নাগারাম গ্রামের সেই বিস্ফোরণস্থল। ছবি: পিটিআই।
অন্ধ্রপ্রদেশের পূর্ব গোদাবরী জেলায় গ্যাস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (গেইল)-র পাইপলাইনে বিস্ফোরণে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮। শুক্রবার ভোর ৬টা নাগাদ গোদাবরী জেলার নাগারাম গ্রামে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। দমকলের ২০টি ইঞ্জিনের ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জেলাশাসক নিতুকুমারী প্রসাদ। তিনি জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও উদ্ধারকার্য এখনও চলছে। আহতদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ওএনজিসি-র শোধনাগারের সামনে গেইলের ১৮ ইঞ্চি পাইপলাইনে বিস্ফোরণে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন গেইলের কর্ণধার বি সি ত্রিপাঠী। বিস্ফোরণে মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ দিন রাজ্যপাল ইএসএল নরসিংহকে পাঠানো একটি বার্তায় রাষ্ট্রপতি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি রাজ্য সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে বলেই তিনি আশাবাদী। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন তিনি।
কী ঘটেছিল এই দিন?
হায়দরাবাদ থেকে ৫৬০ কিলোমিটার দূরে পূর্ব গোদাবরী জেলায় নাগারাম গ্রামের ঘুম তখনও ভাঙেনি। হঠাত্ই প্রচন্ড জোরে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান গ্রামবাসীরা। সেই সঙ্গে তীব্র গ্যাসের গন্ধ ও ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারিদিক। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ মনে করছে ভোর সাড়ে ৪টে থেকেই পাইপলাইন থেকে গ্যাস লিক করা শুরু হয়। ক্রমশ তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা গ্রামে। পরে স্থানীয় এক চা বিক্রেতার জলন্ত স্টোভ থেকেই বিস্ফোরণ ঘটে। উত্তর উপকূলবর্তী এলাকার আইজি অতুল সিংহ জানান, বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে মাটিতে গভীর গর্ত হয়ে যায়। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের বাড়িগুলিতে। গ্রামবাসীদের কথায়, বসতি এলাকার মধ্যেই এই পাইপলাইন ছিল। দীর্ঘদিন ধরেই গ্যাসের গন্ধে অতিষ্ট ছিলেন তাঁরা। অভিযোগ করা সত্ত্বেও কোনও পদক্ষেপ করেননি গেইল কর্তৃপক্ষ। বিস্ফোরণের পরে এই গন্ধ আরও তীব্র হয়েছে। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী ওয়াই রামাকৃষ্ণুডু জানান, এই বিষয়ে গেইলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও পুলিশের আধিকারিকেরা।
বিস্ফোরণের কারণ খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু। এ দিন টুইটারে বিস্ফোরণে মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিস্ফোরণের পরে অন্ধ্রের গ্যাসক্ষেত্র থেকে সাময়িক ভাবে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে ওএনজিসি। জেলার দু’টি গ্যাসক্ষেত্রের কূপগুলি বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ। এ দিন ওএনজিসি-র চেয়ারম্যান দীনেশ কে শরাফ বলেন, “এই পাইপলাইনগুলি থেকেই গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ করা হয়। তাই বিস্ফোরণের পরে সঙ্গত কারণেই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।”