চৌরঙ্গির একটি কেন্দ্রে চলছে ভোটগ্রহণ। ছবি: রণজিত্ নন্দী।
বিধানসভা উপনির্বাচনে রক্ত ঝরল কলকাতায়!
শনিবার দুপুরবেলা চৌরঙ্গি কেন্দ্রের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে সিপিএমের ক্যাম্প অফিসে হামলার অভিযোগ ওঠে। পুলিশের সামনেই মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয় মহিলাকর্মীদের। ঘটনায় দুই মহিলাকর্মী-সহ পাঁচ জন জখম হয়েছেন। রক্তাক্ত অবস্থায় ওই দু’জনকে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। বাকিদের নিয়ে যাওয়া হয় এনআরএস হাসপাতালে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে র্যাফ নামানো হয়। এই ঘটনায় অভিযোগের তির শাসক দলের দিকে। বাইরে থেকে দুষ্কৃতী এনে এলাকায় হামলা চালানো হয় বলে সিপিএমের অভিযোগ। চৌরঙ্গির বাম প্রার্থী ফৈয়াজ আহমেদ খান বলেন, “পুলিশের ভূমিকা নক্কারজনক। এখানকার বিভিন্ন হোটেলে সমাজবিরোধীরা রয়েছে। পুলিশকে বলেও কোনও ব্যবস্থা হয়নি।” ঘটনার নিন্দা করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু।
সারদা-কাণ্ডের ছায়ায় এ দিন কলকাতার চৌরঙ্গি ও উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট দক্ষিণ— দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রে হয় উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ। চৌরঙ্গি কেন্দ্রে ২২২টি এবং বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে ২৮৫টি বুথে ভোটগ্রহণ চলে। দুপুর ৩টে পর্যন্ত চৌরঙ্গি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৪০.২৪ শতাংশ। বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে ৬৩ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর। দু’টি কেন্দ্রে গড়ে ভোট পড়েছে ৫১.৮০ শতাংশ।
আধা সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভোট হলেও এ দিন সকাল থেকেই চৌরঙ্গি থেকে বিক্ষিপ্ত কিছু গণ্ডগোলের খবর পাওয়া যায়। গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের সত্যপ্রিয় ভবনের কাছে ৭৩ নম্বর বুথে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বহিরাগতদের এনে ভোট দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। অন্য দিকে, ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তনু সেন ও বিতর্কিত তৃণমূল নেতা আনোয়ার হোসেনের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন চৌরঙ্গি বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রীতেশ তিওয়ারি। তাঁর অভিযোগ, বহিরাগতদের এনে বুথে গুন্ডামি করছে তৃণমূল। টেরিটি বাজারের কাছে ছাতাওয়ালা গলির কাছে বিজেপি কর্মী সুরেশপ্রসাদ রাম ও রেখাদেবী রামের উপর হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আহত অবস্থায় তাঁদের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়।
চৌরঙ্গির একটি কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
এ দিন সকাল সকাল ভোট দেন চৌরঙ্গি কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেস প্রার্থী সন্তোষ পাঠক বলেন, “তিন মাস আগে লোকসভা ভোটে চৌরঙ্গি কেন্দ্রে আমরাই জিতেছিলাম। এ বারেও তার কোনও পরিবর্তন হবে না। তবে সকালে বুথে ঢোকার সময় তামিল চার্চের কাছে তৃণমূলের কিছু ছেলে আমার সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে। আমাকে বার করে দেওয়ারও চেষ্টা করে ওরা।” অন্য দিকে, বিজেপি প্রার্থী রীতেশ তিওয়ারির কথায়, “এত কড়া নিরাপত্তা আমরা চেয়েছিলাম। ২০১১ সালের ভোটেও এই রকম নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল। এ বারেও ঠিক সেই রকমই হচ্ছে। আমরা খুব খুশি।”
অন্য দিকে, বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে এ দিন দুপুর পর্যন্ত কোনও অশান্তির খবর পাওয়া যায়নি।
২০১১-র বিধানসভা ভোটে চৌরঙ্গি কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন তৃণমূলের শিখা মিত্র। সম্প্রতি তিনি দল ছাড়ার পর খালি হয় ওই কেন্দ্র। চতুর্মুখী লড়াইয়ে এ বার চৌরঙ্গি কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের হয়ে দাঁড়িয়েছেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি-র হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রীতেশ তিওয়ারি। কংগ্রেসের হয়ে লড়ছেন সন্তোষ পাঠক। এখানে বামেদের প্রার্থী ফৈয়াজ আহমেদ খান। গত লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে হাজার দেড়েক ভোটে এগিয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী সোমেন মিত্র। অন্য দিকে, বাম বিধায়ক নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর সেই কেন্দ্র খালি হওয়ায় বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভাতেও উপনির্বাচন হচ্ছে। গত লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী ইদ্রিশ আলিকে পিছনে ফেলে ৩০ হাজারেরও বেশি ভোটে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি-র শমীক ভট্টাচার্য। এ বারেও ওই কেন্দ্র থেকে বিজেপি-র হয়ে তিনিই লড়ছেন। পাশাপাশি, তৃণমূলের হয়ে দাঁড়িয়েছেন ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাস, বাম প্রার্থী মৃণাল চক্রবর্তী এবং কংগ্রেস প্রার্থী অসিত মজুমদার।
দু’টি কেন্দ্রের কোনওটিতেই স্বস্তিতে নেই তৃণমূল। প্রথমত, গত লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এই দু’টি কেন্দ্রেই তারা পিছিয়ে রয়েছে— চৌরঙ্গিতে কংগ্রেস এবং বসিরহাটে বিজেপি-র কাছে। দ্বিতীয়ত, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের গতিপ্রকৃতি। সেই তদন্তে তৃণমূলের বেশ কিছু নেতার নাম জড়িয়ে যাওয়ার পাশাপাশি রজত মজুমদারের গ্রেফতার দলের অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছে। এর মধ্যেই দুই কেন্দ্রে জিততে মরিয়া শাসকদল। গত বিধানসভা নির্বাচনে চৌরঙ্গি তাদের হাতে থাকলেও, বসিরহাট কেন্দ্রটি বামেদের দখলে ছিল।
দুই কেন্দ্রেরই ভোটগণনা আগামী মঙ্গলবার।