সিউড়িতে বিজেপির প্রচারে অনুব্রত মণ্ডলকে কটাক্ষ। —নিজস্ব চিত্র।
‘তাঁরে ভোলানো গেল না কিছুতেই...’
তিনি না থেকেও আছেন। এক দিকে, তৃণমূলের ভোট প্রচারের পোস্টার, ফ্লেক্স বা ব্যানারে ফুটে উঠছে গরু পাচার মামলায় তিহাড়ে বন্দি অনুব্রত মণ্ডলের ছবি। দলীয় কার্যালয়ের সামনে লাগানো হচ্ছে বিরাট কাটআউট। অন্য দিকে, অনুব্রতের ‘দুর্নীতিকে’ প্রচারের হাতিয়ার করেছে বিজেপি। বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী দেবাশিস ধরের প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূলের শতাব্দী রায় হলেও, বিজেপির দেওয়াল লিখন দেখে মনে হচ্ছে লড়াই হচ্ছে অনুব্রতের সঙ্গেও। কোথাও কার্টুন অনুব্রতকে কটাক্ষ, কোথাও আবার দুর্নীতির দায়ে অনুব্রতের মতোই জেলার আরও কয়েক জন নেতার জেলযাত্রার ভবিষ্যৎবাণী করেছে বিজেপি৷
বিজেপি যে বীরভূমে দুর্নীতিকে সামনে রেখেই সবচেয়ে বেশি সরব হবে, তা প্রাক্তন আইপিএস আধিকারিককে প্রার্থী করার মধ্য দিয়েই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। দেবাশিসকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা ধরা পড়েছে বিজেপির দেওয়াল লিখনে। সিউড়ির ১ নম্বর ওয়ার্ডের একটি দেওয়ালে লেখা হয়েছে, ‘বীরভূমের সিংহম, প্রাক্তন আইপিএস অফিসার দেবাশিস ধরকে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে জয়ী করুন।” অন্য একটি দেওয়াল লিখনে দেবাশিসকে ‘দাবাং অফিসার’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে৷ এই দুটি সিনেমাতেই পুলিশের উর্দি পরে নায়ককে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে দেখা গিয়েছে।
বীরভূমের যে কোনও ভোটের আগে কিছু বিশেষ ‘দাওয়াই’ দিতেন অনুব্রত মণ্ডল। কখনও তা ছিল ‘গুড় বাতাসা’, কখনও ‘নকুল দানা’, কখনও আবার ‘চড়াম চড়াম ঢাক বাজানো’। এ বার তৃণমূল তেমন কোনও দাওয়াইয়ের কথা না বললেও জেলার তৃণমূল নেতারা অনুব্রতের ‘পদ্ধতিতেই’ যে ভোট করবেন তা স্পষ্ট।
যা নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। শহরের একাধিক দেওয়াল লিখনে দেখা যাচ্ছে, ‘কোথায় গেল নকুল দানা, কোথায় গেল ঢাক? টিএমসির সবাই মিলে তিহার জেলেই থাক।’ অথবা, “দেখ খুলে তোর দুই নয়ন, তিহার জেলে কম্বল পেতে শুয়ে আছে উন্নয়ন’। সিউড়ির বিধায়ক তথা জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, “অনুব্রতকে নিয়ে বিজেপির ভয় ওদের দেওয়ার লিখনেই ফুটে উঠছে। অনুব্রত নামটাই ওদের চিন্তা হওয়ার জন্য যথেষ্ট। আসলে ওরা জানে এক জন অনুব্রত তিহাড়ে থাকলেও তাঁর তৈরি সংগঠন এখনও জেলাতেই আছে। সেখানে হাজার হাজার অনুব্রত বিজেপিকে হারানোর জন্য তৈরি হয়ে আছে। ওরা নানারকম ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু মানুষ ওদের উত্তর দিয়ে দেবে।”
বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি বাবন দাস বলেন, “দেওয়াল লিখনে কর্মীরা মজার ছলে নিজেদের অভিব্যক্তিকে ফুটিয়ে তোলেন। তেমন ভাবেই তিহাড়ে বন্দি অনুব্রতকে নিয়েও কর্মীরা মনের কথা লিখেছেন। এমনিতে আমরা তৃণমূলকে বিশেষ পাত্তা দিচ্ছি না। দেশের সরকার গড়ার ভোটে একটা আঞ্চলিক দলকে নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাতে আমরা রাজি নই। এক জন অনুব্রত শুধু জেলে গিয়েছেন। ভোটের এখনও মাসখানেক বাকি। অনেক কিছু হওয়ার বাকি।”