Lok Sabha Election 2024

বন্ধ দরজা, পরিবারের দাবি নোটিস মেলেনি

নবকুমারের বাড়ি পটাশপুরের টনিয়াভিলায়। রাস্তার ঠিক উল্টো দিকেই নাড়ুয়াবিলা গ্রাম। সেখানেই ২০২২ সালে ২ ডিসেম্বর স্থানীয় তৃণমূলের বুথ সভাপতি রাজকুমার মান্নার বাড়িতে বিস্ফোরণে তিন জনের মৃত্যু হয়েছিল।

Advertisement

কেশব মান্না

ভূপতিনগর শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৫৪
Share:

মনোব্রত জানার বাড়িতে পুলিশ। ছবি: শুভেন্দু কামিলা।

বিস্ফোরণ কাণ্ডের তদন্তে নোটিস এসেছিল আট তৃণমূল নেতার কাছে। একাধিকবার সেই নোটিসে সাড়া না দেওয়ার পরে শনিবার এলাকায় হাজির হয়েছিল এনআইএ। এর পরে দুই তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতারি এবং এনআইএ-এর উপরে হামলা ঘিরে আপাতত রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়। এমন আবহে এনআইএ-র তৃতীয় তলব এড়িয়ে গিয়েছেন তিন শাসক নেতা। বারবার তলব এড়াচ্ছেন কেন এই নেতারা, সেই প্রশ্নের উত্তর আপাতত সামনে নেই। কারণ, তিন নেতারই ফোন রয়েছে বন্ধ। আর দলের কাজে ওঁরা ব্যাস্ত জানিয়ে কার্যত প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বও।

Advertisement

তবে কী বলছে ওই তিন তৃণমূল নেতার পরিবার। এলাকাবাসীরই তাঁদের ধারণা কি তাঁদের সম্পর্কে? সে সম্পর্কে খোঁজ নিতে সোমবার যাওয়া হয়েছিল ভূপতিনগর এবং পটাশপুরে। কিন্তু এলাকাবাসীর মুখে কুলুপ। একে একে ওই তিন নেতা— পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মানব পড়ুয়া, নবকুমার পন্ডা ও সুবীর মাইতির বাড়ির খোঁজ করা হয়। কারও পরিবারের দাবি, নোটিস পায়নি। আরও কেউ বলছে, ফাঁসানো হচ্ছে। বাড়িতে দেখে মেলেনি নেতাদেরও।

নবকুমারের বাড়ি পটাশপুরের টনিয়াভিলায়। রাস্তার ঠিক উল্টো দিকেই নাড়ুয়াবিলা গ্রাম। সেখানেই ২০২২ সালে ২ ডিসেম্বর স্থানীয় তৃণমূলের বুথ সভাপতি রাজকুমার মান্নার বাড়িতে বিস্ফোরণে তিন জনের মৃত্যু হয়েছিল। এদিন দুপুরে নবকুমারের পাড়া ছিল নীরব। সাংবাদিক পরিচয় পেতেই সকলে চুপ। নবকুমারের একতলা বাড়ি ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। পরে নবকুমারের স্ত্রী বেরিয়ে বলে, ‘‘চাকরি সূত্রে বাইরে থাকি। অসুস্থতার কারণে বাড়ি ফিরেছি। শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী স্বামীকে ফাঁসানো হচ্ছে।’’ ওই মহিলার দাবি, এনআইএ’র নোটিস বাড়িতে কেউ দিয়ে যাননি। তাহলে নবকুমার কোথায়? মহিলার জবাব, ‘‘দলের কাজে বাড়ির বাইরে গিয়েছেন।’’

Advertisement

নবকুমারের বাড়ি থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে নিজ নাড়ুয়া গ্রাম। সেখানে মানব পড়ুয়ার বাড়ি। তিন তলা পেল্লাই বাড়ির বাইরে রয়েছে দু’টি সিসি ক্যামেরা। উঠোনে স্থানীয় কয়েকজন যুবক ক্যাটারিংয়ের সরঞ্জাম গোছগাছ করছিলেন। মানবের বাড়ির পরিচারিকা পরিচয় দিয়ে এক মহিলা জানান, দাদা-বৌদি কেউই বাড়িতে নেই। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, মানবের বাড়িতে গত ৪ এপ্রিল কালীপুজো ছিল। ৫ এপ্রিল দুপুরে লোক খাওয়ানো হয়। আর তার ঠিক পরের দিন ভোরে ওই গ্রামে এসেছিল এনআইএ’র প্রতিনিধি দল। মানব এবং নবকুমার ছাড়াও নোটিস পাঠানো হয়েছিল তৃণমূল নেতা সুবীর মাইতিকে। তবে তাঁর বাড়ির ঠিকানা এলাকার কেউই বলতে চাননি।

আগে দু’দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করতেছে ডেকে পাঠানো হয়েছিল তৃণমূল পরিচালিত অর্জুননগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অরুণ মাইতিকে। ধাইপুকুর গ্রামের বাড়িতে এদিন অরুণ ছিলেন না। স্ত্রী মণিমালা মাইতি বলেন, ‘‘১০-১২ দিন বাড়িতে ফেরেননি। কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই।’’ আগে তলব পাওয়া অন্য নেতা শিবপ্রসাদ গায়েন, মিলন বর্মনের বাড়ির সন্ধানে যখনই এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলতে যাওয়া হয়েছে, সকলেই এড়িয়ে গিয়েছেন। এলাকায় যে এখনও কোথাও চাপা আতঙ্ক রয়েছে তা কার্যত স্পষ্ট।

কেন তলব এড়াচ্ছেন দলের নেতারা? তৃণমূলের জেলা (কাঁথি) সভাপতি পীযূষকান্তি পন্ডা বলছেন, ‘‘লোকসভা ভোটের জন্য ব্যস্ততা রয়েছে। তাই দলের নেতা-কর্মীরা যেতে পারবেন না বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement