সস্ত্রীক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। ছবি: এএফপি।
ভুল প্রমাণিত হল জনমত সমীক্ষা। ব্রিটেনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল কনজারভেটিভ দল। আবার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন ডেভিড ক্যামরন। এ নিয়ে দ্বিতীয় দফা। ৬৫০ আসনের ব্রিটিশ সংসদে এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত ফলে ৩৩০টি আসন দখল করেছে কনজারভেটিভ দল। লেবার-রা পেয়েছে ২৩২টি আসন। তবে ব্রিটেনের ৫৬তম সাধারণ নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চমক এসএনপি (স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি)। ৫৬টি আসন দখল করে তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এসেছে তারা।
ব্রিটেনের সংসদের নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে গেলে ৩২৬টি আসন পেতে হয়। কিন্তু এ বারের নির্বাচনে ৪টি আসন জয়ী সিন ফেন দল যেহেতু সংসদে বসে না এবং স্পিকার ভোট দেন না তাই ৩২৩টি আসন পেয়েই কনজারভেটিভ দল সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে গিয়েছে। পরাজয় স্বীকার করে লেবার দলের নেতা এড মিলিব্যান্ড দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, লেবারদের পক্ষে আজকের রাতটি কঠিন ও হতাশাজনক। তাঁর মতে, ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে তাঁর দল ভাল ফল করলেও স্কটিশ জাতীয়তাবাদের সামনে তাঁরা দাঁড়াতে পারেননি। এই ঝড়ে স্কটল্যান্ডের অন্যতম লেবার নেতা, এ বারের নির্বাচনে লেবার দলের অন্যতম মুখ এবং ছায়া (শ্যাডো) বিদেশ সচিব ডগলাস আলেকজান্ডার পরাজিত হয়েছেন। তাঁকে হারিয়ে দিয়েছেন বছর কুড়ির এসএনপি প্রার্থী মহাইরি ব্ল্যাক। মহাইরিই এ বার সবচেয়ে কম বয়সী সাংসদ। তবে মিলিব্যান্ড মনে করিয়ে দিয়েছেন, নতুন সরকারের সামনে প্রচুর বড় কাজ পড়ে আছে।
যদিও প্রতিটি জনমত সমীক্ষাই ইঙ্গিত দিয়েছিল ফল ত্রিশঙ্কু হবে। প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী, শাসক দল কনজারভেটিভ এবং প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির পাশাপাশি উঠে এসেছে উগ্র জাতীয়তাবাদী ইউকেআইপি-র নামও। লিবারাল ডেমোক্র্যাটরা দীর্ঘ দিন ব্রিটেনে তৃতীয় প্রধান দলের জায়গায় থাকলেও এ বারের সমীক্ষায় তাদের পিছনে ফেলেছে ইউকেআইপি। কিন্তু ফলাফলে তার কিছুই মিলল না।
স্কটল্যান্ডে কিছু দিন আগেই স্বাধীনতার প্রশ্নে ভোট হয়ে গিয়েছে। সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ব্রিটেনের থাকার পক্ষেই মত দেয়। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন স্কটল্যান্ডের স্থানীয় সংসদকে আরও আর্থিক এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়ার জন্য কমিটিও গঠন করেন। কিন্তু তার পরে বিশেষ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ। এ দিনের ফলাফলে তার প্রকাশ ঘটেছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। যদিও এসএনপি ব্রিটেনের সঙ্গে থাকার পক্ষে, তবুও স্কটল্যান্ডের বিভিন্ন দাবি নিয়ে এ বার সংসদে তারা সোচ্চার হবে। স্কটল্যান্ডে এসএনপি-র জয়ই লেবারদের ক্ষমতায় ফেরার আশায় জল ঢেলে দিয়েছে। স্কটল্যান্ডের বেশ কয়েকটি আসনে ২০ শতাংশের উপরে ভোট এসএনপি-র দিকে ‘স্যুইং’ করেছে। ফলে গত বারের থেকে ৪৯টি আসন বেশি পেয়েছে এসএনপি। লেবারের পাশাপাশি খুবই খারাপ ফল হয়েছে লিবারাল ডেমোক্র্যাটদের। তাদের ভাগ্যে এ পর্যন্ত জুটেছে আটটি আসন। এ বার তারা গত বারের থেকে ৪৬টি আসন কম পেয়েছে। লিবারাল ডেমোক্র্যাট নেতা লিক ক্লেগও দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট দল (ডিইউপি) পেয়েছে আটটি আসন। উগ্র জাতীয়তাবাদী ইউকেআইপি-র জুটেছে মাত্র একটি আসন। একটি আসন হারিয়ে সিন ফেন পেয়েছে চারটি আসন।
গ্লাসগোয় চলছে ভোটগণনা। ছবি: এএফপি।
নিজের কেন্দ্রে উইটনি থেকে জয়ী হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ক্যামরন। তিনি আবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন। এই জয়কে সঙ্ঘবদ্ধ ব্রিটেন এবং কনজারভেটিভদের অর্থনৈতিক নীতির জয় বলেই জানিয়েছেন ক্যামেরন। এ বার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্রিটেনের থাকার বিষয়ে জনভোট ডাকতে পারেন তিনি। পাশাপাশি অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নেও তাঁর সুবিধা হবে। তবে এসএনপি-র উপস্থিতি তাঁর কাজকে কঠিন করে তুলবে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আবার স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা বিষয়ে ভোট চাওয়া হতে পারে। এ দিনই ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের সঙ্গে দেখা করবেন ডেভিড ক্যামরন।
দল
আসন
প্রাপ্ত ভোট (শতাংশ)
আসন সংখ্যায় পরিবর্তন
(২০১০-এর নিরিখে)
কনজারভেটিভ
৩৩১
৩৬.৯
+২৩
লেবার
২৩২
৩০.৫
-২৬
স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (এসএনপি)
৫৬
৪.৮
+৫০
লিবারাল ডেমোক্র্যাট
৮
৭.৮
-৪৯
ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি
৮
০.৬
০
সিন ফেন
৪
০.৬
-১