ভাঙচুরের পর শাহবাজের বাড়ি। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসককে দেখাতে গিয়েছিলেন মা। সেখান থেকে ফেরার পথে দুষ্কৃতীদের গুলিতে প্রাণ হারালেন তিনি। নিহতের নাম নাসরিনা খাতুন। শনিবার বেলা ১২টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দলে। বছর পঁয়ত্রিশের ওই মহিলার বাড়ি স্থানীয় মেঘনা মোড়ে।
স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তথা ভাটপাড়া পুরসভার পুরপ্রধান অর্জুন সিংহের দাবি, কালামুদ্দিন আনসারি নামে তাঁর এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে ওই গুলি ছোড়া হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তা গিয়ে লাগে নাসরিনার বুকে। কালামুদ্দিনের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ শাহবাজ, পি কে এবং নিজাম-সহ পাঁচ জনের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে।
কী হয়েছিল এ দিন?
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ছ’বছরের মেয়ে নাজিয়া পরভিনকে নিয়ে এ দিন ভাটপাড়া পুর হাসপাতালে গিয়েছিলেন নাসরিনা। মেঘনা মোড়ে বাড়ি হলেও চিকিৎসককে দেখিয়ে মা-মেয়ে ফিরছিলেন জগদ্দলের দেড় নম্বর গলিতে তাঁদের পুরনো বাড়িতে। কিন্তু, ঘোষপাড়া রোড থেকে এক নম্বর গলিতে ঢোকার মুখে আচমকা নাসরিনার বুকে এসে গুলি লাগে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। গুলির আওয়াজে লোকজনের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে যায়। মাকে ওই ভাবে পড়ে যেতে দেখে কাঁদতে শুরু করে নাজিয়া। উপুড় হয়ে পড়ে যাওয়া নাসরিনাকে সে ধাক্কাধাক্কি করে ডাকতে থাকে। কিন্তু, তিনি তাতে সাড়া না দেওয়ায় চিৎকার করতে থাকে নাজিয়া। তার চিৎকারে এগিয়ে আসে বেশ কয়েক জন। নাসরিনাকে একটি ভ্যান রিকশায় করে নিয়ে যাওয়া হয় ভাটপাড়া রাজ্য হাসপাতালে। কিন্তু তত ক্ষণে সব শেষ। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ঘটনার পর সরব হন অর্জুনবাবু। তাঁর দাবি, দুষ্কৃতীরা কালামুদ্দিনকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল। সেই গুলি গিয়ে লাগে নিরীহ ওই মহিলার গায়ে। এরই পাশাপাশি তিনি বলেন, “পুলিশি ব্যবস্থা আরও জোরদার করা দরকার। ঘটনাটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমরা ওই মহিলার পরিবারের পাশে আছি। পুলিশকে অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করার কথা বলা হয়েছে।”
কিন্তু, কালামুদ্দিনই বা কেন দুষ্কৃতীদের লক্ষ্য?
অর্জুন ঘনিষ্ঠ পেশায় প্রোমোটার ওই ব্যক্তি পুলিশের কাছে অভিযোগে জানিয়েছেন, সম্প্রতি শাহবাজ নামের এক স্থানীয় দুষ্কৃতী তাঁর কাছে টাকা চেয়েছিল। কিন্তু, তিনি তা দিতে অস্বীকার করায় এই হামলা চালানো হয়েছে। পুলিশ শাহবাজ-সহ পাঁচ জনকে খুঁজছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোটা নতুন কোনও ঘটনা নয়। পুলিশ সব জানলেও কোনও ব্যবস্থা নেয় না। সেই নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে এলাকায় দুষ্কৃতীরাজ বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, এ দিনের ঘটনা তারই প্রমাণ। এই ঘটনার পর শাহবাজের বাড়িতে ভাঙচুর করে স্থানীয় লোকজন।
ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দাপ্রধান অজয় ঠাকুর বলেন, “দুষ্কৃতীরা কেন ওই ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে খোলা রাস্তায় গুলি চালাল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”