নেপালে ফের ভূমিকম্পে মৃত ৪২, ভারতেও ১৭ জন মৃত

আবার ভূমিকম্প। এবং এ বারও উত্সস্থল নেপাল। কাঠমান্ডু থেকে প্রায় ৮৩ কিলোমিটার পূর্বে নেপাল-চিন সীমান্তের ঝাম-এ ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে ১৮ কিলোমিটার গভীরে এই কম্পনের কেন্দ্রস্থল। রিখটার স্কেলে তীব্রতা ছিল ৭.৪। মঙ্গলবার বেলা ১২টা ৩৫ নাগাদ এই ভূমিকম্প হয়। কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে কম্পন অনুভূত হয় এ দিন। এমনকী, দিল্লি-সহ উত্তর, মধ্য এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকাও কেঁপে ওঠে। এর পরে বেশ কয়েকটি আফটার শক হয়, তবে তার তীব্রতা কম ছিল।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৫ ১৩:০৪
Share:

পথে নেমে এসেছে আতঙ্কিত মানুষ। মধ্য কলকাতায় একটি শপিং মলের সামনে সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

আবার ভূমিকম্প। এবং এ বারও উত্সস্থল নেপাল।

Advertisement

কাঠমান্ডু থেকে প্রায় ৮৩ কিলোমিটার পূর্বে নেপাল-চিন সীমান্তের ঝাম-এ ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে ১৮ কিলোমিটার গভীরে এই কম্পনের কেন্দ্রস্থল। রিখটার স্কেলে তীব্রতা ছিল ৭.৪। মঙ্গলবার বেলা ১২টা ৩৫ নাগাদ এই ভূমিকম্প হয়। কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে সেই কম্পন অনুভূত হয় এ দিন। এমনকী, দিল্লি-সহ উত্তর, মধ্য এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকাও কেঁপে ওঠে। পরে বেশ কয়েকটি আফটার শক হয়, তবে তার তীব্রতা কম ছিল।

এ দিনের ভূমিকম্পে ফের বিপর্যস্ত নেপাল। সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে সে দেশে। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, চৌতারায় বাড়ি চাপা পড়ে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন হাজারখানেক মানুষ।

Advertisement

ভূমিকম্পে এ দিন প্রবল ভাবে কেঁপে ওঠে কলকাতা। অফিসের ব্যস্ত সময়ে সকলেই রাস্তায় নেমে আসেন। বন্ধ হয়ে যায় মেট্রো চলাচল। যাত্রীদের নিরাপদে বাইরে বের করে দেওয়া হয়। পরে পাইলট মেট্রো চালিয়ে লাইনের অবস্থা খতিয়ে দেখে প্রায় ৪৫ মিনিট পর ফের পরিষেবা চালু হয়। কর্তৃপক্ষের দাবি, এ দিন বেলা পৌনে একটা থেকে সওয়া একটা পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা বন্ধ ছিল। কম্পন টের পেতেই রাস্তাঘাট মুহূর্তের মধ্যে জনারণ্যে পরিণত হয়। খালি করে দেওয়া হয় অফিসবাড়িগুলি। শপিং মলগুলিতেও একই দৃশ্য দেখা যায়। কলকাতার পাশাপাশি গোটা রাজ্যে এ দিনের কম্পন প্রবল ভাবে অনুভূত হয়। এ ছাড়া উত্তরপ্রদেশ থেকে ওড়িশা, অসম থেকে দিল্লি সর্বত্রই কম্পন টের পাওয়া গিয়েছে। দিল্লিতে মেট্রো পরিষেবা প্রায় আধ ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়। নেপাল সীমান্ত ঘেঁষা বিহারে এ দিনের ভূমিকম্পে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর। উত্তরপ্রদেশে এক জনের মৃত্যু হয়। লখনউতে কম্পনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, ঘরবাড়ির দরজা-জানলার কাচ ভেঙে পড়ে। গুজরাতের আমদাবাদও এ দিন কেঁপে ওঠে।

এর আগে গত ২৫ এপ্রিলের ভয়াবহ ভূমিকম্পে নেপালে প্রাণ হারিয়েছিলেন প্রায় আট হাজার মানুষ। আহতের সংখ্যাও ১৭ হাজার ছাড়িয়ে যায়। বহু ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ে। এখনও সেই ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেনি নেপাল। পুরোদমে চলছে ত্রাণকার্য। স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঝাঁপিয়ে পড়েছে। মার্কিন ভূতত্ত্ব সংস্থা (ইউএসজিএস) ওই দিন জানিয়েছিল, পোখরার লোপজাঙে জন্ম নেওয়া ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭.৯। মূল ভূমিকম্পের পরে বেশ কয়েক বার আফটার-শকে কেঁপে উঠেছিল মাটি। তার প্রভাবেও কেঁপে ওঠে এ দেশের বিভিন্ন জায়গাও। উত্তরপ্রদেশ-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এ রাজ্যে মারা যান তিন জন। হিমালয় পর্বতমালার ভূস্তরের নীচে ভারতীয় ও ইউরেশীয় পাতের ঠোকাঠুকিতে মাঝেমধ্যেই ভূমিকম্প হয়। তার মধ্যে কয়েকটি অঞ্চল সব থেকে বেশি ভূকম্পপ্রবণ বলে চিহ্নিত। ওই দিন দুই পাতের সংঘাতেই ভূমিকম্প হয়।

সেই আতঙ্কের রেশ কাটতে না কাটতেই এ দিন ফের কেঁপে উঠল নেপাল। ভূমিকম্প টের পাওয়া মাত্রই বন্ধ করে দেওয়া হয় কাঠমান্ডু বিমানবন্দর। আতঙ্কে শহরবাসী ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদেরও বের করে বাইরে খোলা জায়গায় নিয়ে আসা হয়। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ঝামের খুব কাছেই এভারেস্ট বেস ক্যাম্প।

এ দিন দুপুরে কেঁপে ওঠে দিল্লির সংসদ ভবনও। ভূমিকম্পের প্রভাব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। ত্রাণ এবং উদ্ধার কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে তিনি প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমান জানার চেষ্টা চলছে। সরকার যে কোনও রকম পরিস্থিতির মোকাবিলায় তৈরি। এমনকী, নেপালকে সব রকম সাহায্যও করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। নেপালে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তিনি কথা বলেন বলে স্বারাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর। দিল্লির মৌসম ভবন সূত্রে জানানো হয়েছে, এ দিনের ভূমিকম্পের পর আগামী কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে আফটার শক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গাজিয়াবাদ, গুয়াহাটি, পটনা, কলকাতা এবং ভাটিন্ডায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর আঞ্চলিক দফতরগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে।

নেপালে ভারতীয় দূতাবাসের হেল্পলাইন নম্বর +৯৭৭ ৯৮৫১১০৭০২১ এবং +৯৭৭ ৯৮৫১১৩৫১৪১

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement