—প্রতীকী ছবি।
বাড়িতে বসে ভোট দেওয়ার সুবিধা থেকেই ভুল বোঝাবুঝি। শ্রীরামপুর কেন্দ্রের ভোটার অটিস্টিক যুবক তনুময় দাশগুপ্তের তাই বুথে গিয়েও ভোটটা দেওয়া হল না।
৩৮ বছরের তনুময়ের বাবা তরুণ দাশগুপ্ত রবিবার আক্ষেপ করছিলেন, “আমার ছেলে খুব উৎসাহ নিয়েই বরাবর নিজের ভোটটা দিতে যায়। এ বারও ওকে নিয়ে ভদ্রকালীতে আমাদের বুথে গিয়েছিলাম। বাড়িতে ওর ভোটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল বলে ওর ভোটটাই ওঁরা দিতে দিলেন না! ভোট দিতে গিয়েও দিতে না-পেরে তনুময় কষ্ট পেয়েছে।”
কেন এই বিভ্রাট? তরুণের ব্যাখ্যা, “নির্বাচন কমিশন নিযুক্ত বুথ স্তরের এক কর্মী ভোটের কয়েক দিন আগে আমায় ছেলের প্রতিবন্ধকতার শংসাপত্রটি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে বলেন। আমিও পাঠিয়ে দিই। কিন্তু উনি একবারও বলেননি ছেলের বাড়িতে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে ওঁরা এমনটা করছেন। কমিশনের দফতর থেকে কোনও ‘মেসেজ’ও আসেনি।” কমিশনের লোকজন বাড়িতে ভোট করাতে আসার দিন তরুণেরা সপরিবার কেউ ছিলেনই না। তনুময়ের বাবা মনে করছেন, বুথে গিয়ে এই বিড়ম্বনার জন্য কমিশনের আধিকারিকেরাই দায়ী।
২০১৯-এর লোকসভা ভোট থেকেই মানসিক বা বিকাশজনিত প্রতিবন্ধকতা-যুক্ত ব্যক্তিদের কাছে টেনে ভোট ব্যবস্থার শরিক করতে চাইছে নির্বাচন কমিশন। ৪০ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা থাকলেই কমিশনের দায়িত্ব, বাড়িতে এসে তাঁদের ভোটের ব্যবস্থা করা। ভোটের বুথগুলিও সবার জন্য সুগম, স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ করার কথা বার বার বলে থাকে কমিশন। এ বার দু’তলা বুথ রাখা হয়নি। কিন্তু বহু ভোটকেন্দ্রেই কয়েক ধাপ সিঁড়ি ভাঙতে হয়েছে। বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্রেই র্যাম্প, ভর দেওয়ার রেলিং, হুইলচেয়ারে বন্দোবস্তেও বিস্তর ফাঁক রয়েছে। মানসিক এবং বিকাশজনিত প্রতিবন্ধকতা-যুক্তদের অভিভাবকদের একটি মঞ্চ ‘পরিবার বেঙ্গল’-এর তরফে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার অভিজ্ঞতা নথিবদ্ধ করে একটি রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে। তাতেই উত্তরপাড়ার তনুময় বা আসানসোলের আর এক মানসিক প্রতিবন্ধী কন্যা ৩২ বছরের অর্পিতা রায়ের অভিজ্ঞতা উঠে এসেছে।
অর্পিতার মা নেই। ৭০ ছুঁইছুঁই বাবা অশোককুমার রায় অভিভাবক। অশোকের কথায়, ‘‘আসানসোলের উমারানি গড়াই মহিলা কল্যাণ বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে আমি প্রিসাইডিং অফিসারকে মেয়ের প্রতিবন্ধকতার শংসাপত্র দেখিয়ে বলেছিলাম, আমার মেয়েকে ভোট দিতে নিয়ে আসব। এবং ওঁর সহায়তার জন্য আমি ভোট দেওয়ার সময়ে ওর পাশে থাকব। ওই আধিকারিক অনুমতি দেননি। উল্টে বলেন, এতটা প্রতিবন্ধকতা থাকলে ভোট দেওয়ারই কী দরকার!” অশোকের প্রশ্ন, “তা হলে মেয়ের ভোটার কার্ড থাকার কী মানে?”
পরিবার বেঙ্গল মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক চৈতালি গামীর কন্যা শ্রেয়ার ‘ডাউন সিনড্রোম’ রয়েছে। শ্রেয়া নিজেই বুথে ভোট দিয়েছেন। চৈতালি বলছেন, “৪০ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা থাকলেই সহায়ক নিয়ে ভোট দেওয়া যায়। তা ছাড়া, কে ভোট দেওয়ার যোগ্য, অযোগ্য তা মানসিক বা বিকাশজনিত প্রতিবন্ধকতা দিয়ে বিচার করা যায় না। অটিজ়ম বা ডাউন সিনড্রোম আছে এমন অনেকেই রীতিমতো রাজনীতি সচেতন, জোরালো মতামতের অধিকারী। সাংবিধানিক অধিকারেই ওঁরা ভোটদাতা।” শারীরিক প্রতিবন্ধী, সমাজকর্মী হাড়োয়ার মহম্মদ আবুল কালাম আজাদ উত্তর ২৪ পরগনার ভোটে হুইলচেয়ারের অভাব নিয়ে সরব হয়েছেন। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের একটি সূত্র মানছে, মানসিক বা বিকাশজনিত প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সচেতনতায় ভোটকর্মীদের খামতি রয়েছে। বুথগুলির র্যাম্প, হুইল চেয়ারের বন্দোবস্তও আরও ভাল হতে পারত।