স্বামীর সামনেই তৃণমূল জেলা পরিষদ সদস্য গুলিতে খুন

দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য কাকলি বরদোলই। তাঁর স্বামী, কেশপুরের জগন্নাথপুর অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি বিশ্বজিৎ বরদোলইয়ের সামনেই মঙ্গলবার রাতে খুন হন ২৪ বছরের এই গৃহবধূ। ঘটনার আকস্মিকতায় ঘটনাস্থলেই সংজ্ঞা হারান বিশ্বজিৎবাবু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কেশপুর শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৪ ১৪:৪৪
Share:

নিহত কাকলি (বাঁ দিকে)। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিশ্বজিত্ বরদোলইকে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য কাকলি বরদোলই। তাঁর স্বামী, কেশপুরের জগন্নাথপুর অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি বিশ্বজিৎ বরদোলইয়ের সামনেই মঙ্গলবার রাতে খুন হন ২৪ বছরের এই গৃহবধূ। ঘটনার আকস্মিকতায় ঘটনাস্থলেই সংজ্ঞা হারান বিশ্বজিৎবাবু। জ্ঞান না ফেরায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে বুধবার সকালে তাঁকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তবে কাকলিদেবীর মৃত্যু হলেও দুষ্কৃতীদের মূল লক্ষ্য যে ছিলেন বিশ্বজিৎবাবুই তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে তৃণমূল এবং পুলিশের একাংশ।

Advertisement

কী ঘটেছিল ওই রাতে?

পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কেশপুরের জগন্নাথপুরে বিশ্বজিৎবাবুদের পারিবারিক বাড়ি। রাত দেড়টা নাগাদ শৌচালয়ে যাবেন বলে ওই দম্পতি বাড়ির বাইরে বেরিয়েছিলেন। গ্রামের দিকে বেশির ভাগ বাড়িতে শৌচালয় মূল বাড়ির ভেতরে না হয়ে কিছুটা দূরে থাকে। বিশ্বজিৎবাবুদের শৌচালয়ও তাঁদের বাড়ি লাগোয়া। মিটার পঞ্চাশেক দূরের সেই শৌচালয়ে প্রথমে বিশ্বজিৎবাবু ঢুকেছিলেন। স্বামীর একটু সময় লাগছে দেখে তিনি বাইরে বসে অপেক্ষা করতে থাকেন। এর পর বিশ্বজিৎবাবু শৌচালয়ের দরজা খুলে বেরোতেই তিনি উঠে দাঁড়ান। তখনই গাছের আড়াল থেকে ছুটে আসে একটি গুলি। সরাসরি তা বেঁধে কাকলিদেবীর পিঠে। সেখানেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। চোখের সামনে তা দেখে বিশ্বজিৎবাবু সংজ্ঞা হারিয়ে মাটিতে পড়ে যান।

Advertisement

বাড়ির লোকজন তাঁদের দু’জনকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দূরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকেরা কাকলিদেবীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তাঁর স্বামীকে ভর্তি করা হয় আইসিইউ-তে। এ দিন সকাল পর্যন্ত তাঁর অবস্থার কোনও উন্নতি না হওয়ায় বিশ্বজিৎবাবুকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়।

তৃণমূল এবং পুলিশের একাংশের মতে, কাকলিদেবী লুটিয়ে পড়ার পর দুষ্কৃতীরা বুঝতে পারে, তারা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। তার পরেই পালিয়ে যায় তারা। এ দিন সকালে ঘটনাস্থলে যান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি দীনেন রায় এবং জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) অবধেশ পাঠক। দীনেনবাবু এই ঘটনায় সিপিএমের জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিতান্তই ঘরোয়া গৃহবধূ ছিলেন কাকলিদেবী। রাজনীতির সঙ্গেও তাঁর তেমন কোনও যোগাযোগ ছিল না। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেশপুরেরই অন্য একটি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় তিনি সেখান থেকে নির্বাচনে লড়েন এবং জিতেও যান। যদিও নির্বাচনে তাঁর টিকিট পাওয়ার পেছনে স্বামী বিশ্বজিতের হাত ছিল বলে গ্রামবাসীদের একাংশের ধারণা। তবে বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এলাকার উন্নয়নে কাকলিদেবী যথেষ্ট উদ্যোগী ছিলেন।

কে এই বিশ্বজিৎ বরদোলই?

স্থানীয় ও দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরনো কংগ্রেস কর্মী ছিলেন বিশ্বজিৎবাবু। পরে তিনি কাজের সুবাদে মুম্বই পাড়ি দেন। সেখানে তিনি সোনার কাজ করতেন বলে পরিবারের তরফে জানা গিয়েছে। রাজ্যে পরিবর্তনের ঠিক আগে তিনি সেখান থেকে ফিরে এসে তৃণমূলে যোগ দেন। ঠিকাদারির কাজও শুরু করেন বিশ্বজিৎ। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। সম্প্রতি সেই যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনি জগন্নাথপুরের অঞ্চল সভাপতিও হন বলে জানিয়েছে বিরোধী শিবিরের একাংশ। কেশপুর ব্লকের বেশির ভাগ সরকারি কাজের বরাত তিনিই পেতেন বলে অভিযোগ বিরোধীদের। যদিও তৃণমূল সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।

বিশ্বজিৎবাবু অনেক দিন ধরেই দুষ্কৃতীদের লক্ষ্য ছিলেন বলে এ দিন অভিযোগ করেছেন তাঁর দাদা রঞ্জিত বরদোলই। তিনি বলেন, “এর আগেও ভাইকে রাস্তায় বাইক দিয়ে ঘেরাও করা হয়। সেই সময়ে ও কোনও রকমে তাদের পাশ কাটিয়ে বাড়িতে পালিয়ে আসে।” মাস কয়েক আগে তাঁকে তাড়া করে দুষ্কৃতীরা শূন্যে গুলিও চালায় বলে জানিয়েছেন রঞ্জিতবাবু। ভাইকে সাবধান করে তিনি বেশি রাতে তাঁকে বাড়ি ফিরতে বারণ করেছিলেন। বিশ্বজিৎবাবু ও কাকলিদেবীর বছর পাঁচেকের একটি মেয়ে রয়েছে। সে ঘাটালের কর্ণগড়ে তার মামারবাড়িতে থাকত। এ দিন মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে নাতনিকে নিয়ে জগন্নাথপুরে পৌঁছন কাকলিদেবীর বাবা-মা। বাচ্চা মেয়েটি যদিও এখনও বুঝতে পারেনি যে, তাঁর মা আর নেই। বিশ্বজিৎবাবুর শ্বশুর নেপালচন্দ্র ভৌমিক বলেন, “এত রাত করে বাড়ি ফিরত বলে অনেক বার বলেছি মেদিনীপুরে একটা ফ্ল্যাট নাও। সেই মতো সম্প্রতি একটা ফ্ল্যাট নিয়ে কথাবার্তাও চলছিল। তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement