অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সায়নী ঘোষ। —ফেসবুক।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ভাঙড় বিধানসভা থেকে ১ লক্ষ ১১ হাজার ভোটের ‘লিড’ পেয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী তথা অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী। কিন্তু সেখানেই ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে আইএসএফের নওশাদ সিদ্দিকির কাছে ২৬ হাজার ভোটে হেরেছিল তৃণমূল। শুক্রবার যাদবপুরের তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষের সমর্থনে বিশাল জনসভা থেকে এই লোকসভায় ভাঙড় থেকে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিলেন তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার ভোজেরহাটের সভায় অভিষেক বলেন, ‘‘২০১৯ সালে ভাঙড় ১ লক্ষ ১১ হাজার ভোটের লিড দিয়েছিল। এ বার সেটা দেড় লক্ষ করতে হবে!’’ তাঁর কথায়, ‘‘২০২১ সালে ভুল প্রচারে, ধর্মীয় উস্কানিতে মানুষ প্রভাবিত হয়েছিলেন। এ বার তা হবে না।’’ প্রসঙ্গত, তৃণমূলের অন্দরেও অনেকে মনে করছেন, ভাঙড়ে বড় ব্যবধান পাওয়া তৃণমূলের কাছে চ্যালেঞ্জ। ভাঙড়ে সায়নী যত বেশি লিড পাবেন, তৃণমূল তত বেশি করে বার্তা দিতে পারবে যে, ২০২১ সালের ভোটের ফলাফল ছিল ‘অঘটন’। উল্লেখ্য, যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে নওশাদের আইএসএফ প্রার্থী দিয়েছে। উল্লেখ্য, অভিষেক এক বারও তাঁর বক্তৃতায় ভাঙড়ের জেলবন্দি তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের নাম নেননি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়কার একটি মামলায় কয়েক মাস আগে আরাবুলকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশ। তবে ভাঙড়বাসীকে অভিষেক স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারই ভাঙড়কে কলকাতা পুলিশের অধীনে এনেছে।
২০২১ সালে সংযুক্ত মোর্চার একমাত্র প্রার্থী হিসেবে ভাঙড়ে জিতেছিলেন নওশাদ। সভায় নাম না করে বিধায়ক নওশাদের তীব্র সমালোচনা করেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘এখানকার বিধায়কের নাম আমি মুখে আনব না। উনি বিজেপির ‘বি টিম’ হয়ে কাজ করছেন। উনি শুভেন্দু অধিকারীর প্রশংসা করেন। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, দিলীপ ঘোষদের এক দিনও আক্রমণ করেননি। আসলে ওঁর টিকি দিল্লিতে বাঁধা রয়েছে।’’
যাদবপুরের প্রার্থী তথা সায়নীর প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, ‘‘সায়নী এমন এক জন মেয়ে, যাকে জেতালে আগামী পাঁচ বছর মাথা নিচু করে আপনাদের কাজ করবে। আর সায়নী সংসদে গেলে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে.....ওরা সরকারে আসবে না, যদি আসে, তা হলে সায়নী ল্যাজেগোবরে করে দেবে।’’ এর পরেই অভিষেক বলেন, ‘‘ওদের জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনাই যথেষ্ট। জয়নগরে প্রতিমা মণ্ডল, মথুরাপুরে বাপি হালদার, ডায়মন্ড হারবারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, যাদবপুরে সায়নী ঘোষ— চার জনই যথেষ্ট।’’
ভাঙড়ের সভা থেকে মমতা-যাদবপুর সম্পর্কের কথাও উল্লেখ করেন অভিষেক। সিপিএমের সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে ১৯৮৪ সালে যাদবপুর থেকে প্রথম সাংসদ হয়েছিলেন মমতা। সেই প্রসঙ্গ টেনে অভিষেক বলেন, ‘‘তৃণমূলের জন্ম ১৯৯৮ সালে। কিন্তু তারও ১৪ বছর আগে বাংলার অগ্নিকন্যার জন্ম দিয়েছিল এই যাদবপুর।’’
শুক্রবার ভজেরহাটে অভিষেকের সভায় ভিড় হয়েছিল চোখে পড়ার মতো। জমায়েত দেখে মঞ্চ থেকেই মোদীর উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন তৃণমূলের সেনাপতি। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর বয়সের প্রতি সম্মান, মর্যাদা জানিয়ে বলছি, সপ্তম দফা ভোটের আগে তো দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আসবেন। ক্ষমতা থাকলে এই ভজেরহাটে সভা করুন।’’