গুয়াহাটিতে ডিজিপি-সম্মেলনে মোদী। ছবি:পিটিআই।
স্মার্ট পুলিশ— রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের জন্য এখন এটাই প্রধানমন্ত্রীর দাওয়াই। রবিবার গুয়াহাটিতে সমস্ত রাজ্যের পুলিশের ডিজিদের সম্মেলনে এই বার্তাই দিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেই সঙ্গে পুলিশকে আরও কার্যকরী করে তোলার জন্য নতুন কিছু পদ্ধতির উল্লেখ করেন তিনি।
গুয়াহাটিতে সমস্ত রাজ্যের ডিজিপিদের নিয়ে শনিবার শুরু হয়েছে সম্মেলন। তারই দ্বিতীয় দিনে শুরু থেকেই বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন মোদী। স্বাধীনতা পরবর্তী শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি ভাষণ শুরু করেন। কথায় কথায় বুঝিয়ে দিলেন, দেশ চালাতে প্রয়োজন দক্ষ এবং শক্তিশালী প্রশাসন। কোনও দেশের পুলিশ এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত, তা বোঝাতে গিয়েই এ দিন তিনি তুলে আনেন তাঁর ‘স্মার্ট পুলিশ’ তত্ত্ব।
কী সেই তত্ত্ব?
এস— ‘স্ট্রিক্ট’ এবং ‘সেনসিটিভ’, এম— ‘মডার্ন’ এবং ‘মোবিলিটি’, এ— ‘অ্যালার্ট’ এবং ‘অ্যাকাউন্টেবল’, আর— ‘রিল্যায়েবল’ এবং ‘রেসপন্সিবল’, টি— ‘টেকনো-স্যাভি’ এবং ‘ট্রেইনড’। তিনি বলেন, “যে দেশে উচ্চপর্যায়ের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক রয়েছে সেখানে সরকার চালাতে অস্ত্রের প্রয়োজন হয় না।” তাঁর মতে, এমন প্রশিক্ষিত নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে যার সদস্যেরা হবেন দক্ষ, সাহসী এবং আইন রক্ষার পাশাপাশি দেশের শান্তি-শৃঙ্খলার প্রতিও তাঁদের কড়া নজর থাকবে।
পাশাপাশি, এ দিন দেশের ৩৩ হাজার শহিদদের কথাও তুলে ধরেন মোদী। তিনি জানান, স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন বিভাগের অন্তত ৩৩ হাজার পুলিশ কর্মী তাঁদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। কিন্তু এই শহিদদের কথা সে ভাবে কেউ মনে রাখেননি। তাঁর কথায়, “অসংখ্য সেই সব বীরদের স্বার্থত্যাগকে ব্যর্থ হতে দেওয়া উচিত নয়।” তাই পরবর্তী প্রজন্মকে এই শহিদদের বীরত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে পরিচয় করাতে নতুন প্রোটোকল তৈরি করার কথা বলেন তিনি। এই বিষয়ে সম্মেলনে উপস্থিত শীর্ষ পুলিশ কর্তাদের টাস্ক ফোর্স গঠনের নির্দেশও দেন।
কেমন হবে সেই প্রোটোকল?
তাঁর মতে, শহিদদের জীবনী নিয়ে নতুন ই-বুক চালু করতে হবে। বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা-সহ জাতীয় স্তরের ভাষাতেও এই বই লেখা হবে। প্রতি বছরই এই বইয়ের নতুন নতুন সংস্করণ প্রকাশ করা হবে।
একই সঙ্গে পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষীদের সামাজিক ও পারিবারিক সুরক্ষার দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মোদী। তিনি জানান, প্রত্যেক পুলিশকর্মী যাতে তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনে সুখী হতে পারেন তা দেখা সরকারের কর্তব্য। বিশেষত প্রশাসনের নিচুতলার কর্মীদের জন্য চিকিত্সা, স্বাস্থ্য, গৃহ এবং তাঁদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা সংক্রান্ত নতুন স্কিম চালু করতে হবে। পাশাপাশি, প্রত্যেক থানার নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকার প্রয়োজনীয়তাও মনে করিয়ে দেন তিনি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ শনিবার এই সম্মেলনে হাজির ছিলেন। দিল্লির বাইরে এই প্রথম ডিজি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মূল বক্তব্য ছিল, আগামী দিনে উত্তর-পূর্ব ও পূর্ব ভারতের মাটি থেকে জঙ্গি নেটওয়ার্ক উপড়ে ফেলাই হবে কেন্দ্রের প্রাথমিক কর্তব্য। সেই কারণেই মোদী সরকারের প্রথম ডিজি সম্মেলনটির জন্য গুয়াহাটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে।