ভুবনেশ্বরের সদর দফতর থেকে বেরোচ্ছেন জাতীয় বিপর্যয় বাহিনীর কর্মীরা। ছবি: পিটিআই।
উপকূলে আছড়ে পড়ার আগে শক্তি বাড়িয়েই চলেছে ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ। শনিবার সকালে ওড়িশা-অন্ধ্র উপকূল থেকে প্রায় তিনশো কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে এই ঘূর্ণিঝড়। রবিবার দুপুরের মধ্যেই পূর্ব উপকূলের ওই রাজ্য দু’টির উপর আছড়ে পড়বে সেটি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। ঘণ্টায় ১৫৫-১৮০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আগাম ব্যবস্থা হিসাবে দুই রাজ্য থেকে এখনও পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়েছে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মানুষকে। রবিবার বাতিল করা হয়েছে ৩৮টি প্যাসেঞ্জার এবং এক্সপ্রেস ট্রেন।
হুদহুদ মোকাবিলায় দুই রাজ্যের সঙ্গে কোমর বেঁধেছে কেন্দ্রও। ইতিমধ্যেই জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর বেশ কয়েকটি দলকে ওই দুই রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবারই পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে জেলাগুলিতে যথেষ্ট সংখ্যক স্যাটেলাইট ফোন সরবরাহ করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। গত বছর মোটামুটি একই সময়ে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় পিলিন। সেই সময়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ওড়িশার গোপালপুর। এ বারে নজর মালকানগিরি এবং বিশাখাপত্তনমের উপর। শেষ মুহূর্তে গতিপথের বড় কোনও পরিবর্তন না হলে এই অঞ্চলের উপর দিয়েই বয়ে যাবে হুদহুদ। আক্রান্ত হবে শ্রীকাকুলাম, গোপালপুরও। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে পাহাড় ও সমুদ্র একসঙ্গে থাকায় কিছুটা কম ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিশাখাপত্তনম। পাহাড় থাকায় দ্রুত শক্তি হারাবে ঘূর্ণিঝড়।
দিল্লির মৌসম ভবন সূত্রে জানানো হয়েছে, উপকূলের জেলাগুলিতে শনিবার গভীর রাত থেকেই ৫০-৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। এর পর ঘূর্ণিঝড় যত এগোবে ততই বাড়তে থাকবে হাওয়ার গতিবেগ। এর ফলে গভীর সমুদ্রে ১৪ মিটার পর্যন্ত ঢেউ উঠতে পারে। উপকূলেও দু’মিটার পর্যন্ত ঢেউ উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আবহবিদরা। স্থলভূমির অন্তত দু’শো মিটার ভিতর পর্যন্ত চলে আসতে পারে সমুদ্রের জল। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশাখাপত্তনমে তৈরি রাখা হয়েছে সেনাবাহিনীর একটি দলকেও। প্রস্তুত রয়েছে উপকূলরক্ষি বাহিনীর একাধিক নৌকা এবং নৌবাহিনীর চারটি জাহাজও।
রবিবার ওড়িশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশে ৩৮টি ট্রেন বাতিল ঘোষণা করেছে রেল। পূর্ব উপকূল রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন সকাল ছ’টা থেকে ভুবনেশ্বর-বিশাখাপত্তনম রুটে সব এক্সপ্রেস এবং প্যাসেঞ্জার ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। হাওড়া থেকে যাওয়া ট্রেনগুলিকে নাগপুর দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রত্যক্ষ প্রভাব না পড়লেও পরোক্ষ প্রভাবে এ রাজ্যেও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাষ দেওয়া হয়েছে। ভারী বৃষ্টি হবে দুই মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতেও মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হতে পারে তরাই-ডুয়ার্সেও।