অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর একটি ভিডিয়ো ঘিরে মে দিবসের সকাল থেকেই তপ্ত হচ্ছিল বঙ্গ রাজনীতি। বুধবার দুপুরে মালদহের সামসির সভা থেকে অধীরের সেই বক্তব্য নিয়ে আক্রমণের সুর আরও চড়া করলেন তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের অভিযোগ, মালদহ এবং মুর্শিদাবাদে বিজেপির হাত শক্তিশালী করছেন স্বয়ং অধীর।
মালদহ উত্তর লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী তথা অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে সভা করতে গিয়ে অধীরের বক্তৃতার অডিয়ো তিন বার শোনান অভিষেক। তার পর বলেন, ‘‘এই অধীর চৌধুরীর জন্য বাংলায় বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ বাস্তবায়িত হতে পারেনি। এই অধীর চৌধুরী মালদহ এবং মুর্শিদাবাদে বিজেপির হাত শক্ত করছেন।’’ এর পর অভিষেক বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত রেজিনগরের শক্তিপুরে হওয়া উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সভার উল্লেখ করেন। অভিষেক বলেন, ‘‘গত কাল (মঙ্গলবার) বহরমপুরে সভা করতে গিয়েছিলেন যোগী আদিত্যনাথ। কিন্তু অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে একটিও শব্দ খরচ করেননি। কারণ, অধীর এবং যোগী চোরে-চোরে মাসতুতো ভাই। কেউ কারও বিরুদ্ধে বলবেন না।’’ অভিষেক এ-ও বলেন, ‘‘দিল্লিতে সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে বসিয়ে বিজেপি হটানোর কথা বলছেন, তখন অধীর চৌধুরী বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করছেন। বুঝুন, কারা বিজেপির হাত শক্ত করছে।’’
সোমবার অধীরের কেন্দ্র বহরমপুরে সভা করতে এসেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। তাঁর মুখেও অধীরের কোনও সমালোচনা শোনা যায়নি। বুধবার বহরমপুরের সভা থেকে সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরশু বিজেপির সভাপতি নড্ডা এলেন এখানে। অধীরের নামও মুখে আনলেন না। আসলে বিজেপির সবচেয়ে বড় সমর্থক অধীর। ভেবেও আমার লজ্জা হয়। এ বার আর ওঁকে ভোট দেবেন না।’’
সমাজমাধ্যমে যে ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে, সেখানে অধীরকে বলতে শোনা যাচ্ছে, তৃণমূলের চেয়ে বিজেপিকে ভোট দেওয়াও ভাল। আট সেকেন্ডের সেই ভিডিয়োর সত্যতা অবশ্য যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। মঙ্গলবার জঙ্গিপুরের কংগ্রেস প্রার্থী মোর্তাজা হোসেনের সমর্থনে সভা করতে গিয়েছিলেন অধীর। সেই সভায় ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের বাম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমও। তৃণমূল যে ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে দিয়েছে তাতে অধীরকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘তৃণমূলকে ভোট দেওয়া মানে, তার থেকে ভাল বিজেপিকে ভোট দিয়ে জেতানো।’’ এর পর মাইক্রো সেকেন্ডের ব্যবধানে অধীরকে ফের বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘তৃণমূলকে ভোট দেওয়া মানে, তার থেকে অনেক ভাল বিজেপিকে ভোট দিয়ে দেওয়া।’’ সেই ক্লিপ তৃণমূলের একাধিক সাংসদ, নেতা-নেত্রী এক্সে পোস্ট করে অধীর এবং বিজেপির ঘনিষ্ঠতা ও বোঝাপড়া নিয়ে সমালোচনা করেছেন। এমনকি, জুড়ে দিয়েছেন কংগ্রেসের জোটসঙ্গী সিপিএমকেও। মালদহের সভা থেকে অভিষেকও সেই একই লাইনে আরও তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন অধীরকে।
কংগ্রেস যদিও ভিডিয়োটিকে বিকৃত বলে দাবি করেছে। প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় বলেন, ‘‘ওই ভিডিয়ো বিকৃত করে তৃণমূল বাজারে ছেড়েছে। আসলে তৃণমূল ভয় পেয়েছে। তৃণমূল মুর্শিদাবাদ জেলায় তিনটি আসনেই হারবে বলে ভয় পেয়েছে। তাই এ সব করছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির পরোক্ষ জোটের কথা সবাই জানে। নরেন্দ্র মোদী যেমন কংগ্রেসমুক্ত ভারত করতে চান, তেমন তৃণমূলও কংগ্রেসমুক্ত বাংলা করতে চায়। তাই লক্ষ্য অধীর চৌধুরী।’’
বুধবারের সভা থেকে অভিষেক এ-ও বলেন, ‘‘১৯৯৮ সালে তৃণমূল তৈরি হয়েছিল। তার পর থেকে কখনও মালদহে লোকসভা আসন জেতেনি তৃণমূল। ২০২১ সালে মালদহের আটটি বিধানসভায় আপনারা আমাদের জিতিয়েছিলেন। এ বার দু’টি লোকসভাতেই আমাদের জেতান।’’ ভোট কাটাকাটিরও হিসাব দেন তৃণমূলের সেনাপতি। তাঁর কথায়, ‘‘২০১৯ সালের ভোটে মালদহ উত্তরে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন মৌসম বেনজির নুর। কংগ্রেস তিন লক্ষ ভোট কেটেছিল। আর মৌসম বিজেপির খগেন মুর্মুর কাছে ৮০ হাজার ভোটে পরাস্ত হয়েছিলেন। এ বার কংগ্রেসের প্ররোচনায় আর পা দেবেন না।’’ অভিষেকের এ-ও বক্তব্য, বাংলায় তৃণমূলের বেশি আসন জেতার উপর দিল্লিতে ‘ইন্ডিয়া’র সরকার গঠনের প্রক্রিয়া নির্ভর করছে।