কুণাল ঘোষের পরে আসিফ খান। একই কায়দায় পুলিশি নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মুড়ে রাখা তৃণমূলের প্রাক্তন এই নেতাকে সংবাদ মাধ্যম থেকে দূরে রাখা হল। কিন্তু পুলিশের সেই বেষ্টনী পেরিয়ে আসিফ এক বারের জন্য শুধু বলতে পারলেন, “পুরস্কার ভাই, পুরস্কার।” কেন তাঁকে গ্রেফতার করা হল? এরই উত্তরে কোনও রকমে এটুকু জানাতে পেরেছিলেন আসিফ। প্রতারণা মামলায় ধৃত এক অভিযুক্তের জন্য এমন নিরাপত্তা কার্যত নজিরবিহীন বলে পুলিশের একাংশের মত।
শনিবার দুপুরে বারাসত আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে প্রতারণার মামলায় ধৃত প্রাক্তন ওই তৃণমূল নেতাকে তোলা হয়। শুনানি শেষে বিচারক তাঁকে পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এ দিন আসিফের জন্য আদালত চত্বর কার্যত পুলিশি দুর্গে পরিণত হয়।
মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ দিন দুপুরে আসিফকে এনআরএস হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেন চিকিত্সকেরা। কঠোর নিরাপত্তায় এর পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটে। সেখানেও পুলিশি কর্ডন ছিল চোখে পড়ার মতো। আদালতে নিয়ে যাওয়ার আগে প্রস্তুতি পর্বে সেখানে মিনিট দশেক রাখা হয় তৃণমূলের ‘বিদ্রোহী’ এই নেতাকে। দুপুর পৌনে ৩টে নাগাদ তাঁকে বারাসতের আদালত-লক আপে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরে শুরু হয় শুনানি।
আট কোটি টাকার একটি প্রতারণা মামলায় ২০১২ সালে অভিযুক্ত হন আসিফ খান। এ নিয়ে বেশ কয়েক বার তাঁকে বিধাননগর কমিশনারেটে হাজিরা দিতেও দেখা গিয়েছে। পাশাপাশি, সারদা-কাণ্ডেও তাঁকে সিবিআই ডেকে পাঠায়। তার পর থেকেই নজরে ছিলেন আসিফ। কয়েক দফায় সিবিআইয়ের কাছে সাক্ষ্য দিয়ে বেরনোর সময় সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, তিনি এই বিষয়ে যা জানেন সবই ওই গোয়েন্দা সংস্থাকে জানিয়েছেন। এমনকী, প্রকাশ্যে মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ আসিফ মুখ খুলতে থাকেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। নিশানায় কখনও মুকুল, কখনও বা স্বয়ং দলনেত্রী। বাড়তে থাকে তৃণমূলের অস্বস্তি। বাড়তে থাকে বিধাননগর পুলিশের তত্পরতাও। ইতিমধ্যেই হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন তিনি। কিন্তু রাজ্য সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যায়। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে তিলজলার একটি বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে বিধাননগর পুলিশ। গ্রেফতারির পর অসুস্থতা বোধ করায় তাঁকে প্রথমে বিধাননগর হাসপাতাল, পরে এনআরএস-এ স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে এক দিন থাকার পর এ দিন দুপুরে ছাড়া পান তিনি।