ধৃত চুনিলাল। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হলেন এক যুবক। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে নীলরতন সরকার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এন্টালি থানার কনভেন্ট লেনে মঙ্গলবার রাতের এই ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই হামলা।
কী হয়েছিল ওই রাতে?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, রাত তখন সাড়ে ১১টা হবে। প্রচণ্ড গরমে বাড়ির বাইরে বসেছিলেন কনভেন্ট লেনের বাসিন্দা মহম্মদ মুস্তাকিম ওরফে বাবলু। ওই সময় তাঁর উপর কালো, বাপি এবং চুনিলাল নামে এলাকার তিন যুবক চড়াও হয় বলে অভিযোগ। প্রথমে মারধর এবং পরে বাবলুকে লক্ষ্য করে তিন রাউন্ড গুলি চালায় তারা। ছোড়া হয় বোমাও। তিনটি গুলির মধ্যে দু’টি বাবলুর গায়ে লাগে। এর পর তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, আক্রান্ত এবং আক্রমণকারী— উভয় পক্ষের সকলেই এলাকায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি তারা প্রোমোটিং ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। এলাকায় জমি দখলকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষ হয়েছে বলে তাঁদের দাবি। বাবলুর দাদা মহম্মদ কালিমুদ্দিন জানান, তাঁদের পরিবার তৃণমূল সমর্থক এবং বাবলু তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী।
তাঁর ভাইয়ের উপর কেন হামলা চালানো হল?
কালিমুদ্দিন বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই উল্টো দিকের কালো-বাপিরা হুমকি দিত বাবলুকে। আমাকেও বেশ কয়েক বার হুমকি দিয়েছে।’’ একটি নির্মীয়মান বাড়ির পাশে পড়ে থাকা জমিকে কেন্দ্র করেই বাপি-কালোদের সঙ্গে তাঁদের ঝামেলা চলছিল বলেই তাঁর দাবি।
অভিযুক্ত বাপির দিদি গুড়িয়া বেগমও দু’পক্ষের গণ্ডগোলের কথা মেনে নিয়েছেন। তাঁর কথায়: ‘‘ওদের মধ্যে বহু দিন ধরেই গণ্ডগোল চলছিল। বাবলু এবং আমার ভাই বেশ কিছু অসামাজিক কাজের সঙ্গে জড়িত। এরা সবাই তৃণমূল করে।’’ তাঁর আরও দাবি, বাবলু এবং তাঁর দাদা কালিমুদ্দিন দু’জনে এই মুহূর্তে এলাকায় তৃণমূলের বেশ প্রভাবশালী ব্যক্তি। পুর নির্বাচনের পর তাঁদের সেই ক্ষমতা আরও বেড়ে যায়। তার পর থেকেই বাপি-কালোদের আর তেমন একটা পাত্তা দিতেন না দুই ভাই। সেটাই গণ্ডগোলের সূত্রপাত বলে তিনি জানিয়েছেন। কালিমুদ্দিন যদিও জানিয়েছেন, বাবলুর উপর যারা আক্রমণ করেছে তারা এলাকায় কংগ্রেস সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
এটা কি তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব?
কনভেন্ট লেনটি কলকাতা পুরসভার ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দীপালি দাস বলেন, ‘‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। তাই কোনও মন্তব্য করাটা ঠিক হবে না।’’ তবে, ওই এলাকার তৃণমূল বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা কিন্তু মেনে নিচ্ছেন আক্রান্ত যুবক তাঁদের দলের সমর্থক। তিনি বলেন, ‘‘আহত যুবক আমাদের দলের সমর্থক। তবে, তাঁকে যারা মেরেছে তাদের পরিচয় আমরা এখনও জানতে পারিনি।’’
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় চুনিলাল নামে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে বুধবার শিয়ালদহ আদালতে তোলা হবে। তবে এটা কোনও রাজনৈতিক দলের গোষ্ঠী সংঘর্ষ কি না সে বিষয়ে পুলিশ মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।