হিসাব বহির্ভূত মামলায় বেকসুর খালাস জয়ললিতা

একটি রায় কেড়ে নিয়েছিল সব কিছু। অন্য একটি রায়ে হারানো সে সব তিনি ফিরে পেলেন। রাজ্যপাট তো ফিরে পেলেনই, পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে দাঁড়াতে তাঁর আর কোনও বাধা রইল না। একই সঙ্গে কাটল তাঁর কারাবাসের ভয় এবং ১০০ কোটি টাকা জরিমানার গেরোও। এমনকী, রাজ্য জুড়ে জোর জল্পনা, আগামী ১৭ মে ফের তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেবেন জয়ারাম জয়ললিতা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৫ ১১:২২
Share:

একটি রায় কেড়ে নিয়েছিল সব কিছু।

Advertisement

অন্য একটি রায়ে হারানো সে সব তিনি ফিরে পেলেন।

রাজ্যপাট তো ফিরে পেলেনই, পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে দাঁড়াতে তাঁর আর কোনও বাধা রইল না। একই সঙ্গে কাটল তাঁর কারাবাসের ভয় এবং ১০০ কোটি টাকা জরিমানার গেরোও। এমনকী, রাজ্য জুড়ে জোর জল্পনা, আগামী ১৭ মে ফের তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেবেন জয়ারাম জয়ললিতা।

Advertisement

কেন না, তিনি এখন ‘শাপমুক্ত’। হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি মামলায় সোমবার কর্নাটক হাইকোর্ট তাঁকে বেকসুর খালাসের নির্দেশ দিয়েছে। আর সেই রায়ে তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা এআইএডিএমকে সুপ্রিমো জয়ললিতা আপাতত স্বস্তিতে। আপাতত, কেন না, যাঁর করা মামলার প্রেক্ষিতে জেলে যেতে হয়েছিল তাঁকে, সেই বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী এ দিন জানিয়েছেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন। তবে, তাতে এআইএডিএমকে সমর্থকদের আনন্দে কোনও ঘাটতি নেই। ‘আম্মা’র মুক্তিতে তাঁদের উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে কোর্টরুম থেকে শুরু করে গোটা রাজ্যে। এমনকী, সংসদে মিষ্টি বিতরণ করতেও দেখা যায় এআইএডিএমকে সাংসদদের। গত লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৩৯টি আসনের ৩৭টিতেই জিতেছিলেন ‘আম্মা’র প্রার্থীরা।

এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ কর্নাটক হাইকোর্টের বিচারপতি সিআর কুমারস্বামী জয়া-সহ চার জনকে হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি মামলায় বেকসুর খালাসের নির্দেশ দেন। এমনিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কয়েক দফার বাড়ানো মেয়াদে জামিনে মুক্ত ছিলেন জয়ললিতা। শীর্ষ আদালতের পরামর্শ মতো গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের দেওয়া এক নির্দেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন জানান আম্মার আইনজীবীরা। এ দিন জয়ার সেই আবেদনই মঞ্জুর করেন বিচারপতি কুমারস্বামী। প্রায় ১০ সেকেন্ডের ‘আবেদন মঞ্জুর’ শব্দ দু’টিতেই বদলে গেল তামিলনাড়ুর ভাগ্য। জয়ললিতার বাসভবনে রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী পনিরসেলভম-সহ পৌঁছে যান দলের উচ্চপদস্থ নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, এ দিন বিকেল চারটের সময় দলীয় বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন আম্মা।

সরকারি আইনজীবী বি ভি আচার্য এ দিনের রায়ের প্রেক্ষিতে বলেন, ‘‘আমি এই রায় আশা করিনি। তবে, বেশ কিছু রায় তো আমাদের অবাক করেই!’’ অন্য দিকে জয়ার আইনজীবী বি কুমার বলেন, ‘‘জয়ললিতার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনও বাধা রইল না।’’ সুব্রহ্মণ্যম স্বামীও এই রায়ে হতাশ এবং অবাক। তিনি বলেন, ‘‘রায়ের বিরুদ্ধে আমি উচ্চ আদালতে আবেদন করব।’’

গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর। হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি মামলায় জয়ললিতাকে চার বছর কারাবাসের সাজা শোনায় বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালত। সঙ্গে ১০০ কোটি টাকা জরিমানাও। পাশাপাশি ওই দিন সাজা হয় তাঁর তিন ঘনিষ্ঠেরও। পালিত পুত্র সুধাকরণ, ঘনিষ্ঠ বান্ধবী শশীকলা নটরাজন এবং আত্মীয়া ইলাবরসিকেও চার বছরের কারাবাসের সাজা শোনায় আদালত। তবে তাঁদের ১০ কোটি টাকা করে জরিমানা হয়। ওই দিনই সরকারি ভাবে গ্রেফতার করা হয় জয়ললিতা-সহ চার জনকে। বিচারপতি জন মাইকেল ডি’কুনহার ওই রায়ে দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেলে যেতে হয় জয়ললিতাকে। দেশের ইতিহাসে তিনিই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, যিনি তখ্ত থেকে সোজা জেলে গিয়েছিলেন। তবে, বেশি দিন তাঁকে হাজতবাস করতে হয়নি।

অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ওই বছরেরই ৯ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টে তাঁর জামিনের আবেদন করেন আম্মার আইনজীবীরা। এর সপ্তাহখানেক পরে ১৭ অক্টোবর জামিন মেলে জয়ললিতা এবং বাকি তিন অভিযুক্তের। কারাদণ্ডে স্থগিতাদেশ দিয়ে প্রধান বিচারপতি এইচ এল দাত্তুর বেঞ্চ ওই সময় জয়াকে দু’মাসের মধ্যে ফের কর্নাটক হাইকোর্টে আবেদন করার নির্দেশ দেন। এর পরে বেশ কয়েক দফায় জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। ইতিমধ্যে কর্নাটক হাইকোর্টে নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করেন জয়ার আইনজীবীরা।

কিন্তু, নিম্ন আদালতের রায়ে জেলে যাওয়ার পর পরই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয় জয়ললিতাকে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর আইনসভার সদস্য থাকা যায় না। এমনকী, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুসারে হাজতবাসের পর আরও ছ’বছর ভোটে লড়া যায় না। কাজেই একটি রায় জয়ার কাছ থেকে রাজ্যপাট থেকে শুরু করে প্রায় সব কিছু কেড়ে নেয়। এ দিনের রায়ে তাই ‘শাপমুক্ত’ হলেন ৬৭ বছরের এই তামিল নেত্রী।

ন’য়ের দশকে ডিএমকে নেতা করুণানিধি রাজ্যে ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার বিরুদ্ধে আয় বহির্ভূত সম্পত্তির মামলা করেন তত্কালীন জনতা দলের নেতা তথা বর্তমান বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। এর পরেই ৬৬ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকার হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি থাকার অভিযোগে ‘আম্মা’-র বিরুদ্ধে চার্জশিট দায়ের করা হয়। একই অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয় এই মামলায় অন্য অভিযুক্ত শশীকলা, ভি এন সুধাকরণ ও ইলাবরসির বিরুদ্ধেও।

জয়ার বিচারের সময়-সারণি

• ১৯৯৬

জয়ললিতার বিরুদ্ধে তত্কালীন জনতা দলের নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর মামলা দায়ের। অভিযোগ, ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর হিসাববহির্ভূত সম্পত্তির পরিমাণ ৬৬.৬৫ কোটি টাকা।


• ৭ ডিসেম্বর, ১৯৯৬: গ্রেফতার জয়ললিতা।


• ৪ জুন, ১৯৯৭: দুর্নীতিদমন আইনে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়।


১ অক্টোবর, ১৯৯৭: মাদ্রাজ হাইকোর্টে মামলায় রেহাই চেয়ে জয়ললিতার আবেদন খারিজ।


• মে ২০০১: বিধানসভা নির্বাচনে এআইডিএমকে-র বিপুল জয়। মুখ্যমন্ত্রী পদে জয়ললিতা।


• ২১ সেপ্টেম্বর, ২০০১: মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে জয়ললিতার ইস্তফা।


• ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০০২: উপনির্বাচনে ফের জয়ী জয়া। শপথ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে।


• ২০০৩: মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মামলা প্রভাবিত করতে পারেন জয়া, এই আশঙ্কার কথা জানিয়ে তামিলনাড়ু থেকে মামলা কর্নাটকে স্থানান্তরিত করতে সুপ্রিম কোর্টে ডিএমকে-র আর্জি।


• ১৮ নভেম্বর, ২০০৩: সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি বেঙ্গালুরুতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়।


• ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০০৫: কর্নাটক সরকার রাজ্যের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বি ভি আচার্যকে বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে নিয়োগ করে।


অক্টোবর, নভেম্বর ২০১১: বিশেষ আদালতে ১৩৩৯টি প্রশ্নের মুখোমুখি জয়ললিতা।


• ১২ অগস্ট, ২০১২: বিশেষ সরকারি কৌঁসুলির দায়িত্ব থেকে সরে গেলেন বি ভি আচার্য।


• ২৮ অগস্ট, ২০১৪: বিশেষ আদালত ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রায় স্থগিত রাখে। তার আগে জয়ললিতা-সহ বাকি অভিযুক্তদের আদালতে হাজিরার নির্দেশ দেয়।


• ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪: জয়ললিতা-সহ বাকিরা দোষী সাব্যস্ত। চার বছরের হাজতবাস এবং জরিমানার নির্দেশ।


• ১৮ অক্টোবর, ২০১৪: সুপ্রিম কোর্টে জয়ললিতা-সহ বাকিদের জামিন মঞ্জুর হওয়ায় ২১ দিন পর জেল থেকে ছাড়া পেলেন তাঁরা।


• ৮ ডিসেম্বর, ২০১৪: কর্নাটক হাইকোর্টে নিম্ন আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে জয়ার আবেদন।


• ১১ মে, ২০১৫: কর্নাটক হাইকোর্টে বেকসুর খালাস জয়ললিতা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement