অমিতের ফোনে হাজির উদ্ধব, শপথ ফডণবীসের

স্রেফ একটা টেলিফোন! আর তাতেই পাল্টে গেল অনিশ্চয়তার ছবিটা! বিধানসভা ভোটের ফল বেরনোর পর থেকেই মহারাষ্ট্রের ক্ষমতার ভরকেন্দ্র নিয়ে বিতর্ক চলছিলই। ‘একলা চলো’ নীতি নিয়ে চললেও একক ভাবে বিজেপি যে এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে পারছে না, তা জানার পরেই নানাবিধ রাজনৈতিক সমীকরণ চলছিল। চলছিল নানা হিসেবনিকেশ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৪ ১৬:০৬
Share:

নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে দেবেন্দ্র ফডণবীস।

স্রেফ একটা টেলিফোন!

Advertisement

আর তাতেই পাল্টে গেল অনিশ্চয়তার ছবিটা!

বিধানসভা ভোটের ফল বেরনোর পর থেকেই মহারাষ্ট্রের ক্ষমতার ভরকেন্দ্র নিয়ে বিতর্ক চলছিলই। ‘একলা চলো’ নীতি নিয়ে চললেও একক ভাবে বিজেপি যে এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে পারছে না, তা জানার পরেই নানাবিধ রাজনৈতিক সমীকরণ চলছিল। চলছিল নানা হিসেবনিকেশ। মুখ্যমন্ত্রী পদে দেবেন্দ্র ফডণবীসের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ‘অপমানিত’ শিবসেনা। কিন্তু শুক্রবার অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা আগে এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়ে উদ্ধব ঠাকরেকে ফোন করেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। বরফ গলল ওই এক ফোনেই। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার পাশাপাশি বিজেপিকে সমর্থনের সিদ্ধান্তও নিল শিবসেনা। আর এই পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যেই শপথ নিলেন দেবেন্দ্র ফডণবীস।

Advertisement

মহারাষ্ট্রের প্রথম বিজেপি সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেন প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ বলিউড তারকা, শিল্পপতি এবং অন্য রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তায় হাজির ছিলেন পুলিশ, কম্যান্ডো, বেসরকারি রক্ষী-সহ হাজার তিনেক নিরাপত্তাকর্মী। উপস্থিত ছিলেন একনাথ খাডসে, বিনোদ তাওডে, চন্দ্রশেখর পাতিল-সহ একাধিক রাজ্য বিজেপি নেতা। উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত বিজেপি নেতা গোপিনাথ মুণ্ডে কন্যা পঙ্কজা মুণ্ডেও।

নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর সরকার গঠনের টানাপড়েন তো ছিলই, তার সঙ্গে গোদের উপর বিষফোড়ার মতো সৃষ্টি হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে বিতর্ক। প্রথম থেকেই দেবেন্দ্র ফডণবীস মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড়ে এগিয়েছিলেন। কিন্তু বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ ফডণবীসকে সমর্থনে নারাজ ছিলেন। জল্পনা শুরু হয় দৌড়ে নিতিন গডকড়ীর সামিল হওয়া নিয়ে। অবশেষে সেই আশঙ্কায় জল ঢালেন স্বয়ং গডকড়ী। তিনি জানান, দিল্লিতে কাজ করেই তিনি খুশি, মরাঠা মুলুকে ফিরে আসার ইচ্ছে নেই। রাজ্য নেতৃত্বের উদ্দেশে তাঁর এই ঘোষণা দেবেন্দ্রর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পথ আরও মসৃণ করে। ‘ডিবেট মাস্টার’ দেবেন্দ্র বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি নিতিনের খুবই ঘনিষ্ঠ। নিতিন গডকড়ীর হাত ধরেই রাজনীতির পথে উত্তরণ তাঁর। স্থানীয় এই নেতার বাগ্মীতা রাজ্যে বিজেপির এই সাফল্যের ক্ষেত্রে অনেকটাই সাহায্য করেছে বলে মনে করেন অনেকেই। একক ভাবে না হলেও বিজেপি-র এই জয়ে তিনিও যে অন্যতম কাণ্ডারি সে কথা বলাই বাহুল্য।

নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই বিজেপির একটা লক্ষ্য ছিল যাতে স্থায়ী সরকার গঠন করা যায়। গত বছরেই দিল্লিতে সরকার গঠন নিয়ে যে টানাপড়েন তৈরি হয়, তার এখনও কোনও সমাধান সূত্র মেলেনি। তৈরি হয়নি কোনও স্থায়ী সরকার। সে কথা মাথায় রেখেই মহারাষ্ট্রের ক্ষেত্রে স্থায়ী সরকার গড়তেই উদ্যোগী হয় বিজেপি।


প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।

গত ১৫ অক্টোবর থেকে মরাঠা মুলুকে সিংহাসন দখলে যে পাঁচমুখী লড়াই হয়েছিল বুথ ফেরত সমীক্ষা থেকে শুরু করে ফল প্রকাশ— সব ক্ষেত্রেই ‘গেরুয়া ঝড়’-এর তাণ্ডব চোখে পড়ে। এই ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় রাজনৈতিক সমীকরণও। ‘একলা চলো’ নীতিতে ভর করে মরাঠা সাম্রাজ্যে আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হলেও মসনদে পৌঁছতে একমাত্র বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল ২৩ সংখ্যা। আর এই সংখ্যাকে ঘিরেই শুরু হয় রাজনৈতিক ডামাডোল। সুযোগ বুঝে আসরে নামে শরদ পওয়ারের এনসিপি। কারণ, বিজেপি-শিবসেনার মতোই তারাও ছিল জোটমুক্ত দল। তাই দুই প্রাক্তন সঙ্গীর বিচ্ছেদে শরদ যে নিজের ‘পাওয়ার’ ব্যবহার করবেন এটা আঁচ করতে পেরেছিলেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা। বিজেপি-শিবসেনার ‘দড়ি টানাটানি’র সুযোগ নিয়ে তড়িঘড়ি সরকার গঠনে বাইরে থেকে বিজেপিকে সমর্থনের প্রস্তাব দেয়। শিবসেনা রাজ্যে দ্বিতীয় দল হিসাবে উঠে এলেও প্রাক্তন জোটসঙ্গীকে বিশেষ ‘পাত্তা’ না দিয়ে সরকার গঠনে উদ্যোগী হয় বিজেপি। পরিস্থিতি প্রতিকূল দেখে বিজেপির পক্ষ থেকে যাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী করা হবে তাঁকেই সমর্থন করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে শিবসেনা। কিন্তু মন্ত্রিসভার পদ বণ্টন নিয়ে ফের মনোমালিন্য হয় দুই বন্ধুর। ‘পদে পদে অপমান করা’র অভিযোগে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় সেনা। কিন্তু ছবিটা পাল্টে গেল এ দিন দুপুরেই।

ছবি: এএফপি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement