বিহারে লাইনচ্যুত ডিব্রুগড়গামী রাজধানী এক্সপ্রেস, মৃত ৪, জখম ২৩

ফের বড়সড় প্রশ্নের মুখে রেলের যাত্রী-সুরক্ষা। বুধবার ভোরে বিহারের ছপরার কাছে লাইনচ্যুত হল নয়াদিল্লি-ডিব্রুগড় রাজধানী এক্সপ্রেস। ট্রেনটির ১২টি কামরা লাইনচ্যুত হয়। রেল সূত্রে খবর, ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে চার যাত্রীর। আহত হয়েছেন আরও ২৩ জন। এরই পাশাপাশি, এ দিনই ছপরা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে একটি মালগাড়ির ১৮টি কামরা লাইনচ্যুত হয়। কেন্দ্রে নতুন সরকার গঠনের পর এ দিন থেকেই কার্যকর হয়েছে বর্ধিত যাত্রী ভাড়া ও পণ্য মাসুল। কিন্তু ঘটনাচক্রে এ দিনই রাজধানীর মতো গুরুত্বর্পূণ ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ায় ফের প্রশ্ন উঠছে, রেলের যাত্রী সুরক্ষার বিষয়টি তা হলে কবে অগ্রাধিকার পাবে?

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৪ ০৯:০২
Share:

উল্টে যাওয় নয়াদিল্লি-ডিব্রুগড় রাজধানী এক্সপ্রেস।

ফের বড়সড় প্রশ্নের মুখে রেলের যাত্রী-সুরক্ষা।

Advertisement

বুধবার ভোরে বিহারের ছপরার কাছে লাইনচ্যুত হল নয়াদিল্লি-ডিব্রুগড় রাজধানী এক্সপ্রেস। ট্রেনটির ১২টি কামরা লাইনচ্যুত হয়। রেল সূত্রে খবর, ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে চার যাত্রীর। আহত হয়েছেন আরও ২৩ জন। এরই পাশাপাশি, এ দিনই ছপরা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে একটি মালগাড়ির ১৮টি কামরা লাইনচ্যুত হয়। কেন্দ্রে নতুন সরকার গঠনের পর এ দিন থেকেই কার্যকর হয়েছে বর্ধিত যাত্রী ভাড়া ও পণ্য মাসুল। কিন্তু ঘটনাচক্রে এ দিনই রাজধানীর মতো গুরুত্বর্পূণ ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ায় ফের প্রশ্ন উঠছে, রেলের যাত্রী সুরক্ষার বিষয়টি তা হলে কবে অগ্রাধিকার পাবে?

নয়াদিল্লি থেকে মঙ্গবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ডিব্রুগড়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল ১২২৩৬ ডাউন রাজধানী এক্সপ্রেস। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দ্রুত গতিতে চলা ট্রেনটি বুধবার ভোর সওয়া ২টো নাগাদ ছপরা স্টেশন পেরিয়ে গোল্ডেন গঞ্জে ঢোকার আগে আচমকা বিকট শব্দ ও প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে যায়। যাত্রীদের বেশির ভাগই সে সময় ঘুমোচ্ছিলেন। তত ক্ষণে বেলাইন হয়ে গিয়েছে ইঞ্জিন-সহ বি-৫ থেকে বি-১০ পর্যন্ত সাতটি কামরা। উল্টে গিয়েছে ট্রেনটির বি-১ থেকে বি-৪ কামরা-সহ প্যান্ট্রি কার। ট্রেনের যাত্রীরাই প্রথমে উদ্ধারকাজে হাত লাগান। পরে উদ্ধারকারী দল-সহ রেলের উচ্চপদস্থ কর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। আহতদের উদ্ধার করে ছপরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে কয়েক জনকে পটনা মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। বাকি যাত্রীদের বিশেষ ট্রেনে পরবর্তী স্টেশনে নিয়ে যান রেল কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকে তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হবে বলে রেল সূত্রে জানানো হয়েছে। রেলমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে আহতদের চিকিৎসার দ্রুত ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। মৃতদের পরিবার প্রতি ২ লাখ, গুরুতর আহতদের ১ লাখ এবং আহতদের ২০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করেন তিনি।

Advertisement

দুর্ঘটনা ২০১৪

• ২৯ এপ্রিল: একই সঙ্গে দু’টি যাত্রিবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়।
একটি ছিল, হাওড়াগামী দুন এক্সপ্রেস, অন্যটি অজমেঢ়-পুরী
​এক্সপ্রেস। জনা দশেক যাত্রী অল্প আহত হন।

• ৪ মে: দিওয়া-সবন্তওয়াড়ি প্যাসেঞ্জার লাইনচ্যুত হয়।
এই ঘটনায় মৃত্যু হয় ১৯ যাত্রীর। আহত হন প্রায় ৬০ জন।

• ২৬ মে: উত্তরপ্রদেশের চুরেব স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত
হয়ে মালগাড়ির পিছনে ধাক্কা মারে গোরক্ষধাম এক্সপ্রেস।
অন্তত ২৫ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়। জখম অন্তত ৯৫।

কী হয়েছিল এ দিন ভোরে?

দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের এক যাত্রী বলেন, “রাত তখন দু’টো হবে। গোটা ট্রেন তখন গভীর ঘুমে। হঠাৎই বিকট শব্দ। সেই সঙ্গে বেশ কয়েক বার প্রবল ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে যায় ট্রেন। জিনিসপত্র সব আমাদের গায়ের উপর এসে পড়ে। অন্ধকারে কোনও রকমে বাইরে বেরিয়ে দেখি, কয়েকটা কামরা উল্টে গিয়েছে। ভেসে আসছে চিৎকার। আমরা যারা বেরোতে পেরেছিলাম, তারাই প্রাথমিক ভাবে উদ্ধারের কাজে হাত লাগাই। আশপাশের এলাকা থেকে কেউই সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি।”

এ দিনের ট্রেন দুর্ঘটনায় মাওবাদীদের হাত থাকার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না রেল। রেলবোর্ডের চেয়ারম্যান অরুণেন্দু কুমার বলেন, “প্রাথমিক ভাবে অন্তর্ঘাত বলেই মনে করা হচ্ছে।” দুর্ঘটনার পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন ছপরার বিজেপি সাংসদ রাজীবপ্রতাপ রুডি। তাঁর দাবি, দুর্ঘটনাস্থলের একটা অংশে রেললাইন ভাঙা ছিল। খোলা ছিল বেশ কিছু ফিশপ্লেটও। তিনি বলেন, “আমি তদন্তকারী নই। তবে প্রাথমিক ভাবে দেখে মনে হচ্ছে এই ঘটনায় নাশকতার যোগ থাকতে পারে।” এ দিন নর্থ ব্লকে স্বরাষ্ট্র এবং রেলের উচ্চপদস্থ কর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। বৈঠক শেষে তিনি জানান, ঘটনায় মাওবাদী যোগ আছে কি না, তা বলার সময় এখনও আসেনি।

এ দিন রেলমন্ত্রী ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে এখনও কিছু জানা যায়নি। রেলওয়ে সেফটি কমিশনারকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত শেষেই জানা যাবে।” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন।

এমনিতে বিহারের এই এলাকা মাওবাদী প্রভাবিত হিসেবে পরিচিত। নিরীহ মানুষের উপর নিরাপত্তা বাহিনী অত্যাচার করছে, এই অভিযোগে এ দিন এখানে বনধ ডেকেছিল মাওবাদীরা। তার মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটায় তাদের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছে। যদিও অন্তর্ঘাতের তত্ত্ব স্বীকার করতে চায়নি বিহার পুলিশ। মঙ্গলবার বিহার পুলিশের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন পি কে ঠাকুর। তিনি বলেন, “আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি। রেললাইনের কোথাও বিস্ফোরণ ঘটানোর চিহ্ন নেই। দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশে বোমাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।” একই সুর শোনা গিয়েছে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁজির গলাতেও। তিনি বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মাওবাদী যোগের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। রেলের ভুলেই এ দিনের দুর্ঘটনা ঘটেছে।” প্রাক্তন রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবও দুর্ঘটনায় রেলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন যাওয়ার আগে সেই লাইনে একটি পাইলট ট্রেন চালানোর কথা রেলের। কিন্তু এ দিন রাজধানী যাওয়ার আগে এমন কোনও পাইলট ট্রেন চালানো হয়নি।”

হেল্পলাইন নম্বর

ছপরা স্টেশন: ০৬১৫২-২৪৩৪০৯

রেলের হেল্পলাইন: ০৬২৭৯-৬৫২১০, ০৬১৫২-২৩৭৮০৭, ০৯৭৭১৪৪৩৯৪১

মুজফফরপুর: ০৬২১-২২১৩০৩৪

বারাণসী: ০৫৪২-২২২৬৭৭৮, ০৫৪২-২২২৪৭৪২

বালিয়া: ০৫৪৯৮-২২৩০২৪

ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement