দু’শোর ক্লাবের নতুন সদস্য। ছবি: এএফপি।
প্রথম তিনটি কোয়ার্টার ফাইনালের মত চতুর্থটিও হল নিতান্তই একপেশে। কোনও রকম চমক ছাড়াই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪৩ রানে হারিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছল টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট নিউজিল্যান্ড। তবে ম্যাচের ফলাফলে কোনও চমক না থাকলেও রেকর্ডের দিক থেকে চমকের অভাব ছিল না ওয়েলিংটনে। সৌজন্যে কিউয়ি ওপেনার মার্টিন গুপ্তিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিংকে রীতিমতো হেনস্থা করে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ এবং এক দিনের ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করলেন তিনি। একাই করলেন ২৩৭ রান। এবং ভাল ‘ইঞ্জিন’য়ে ভর করে বিশ্বকাপের নক আউট পর্যায়ে সর্বোচ্চ রানের পাশাপশি সবচেয়ে বেশি ব্যবধানে জয়ের রেকর্ডও করে ফেলল নিউজিল্যান্ড।
শনিবার সকালে টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। প্রথমে ব্যাট করার কারণ জানাতে গিয়ে কিউয়ি অধিনায়ক বলেন, “পিচ একটু অন্যা রকম মনে হচ্ছে। প্রথমে ব্যাট করে বড় রান পেলে বিপক্ষ চাপে পড়ে যাবে। আমরা সেই চেষ্টাই করব।” কিউয়ি অধিনায়কের সেই ‘চেষ্টা’ যে গুপ্তিল এত সিরিয়াসলি নেবেন তা বোধহয় অধিনায়ক নিজেও ভাবেননি। কিউয়ি ওপেনারের মারের চোটে কনকনে ওয়েলিংটনের আবহাওয়াও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
ঠিক কতটা ভয়ঙ্কর ছিলেন গুপ্তিল? ১৬৩ বলে ২৩৭ রান করে অপরাজিত থাকেন নিউজিল্যান্ডের এই ডানহাতি ওপেনার। মারেন ২৪টি চার এবং ১১টি ছয়। গুপ্তিল বাদে বাকি নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা মারেন ১৫টি চার এবং চারটি ছয়। ১১১ বলে শতরান পূর্ণ করেন তিনি। আর পরের ৫২ বলে করেন ১৩৭ রান। ৩০০ থেকে ৩৫০ রানে পৌঁছতে নিউজিল্যান্ড নেয় মাত্র ১৬ বল। ১৫২ বলে দু’শো করেন গুপ্তিল। প্রথম কিউয়ি ব্যাটসম্যান হিসাবে এক দিনের আন্তর্জাতিকে দু’শো করলেন তিনি। ভাঙলেন তাঁর নিজেরই ১৮৯ রানের রেকর্ড। একই সঙ্গে ভাঙলেন কয়েক দিন আগে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে গেইলের করা বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান। তবে এই রেকর্ডের জন্য সামান্য হলেও মার্লন স্যামুয়েলসকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত গুপ্তিলের। ইনিংসের তৃতীয় বলে তাঁর ক্যাচ ফেলেন স্যামুয়েলস। তবে ওই একটি ঘটনা বাদ দিলে গুপ্তিলের ইনিংস ছিল একেবারেই নির্ভুল। গোটা ইনিংসেই কেলেছেন কপিবুক শট।
৩৯৩ রান তাড়া করা যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে একেবারেই সহজ হবে না, তা ছিল দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট। এমনকী এক দিনের আন্তর্জাতিকে সফল ভাবে কখনওই ৩০০ তাড়া করেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবু ক্রিস গেইল নিয়ে একটি সন্দেহ ছিলই। ভাল শুরুও করেছিলেন গেইল। ৩৩ বলে ৬১ করার পথে মারেন আটটি ছয়। তবে উল্টোদিকে পর পর উইকেট পড়ায় তা বিশেষ কাজে লাগেনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল খুব তাড়াতাড়ি ম্যাচ শেষ করতে তারা মরিয়া। মাত্র ৩০ ওভারে ২৫০ রান করে গুটিয়ে যায় ক্যারিবিয়ান ইনিংস। এমনকী কিউয়ি ইনিংসের থেকে একটি ছয় বেশি মারেন তাঁরা। নিউজিল্যান্ডের হয়ে চার উইকেট নিয়ে বোলারদের তালিকায় ফের শীর্ষস্থানে উঠে এলেন ট্রেন্ট বোল্ট।
আগামী ২৪ তারিখ অকল্যান্ডে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হচ্ছে নিউজিল্যান্ড। কখনও বিশ্বকাপ ফাইনাল না খেলা নিউজিল্যান্ড, না চোকার্স তকমা লেগে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা— শেষ তারের বাধা কারা টপকায় সেটাই এখন দেখার।