হাওড়ায় সোনালির ‘দিদিগিরি’, ত্রস্ত পরিবার পুলিশের দ্বারস্থ

আবু আয়েশ মণ্ডলের ‘দাদাগিরি’র পরে এ বার সোনালি গুহর ‘দিদিগিরি’! মাঝরাতে বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার তৃণমূল বিধায়ক সোনালির সেই ‘দিদিগিরি’ দেখল হাওড়া। অভিযোগ, বুধবার রাত দেড়টার সময় তিনি পুলিশ-সহ লালবাতি লাগানো গাড়ি নিয়ে কলেজ স্ট্রিটের বাড়ি থেকে সোজা হাজির হন হাওড়ায়। গোলাবাড়ি এলাকার সালকিয়া স্কুল রোডের একটি ফ্ল্যাটবাড়িতে কেন সারারাত লিফট চলবে না, এই নিয়ে ওই ফ্ল্যাটের এক আবাসিকের হয়ে অন্য এক আবাসিক চিকিৎসক পরিবারকে ডেকে নিয়ে রীতিমতো হুমকি দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ২১:০৯
Share:

আবু আয়েশ মণ্ডলের ‘দাদাগিরি’র পরে এ বার সোনালি গুহর ‘দিদিগিরি’!

Advertisement

মাঝরাতে বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার তৃণমূল বিধায়ক সোনালির সেই ‘দিদিগিরি’ দেখল হাওড়া। অভিযোগ, বুধবার রাত দেড়টার সময় তিনি পুলিশ-সহ লালবাতি লাগানো গাড়ি নিয়ে কলেজ স্ট্রিটের বাড়ি থেকে সোজা হাজির হন হাওড়ায়। গোলাবাড়ি এলাকার সালকিয়া স্কুল রোডের একটি ফ্ল্যাটবাড়িতে কেন সারারাত লিফট চলবে না, এই নিয়ে ওই ফ্ল্যাটের এক আবাসিকের হয়ে অন্য এক আবাসিক চিকিৎসক পরিবারকে ডেকে নিয়ে রীতিমতো হুমকি দেন। তাঁর ভাষায়: “আই অ্যাম দ্য ম্যান অফ সিএম। আই অ্যাম দ্য গরমেন্ট। ডোন্ট ফরগেট ইট। তাই ঠিক ভাবে না চললে ফ্ল্যাটে তালা লাগিয়ে দেব।” এই হুমকির পরেই বৃহস্পতিবার আতঙ্কিত ওই চিকিৎসক পরিবার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে।

যদিও ওই ঘটনা নিয়ে অনুতপ্ত নন সোনালিদেবী। বৃহস্পতিবার মধ্য কলকাতার রাধানাথ মল্লিক লেনে তাঁর বাড়িতে বসে সোনালি বলেন, “আমার দল, মমতাদি (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) আমাকে শিখিয়েছেন, মানুষের বিপদে তার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। তাকে সাহায্য করতে হবে। আমি গত রাতে আমার নেত্রীর নির্দেশ পালন করেছি। এক জন মা হিসেবে, এক জন মহিলা হিসেবে আর এক জন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে রক্ষা করতে আমি হাওড়ায় গিয়েছিলাম।”

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সালকিয়া স্কুল রোডের ওই চার তলা আবাসনের উপরের তলায় সপরিবার বাস করেন নগেন্দ্র রাই নামে এক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। তাঁর একমাত্র ছেলে নীতেশ রায় এবং পুত্রবধূ প্রিয়ঞ্জনাও ওই ফ্ল্যাটেরই বাসিন্দা। নীতেশবাবুও পেশায় চিকিৎসক। এই চিকিৎসক পরিবারের নীচের তলার ফ্ল্যাটে সপরিবার থাকেন বেদপ্রকাশ তিওয়ারি নামে এক যুবক। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দু’টি পরিবারের মধ্যে গত কয়েক বছর ধরেই নানা বিষয়ে গোলমাল চলছিল। গত বুধবার রাতে আবাসনের লিফট বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন করে গোলমালের সূত্রপাত হয়।

নগেন্দ্রবাবুর পরিবারের অভিযোগ, আবাসনের নিয়ম অনুযায়ী লিফট চলার সময় সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা। কিন্তু ওই দিন রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ লিফটটি যান্ত্রিক কারণে খারাপ হয়ে যায়। তাই কেউই আর লিফটি ব্যবহার করতে পারছিলেন না। কিন্তু রাত সাড়ে ১২টার সময় হঠাৎ বেদপ্রকাশ ১৫-২০ জন লোক নিয়ে চার তলায় উঠে আসেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন বেদপ্রকাশের পরিবারের লোকজনও। তাঁদের অভিযোগ, নীচে এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা আছেন জেনেও ওই চিকিৎসক পরিবার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে লিফট বন্ধ করে রেখেছেন। নগেন্দ্রবাবুর অভিযোগ, বেদপ্রকাশের পরিবারের লোকজন তাঁদের বেধড়ক মারধর শুরু করেন। এমনকী, পায়ের জুতো খুলে তাঁদের মারধর করা হয়। গোটা ঘটনাটি ওই চিকিৎসক পরিবারের বসানো বিভিন্ন সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে।

ওই চিকিৎসক পরিবারের অভিযোগ, এই ঘটনার পর তাঁরা যখন রাত দেড়টা নাগাদ গোলাবাড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করতে যাচ্ছেন তখন আবাসনের নীচে লালবাতি লাগানো আলো ও পুলিশ নিয়ে হাজির হন বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার সোনালিদেবী। নগেন্দ্রবাবুর অভিযোগ, এর পর প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে আবাসনের গেটের সামনে দাঁড়িয়েই চলে সোনালিদেবীর ‘গুণ্ডামি’।

নগেন্দ্রবাবু বলেন, “ওই রাতে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমাকে নানা ভাবে অপমানিত করা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে সিসি কামেরা লাগিয়েছি বলে সোনালিদেবী সমস্ত ক্যামেরা খুলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এমনকী, আমাদের ফ্ল্যাটে তালা ঝুলিয়ে দেবেন বলেছেন।”

কিন্তু প্রশ্ন হল, কী কারণে বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার ছুটে এলেন অত রাতে? তাঁর সঙ্গে বেদপ্রকাশের সম্পর্কই বা কী?

এলাকায় তৃণমূলকর্মী বলে পরিচিত বেদপ্রকাশ বলেন, “আমি ওনার ‘রাখি ভাই।’ আপনারা শুধু ডেপুটি স্পিকার হিসেবে সোনালিদি এসেছেন কেন ভাবছেন? ভাইয়ের কাছে কি দিদি আসতে পারেন না?” সোনালিও বলছেন, বেদপ্রকাশ তাঁদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ। প্রতি বছর রাখিপূর্ণিমার দিনে বেদপ্রকাশ তাঁকে রাখি পরান।

হাওড়ার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) নিশাত পারভেজ বলেন, “দু’পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement