ব্যাঙ্কশাল কোর্টে কুণাল ঘোষ। সোমবার বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।
আদালতে দাঁড়িয়ে বার বার সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িত প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন তিনি। এ বার এজলাসে বিচারকের সামনেই হুমকি দিলেন তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষ। সোমবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতের সিবিআই আদালতে তিনি বলেন, রাজ্য পুলিশ কোনও তদন্তই করেনি। সিবিআই তদন্ত করলেও তার প্রতিফলন চার্জশিটে হয়নি। এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত প্রভাবশালীদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার না করা হলে তিনি আত্মহত্যা করবেন।
সারদায় সিবিআই তদন্ত শুরু হওয়ার পর থেকেই এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত প্রভাবশালী নিয়ে অবশ্য বার বারই আদালতে সরব হয়েছেন কুণাল। কখনও কখনও বিভিন্ন মন্ত্রীর সঙ্গে অর্থলগ্নি সংস্থার সম্পর্ক নিয়ে নথিও দাখিল করেছেন তিনি। কখনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও সারদার সংবাদমাধ্যম থেকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ করেছেন। এ দিনও একই ইঙ্গিত দিয়ে কুণাল বলেছেন, যাঁরা সুদীপ্তকে এই পনজি স্কিমের ব্যবসায় নামিয়েছিলেন, একের পর এক মিডিয়া সংস্থা খুলিয়েছিলেন, তাঁদের কিছু বলা হচ্ছে না। যাঁরা সারদা থেকে রাজনৈতিক প্রচার, মোটরসাইকেল পেয়েছেন, তাঁদের কিছু বলা হচ্ছে না! তিনি বলেন, “আমি চেকে টাকা নিয়ে ফেঁসে গিয়েছি। যাঁরা নগদ টাকা নিয়েছেন, তাঁরা প্রমাণ নেই বলে ছাড় পাবেন! এটা হতে দেব না।’’ সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িত বলে দুই শীর্ষ পুলিশকর্তার নামও এ দিন আদালতে তুলেছেন তিনি।
এ দিন আদালতে ঢোকার পর থেকেই থমথমে মুখে বসেছিলেন কুণাল। মাঝেমাঝে পাশে বসা সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে নীচু স্বরে কথাও বলছিলেন। শুনানি শুরু হতেই সিবিআই কোর্টের বিচারক অরবিন্দ মিশ্রকে তিনি বলেন, “আমার সময় কমে আসছে। আমি বলতে না পারলে অনেক কিছু অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। শেষ বারের মতো কথা বলার অনুমতি চাইছি।” বিচারক কুণালকে কথা বলার অনুমতিও দেন। এজলাসের কাঠগড়ায় বলতে উঠে আত্মহত্যার হুমকি দেন তিনি। বলেন, “মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। আমি আমার পরিবার-পরিচিতদের মুক্তি দিতে চাই।” তার পরেই হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করেন কুণাল। কাঁদতে কাঁদতেই কাঠগড়া থেকে নেমে আদালতের লকআপে ঢুকে পড়েন। হাতে থাকা কাগজের তাড়া ছুড়ে ফেলে বেঞ্চে বসে ফের কাঁদতে থাকেন তিনি। পাশে বসে ফ্যালফ্যাল করে চেয়েছিলেন সুদীপ্ত। কুণালের আত্মহত্যার হুমকির কথা বিচারক অরবিন্দ মিশ্র তাঁর নির্দেশে উল্লেখ করেছেন।
সিবিআইয়ের অন্য একটি মামলায় আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট হারাধন মুখোপাধ্যায় সুদীপ্ত সেনকে জামিন দিয়েছেন। ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দিতে না পারার জন্যই জামিন পেয়েছেন তিনি। তবে বাকি মামলায় জামিন না পাওয়ার কারণে তাঁকে আপাতত জেলেই থাকতে হবে। ওই মামলায় বাকি তিন অভিযুক্ত প্রাক্তন পুলিশকর্তা রজত মজুমদার, ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার ওরফে নীতু, ব্যবসায়ী সন্ধির অগ্রবাল এবং অসমের গায়ক সদানন্দ গগৈ অবশ্য জামিন পাননি।