স্কটল্যান্ডে শুরু হল গণভোট, ফল শুক্রবার

দীর্ঘ লাইন। কিন্তু পুলিশ নেই বললেই চলে। উত্তেজনা থাকলেও হাসিখুশি মেজাজ। ভোট দিতে এসে চুমুও খাচ্ছেন কেউ কেউ। এ ভাবেই শুরু হল স্কটল্যান্ডের গণভোট। যার ফল সুদূরপ্রসারী। স্কটল্যান্ড ব্রিটেনের অংশ থাকবে না কি স্বাধীন রাষ্ট্র হবে, তা স্থির হবে এই গণভোটে। এই ভোটে ভালই সাড়া পড়বে বলে স্কটিশ প্রশাসনের ধারণা। স্কটল্যান্ডের মোট ভোটদাতার সংখ্যা ৪২ লক্ষ ৮৫ হাজার ৩২৩।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৭:৪৯
Share:

খোশমেজাজে চলছে গণভোট। ছবি: রয়টার্স।

দীর্ঘ লাইন। কিন্তু পুলিশ নেই বললেই চলে। উত্তেজনা থাকলেও হাসিখুশি মেজাজ। ভোট দিতে এসে চুমুও খাচ্ছেন কেউ কেউ। এ ভাবেই শুরু হল স্কটল্যান্ডের গণভোট। যার ফল সুদূরপ্রসারী। স্কটল্যান্ড ব্রিটেনের অংশ থাকবে না কি স্বাধীন রাষ্ট্র হবে, তা স্থির হবে এই গণভোটে। এই ভোটে ভালই সাড়া পড়বে বলে স্কটিশ প্রশাসনের ধারণা।

Advertisement

স্কটল্যান্ডের মোট ভোটদাতার সংখ্যা ৪২ লক্ষ ৮৫ হাজার ৩২৩। এর মধ্যে ৯৭ শতাংশ ভোট দেওয়ার জন্য নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন। এঁরা মোট ২৬০৮টি কেন্দ্রে ভোট দেবেন। দীর্ঘ লাইন পড়ার আশঙ্কায় বিশেষ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। স্কটল্যান্ডের চিফ কাউন্টিং অফিসার মিস পিটক্যাথলি জানান, ৭ লক্ষ ৮৯ হাজার ২৪টি পোস্টাল ভোটও আসবে। ৩২টি কেন্দ্রে ভোটগণনা হবে। শুক্রবার সকালে এই ভোটের ফল জানা যাবে বলে তিনি জানান।

এই নির্বাচনে ভোটারদের ‘শুড স্কটল্যান্ড বি অ্যান ইনডিপেনডেন্ট কান্ট্রি?’ শুধু এই প্রশ্নটির ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’-এ উত্তর দিতে হবে। এই উত্তর শুধু স্কটল্যান্ড বা ব্রিটেন নয়, ইউরোপ ও বিশ্ব রাজনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে। স্কটল্যান্ড যদি ব্রিটেন থেকে আলাদা হয়ে যায় তবে ইউরোপের নানা দেশেও একই দাবি উঠতে পারে। যেমন, স্পেনের ক্যাটালোনিয়া অঞ্চল দীর্ঘ দিনই পৃথক রাষ্ট্রের দাবি করে আসছে। এই নিয়ে বাস্ক বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি ‘এটা’ দীর্ঘ দিন সহিংস আন্দোলন চালিয়েছে। সহিংস আন্দোলন এখন স্তিমিত হয়ে এলেও স্কটল্যান্ডের গণভোট আবার সেখানে উন্মাদনার সৃষ্টি করেছে। কয়েক দিন আগেই এই নিয়ে স্পেনে বড় মিছিলও হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিনো রাজোয় পৃথক স্কটল্যান্ডের দাবিকে সতর্ক করে দিয়েছেন। নতুন স্কটল্যান্ডকে আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হতে আট বছরের মতো সময় লাগবে বলে তিনি জানিয়েছেন। ফলে স্কটিশ অর্থনীতি ধাক্কা খাবে।

Advertisement

একই দাবি করতে পারে ভেনিসও। ইতালি থেকে পৃথক হওয়ার দাবি চোরাস্রোতের মতো ভেনিস সমাজে দীর্ঘ দিন প্রবাহিত। বেলজিয়ামের ফ্রেঞ্চভাষী ও ডাচভাষী অংশ পৃথক করে দু’টি রাষ্ট্রের কথাও মাঝেমাঝেই ওঠে। তাই এই সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা এই ভোটের ফলের দিকে তাকিয়ে আছেন। স্বস্তিতে নেই ভারতেও। এই সময়ে কাশ্মীরের গণভোটের দাবি নিয়ে আবারও কয়েকটি শক্তি সরব হতে পারে বলে আশঙ্কা বিদেশমন্ত্রকের।

এই ভোটে মতামত স্থির করতে না পারা ভোটাররাই ফলাফল ঠিক করবেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এই ভোটের পরে ব্রিটিশ অর্থনীতির অবস্থা নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে। একটি আশঙ্কা হল, স্কটল্যান্ড পৃথক হলে একটি বড় প্রভাব পড়বে তেল উৎপাদনে ও তেল থেকে রাজস্ব আদায়ে। কারণ, ভৌগোলিক ভাবে সমুদ্রের তেলের খনিগুলি স্কটল্যান্ডের আওতায়ই পড়বে। ফলে ব্রিটিশ সরকারের তেল থেকে রাজস্ব আদায় ধাক্কা খাবে। সব মিলিয়ে ‘হ্যাঁ’ ভোটের সংখ্যাধিক্য পুরো ব্রিটিশ অর্থব্যবস্থায় বিপুল পরিবর্তন আনতে পারে। আবার সামরিক ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসতে পারে। যেমন, ব্রিটিশ নৌবাহিনীর নিউক্লিয়ার সাবমেরিনের বড় ঘাঁটি এই স্কটল্যান্ডেই রয়েছে।

মিস পিটক্যাথলি জানান, স্কটল্যান্ডের বেশ কিছু ভোটগ্রহণ কেন্দ্র বেশ দুর্গম হওয়ায় ভোটবাক্স আনতে নৌকা, হেলিকপ্টার কাজে লাগানো হবে। ফলে কয়েকটি ভোটগণনা কেন্দ্রে ব্যালটবক্স পৌঁছতে দেরি হতে পারে বলে আশঙ্কা। স্কটিশ পুলিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গোলমালের আশঙ্কা নেই বললেই চলে। তাই বিশেষ কোনও পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement