পাড়ুই থানার অফিসার সাসপেন্ড, ওসি-কে সরাতে সুপারিশ কোর্টের

একই ব্যক্তিকে দু’বার গ্রেফতার করার ‘ভুল’-এর মাসুল চড়া মূল্যেই চোকাতে হল পাড়ুই থানার ওসি এবং তদন্তকারী অফিসারকে। তদন্তকারী অফিসারকে সাসপেন্ড করার পাশাপাশি পাড়ুই থানার ওসিকে পদ থেকে সরিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করতে নির্দেশ দিল আদালত। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে বিষয়টিকে হাইকোর্টের নজরে আনার কথাও বলেছেন বীরভূমের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার এই নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি, এ দিনই দুবরাজপুর, ইলামবাজার, শাহবাজপুর ও পাড়ুই থানা এলাকা থেকে আরও ৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৪ ১২:৫৮
Share:

আদালত ছাড়ছেন পাড়ুই থানার ওসি। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

একই ব্যক্তিকে দু’বার গ্রেফতার করার ‘ভুল’-এর মাসুল চড়া মূল্যেই চোকাতে হল পাড়ুই থানার ওসি এবং তদন্তকারী অফিসারকে। তদন্তকারী অফিসারকে সাসপেন্ড করার পাশাপাশি পাড়ুই থানার ওসিকে পদ থেকে সরিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করার সুপারিশ করল আদালত। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে বিষয়টিকে হাইকোর্টের নজরে আনার কথাও বলেছেন বীরভূমের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার এই সুপারিশ করেন তিনি। পাশাপাশি, এ দিনই দুবরাজপুর, ইলামবাজার, শাহবাজপুর ও পাড়ুই থানা এলাকা থেকে আরও ৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের ৫ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন সিজেএম। পাড়ুইয়ের মাখড়া গ্রামে শেখ তৌসিফ আলি ও তৃণমূল কর্মী শেখ মোজাম্মেলের খুনের ঘটনায় এদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত মোট ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম শেখ শান্তি, শেখ মুজিবর, আজিম শাহ, শেখ আবদুল্লা, শেখ আসরাফুল এবং শেখ আব্বাসউদ্দিন। এদের মধ্যে প্রথম তিন জনকে ইলামবাজারের ঘুড়িষা পঞ্চায়েত এলাকা থেকে ধরে পুলিশ। আবদুল্লাকে শাহবাজপুর, আসরাফুলকে দুবরাজপুরের খণ্ডগ্রাম এবং আব্বাসউদ্দিনকে পাড়ুই থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

মাখড়া গ্রামে সোমবার বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষের ঘটনায় চারটি এফআইআর দায়ের হয়। তারই মধ্যে একটি অভিযোগের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার রাতে পুলিশ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে আলি জিন্নাকে। জিন্না-সহ ধৃত ১০ জনকে পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন সিজেএম ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়। সেই আলিকেই পুলিশের স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় ফের গ্রেফতার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার সিজেএমের এজলাসে তোলে পুলিশ। পুলিশের এই ‘ভুল’ সম্পর্কে বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী। বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ বিচারক বিষয়টির ব্যাখ্যা চাইলে ভুল স্বীকার করে নেন পাড়ুই থানার ওসি। প্রশ্নের মুখে পড়ে বীরভূম পুলিশের ভূমিকা। শুধুমাত্র ভুল স্বীকার করেই যে বিষয়টির নিষ্পত্তি হবে না তা বুঝিয়ে দিয়ে বিচারক এ দিন জেলা পুলিশ সুপার, পাড়ুই থানার ওসি এবং তদন্তকারী অফিসারকে আদালতে ডেকে পাঠান। পারিবারিক কারণে পুলিশ সুপার আসতে না পারলেও আদালতে উপস্থিত ছিলেন ডিএসপি। মামলাটির প্রসঙ্গ তুলে পুলিশের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন বিচারক। এর পরেই যে মামলায় জিন্না পুলিশি হেফাজতে ছিল, সেই মামলার তদন্তকারী অফিসারকে সুপারিশ করেন তিনি। একই সঙ্গে পাড়ুই থানার ওসিকে সরিয়ে দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ন্যূনতম ডিএসপি পদ মর্যাদার অফিসারকে দিয়ে বিভাগীয় তদন্তের সুপারিশ করেন তিনি। সতর্ক করা হয় আর এক তদন্তকারী অফিসারকেও। বিচারক বলেন, “শুধুমাত্র সতর্ক করে ছেড়ে দিলে সঠিক বিচার হবে না। সমাজের কাছে ভুল বার্তা যাবে। অত্যন্ত খারাপ কাজ করেছে পুলিশ।” এসপি-র কাছে তিনি জানতে চান, এই ধরনের অফিসারকে নিয়ে কী ভাবে পুলিশের কাজ চলছে?

Advertisement

ঘটনাটি নিয়ে পুলিশের ভুমিকার সমালোচনা করেছে বিরোধীরাও। এই সুপারিশকে স্বাগত জানিয়ে সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম বলেন, “লজ্জা থাকলে এই রায় থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত্ পুলিশ এবং সরকারের। বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও হুঁশ ফিরছে না পুলিশের।” কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নানের মতে, “শাসকের তল্পিবাহক হতে হতে মেরুদণ্ড হারিয়েছে পুলিশ। স্বয়ং ডিজি-ও ভর্তসিত হয়েছেন আদালতে। ন্যায় অন্যায়ের বোধ হারিয়েছে পুলিশ।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement