাঁ দিকে)। — নিজস্ব চিত্র।
বছর কয়েক আগেও ‘মধুর’ ছিল না দু’জনের সম্পর্ক। তবু ব্যারাকপুরে বিজেপির লোকসভা প্রার্থী হওয়ার পর মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা করে তাঁর আশীর্বাদ নিতে গেলেন অর্জুন সিংহ। আবার মুকুলও অর্জুনকে দেখে আবেগবিহ্বল হয়ে বললেন, ‘‘আরে অর্জুন এসে গিয়েছিস!’’
এককালে ‘বাংলার রাজনীতির চাণক্য’ বলা হত মুকুলকে। তবে সেই মুকুল এখন বয়সজনিত নানা অসুস্থতায় প্রায় শয্যাশায়ী। কাঁচরাপাড়ায় পৈতৃক বাড়ি মুকুলের। নাম ‘যুগল ভবন’। কৃষ্ণনগর উত্তরের অসুস্থ বিধায়ক এখন সেখানেই থাকেন। কাঁচরাপাড়া ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের অধীন। যে লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থী এখন অর্জুন। শুক্রবার প্রচারে বেরিয়ে অর্জুন প্রথমে গেলেন সেই ‘যুগল ভবন’-এই।
বছরখানেক আগে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরা অর্জুন সম্প্রতি আবার তৃণমূল ছেড়ে যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। অন্য দিকে, মুকুল খাতায়কলমে বিজেপি বিধায়ক হলেও তিনি এখন কোন দলে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পর মুকুল স-পুত্র দল বদলে তৃণমূলে ফিরলেও পরবর্তী কালে নিজেকে বিজেপির সদস্য বলে দাবি করেন।
সম্প্রতি অবশ্য ব্যারাকপুরের তৃণমূলের লোকসভা প্রার্থী পার্থ ভৌমিকও দেখা করতে এসেছিলেন মুকুলের সঙ্গে। শুক্রবার এলেন অর্জুন। মুকুলের সঙ্গে দেখা করে বাইরে এসে অর্জুন বলেন, ‘‘আজ কাঁচরাপাড়ার ঘটক রোডে বর্ষীয়ান নেতা মুকুল রায়ের বাড়িতে গিয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে ওঁর আশীর্বাদ নিলাম। ওঁর সঙ্গে আমার বহু পুরনো সম্পর্ক। উনি ‘বিজয়ী ভব’ বলে আমাকে উত্তরীয় পরিয়ে দিলেন। আমি ওঁর সুস্থতা কামনা করলাম।’’
তবে একই সঙ্গে অর্জুন জানিয়েছেন, মুকুলকে দেখে তাঁর অত্যন্ত অসুস্থ মনে হয়নি। বরং তাঁর দাবি, মুকুল তাঁকে দেখেই চিনতে পেরেছেন। অর্জুনের কথায়, ‘‘আমাকে দেখে বললেন, ‘আরে অর্জুন এসেছিস!’ তার পরে আমাকে ভোটে জেতার জন্য শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন তিনি।’’ অর্জুনের দাবি, তাঁকে দেখে মুকুল বলেছেন, ‘‘এ বারও ভোটে তুই-ই জিতবি।’’
পাঁচ বছর আগেও অবশ্য এই কথোপকথনের কথা ভাবাই যেত না। ২০১৯ সালে মুকুল যখন বিজেপিতে যোগ দিয়ে দিয়েছেন, তখন অর্জুনও ব্যারাকপুরের লোকসভার টিকিট না পেয়ে যোগ দেন বিজেপিতে। রাজনৈতিক মহলের খবর ছিল, সেই সময় মুকুলের যোগাযোগেই বিজেপিতে ‘এন্ট্রি’ পেয়েছিলেন অর্জুন। কিন্তু তার পরে দু’জনের জেলাগত রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তুঙ্গে পৌঁছয়।
পরে অবশ্য সেই সমীকরণ বদলায়। ২০২২ সালে অর্জুন তৃণমূলে ফেরার পর এমনও শোনা গিয়েছিল যে মুকুলের পরামর্শেই তৃণমূলে ফিরেছেন তিনি। সম্প্রতি জেলা রাজনীতিতেও মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু সমর্থন করেছিলেন অর্জুনকে। তাঁকে ‘ভাল সংগঠক’-এর আখ্যাও দিয়েছিলেন শুভ্রাংশু।
এর মধ্যেই অর্জুন আচমকা তৃণমূল ছেড়ে আবার যোগ দেন বিজেপিতে। সম্প্রতি ব্যারাকপুরের লোকসভা ভোটের টিকিটও পান। তবে প্রচারে প্রথম দিন থেকেই সৌজন্যের রাজনীতির নিদর্শন রাখার চেষ্টা করে চলেছেন অর্জুন। সম্প্রতি ব্যারাকপুরের বাম নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ তড়িৎ তোপদারের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন অর্জুন। শুক্রবার দেখা করলেন মুকুলের সঙ্গে।