খড়্গপুরে খরিদার তৃণমূল কার্যালয়ে চার বিজেপি কাউন্সিলরের তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর। ছবি রামপ্রশাদ সাউ।
বিজেপি ভেঙে চার কাউন্সিলর এলেন তৃণমূলে। ফলে, রেলশহর খড়্গপুরে পুরবোর্ড গঠনের এক সপ্তাহ আগে বৃহত্তম দল হয়ে উঠল তৃণমূল।
৪ জুন খড়্গপুরে পুরবোর্ড গঠন। তার আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে খরিদার তৃণমূল কার্যালয়ে জেলা নেতৃত্বের উপস্থিতিতে বিজেপির টিকিটে জয়ী রেল মাফিয়া শ্রীনু নায়ডুর স্ত্রী পূজা নায়ডু, সুনিতা গুপ্ত, লক্ষ্মী মুর্মু এবং জগদম্বা গুপ্ত দলবদল করেন। ক’দিন আগে পর্যন্তও এঁরা তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলছিলেন। পূজা প্রার্থী হওয়ার পরই বোমাবাজির ঘটনায় শ্রীনু গ্রেফতার হওয়ায় অভিযোগ উঠেছিল, তৃণমূল পুলিশকে দিয়ে এ সব করাচ্ছে। ভোটের ফলপ্রকাশের পরে আবার ২১ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী জগদম্বার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা রুজু হয়। তখনও বিজেপি-র অভিযোগ ছিল, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে তাদের কাউন্সিলরকে। গত রবিবার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুনিতা গুপ্তের স্বামী রাজুকে লক্ষ করে গুলি ছোড়াতেও নাম জড়ায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় প্রাণে বাঁচেন রাজু। তারপরই বাম-কংগ্রেস-বিজেপি একজোট হয়ে পথে নামে। বিজেপি কর্মী রাজুও এ দিন তৃণমূলে ভিড়েছেন।
এত কিছুর পরেও তৃণমূলে কেন?
পূজা, জগদম্বা, সুনীতাদের ব্যাখ্যা, “রাজ্যে তৃণমূলের সরকার চলছে। তাই মানুষকে পরিষেবা দিতে গেলে তৃণমূলের হাত ধরা উচিত বলে মনে করেছি।” যদিও বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “এক দিকে, কাউন্সিলরদের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়েছে দুষ্কৃতীরা। অন্য দিকে, টাকার ব্যাগ নিয়ে হাজির হয়েছেন তৃণমূল নেতারা। আর পুলিশ তাতে মদত দিয়েছে। তাই এই নতি স্বীকার স্বাভাবিক।’’ সিপিএমের জোনাল সদস্য অনিল দাসেরও মত, “দুষ্কৃতীদের হুমকির কাছে নতি স্বীকার করেছেন ওই কাউন্সিলররা।”
তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষের দাবি, ‘‘খড়্গপুরে তিনটি দলের নীতিহীন জোট বিজেপি-র এই কাউন্সিলররা মানতে পারেননি। তাই উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের সঙ্গে এসেছেন।’’
৩৫ আসনের খড়্গপুর পুরসভার ফল হয়েছিল ত্রিশঙ্কু। কংগ্রেস ও তৃণমূল ১১টি করে আসন পেয়েছিল। বামেরা জেতে ৬টিতে আর বিজেপি পায় ৭টি আসন। এ দিন দলবদলের পরে তৃণমূলের আসন বেড়ে দাঁড়াল ১৫। ফলে, বৃহত্তম দল হিসেবে বোর্ড গঠনে অগ্রাধিকার পাবে তৃণমূল। কিন্তু তাতে বোর্ড গঠন নিশ্চিত হচ্ছে না। কারণ, জহরলালের নাম মামলায় জড়ানোয় তিনি ভোটাভুটিতে যোগ দিতে পারবেন না। ফলে, তৃণমূলের সংখ্যা কমে দাঁড়াল ১৪। অন্য দিকে, বামেদের সমর্থন চেয়েছে কংগ্রেস। সে ক্ষেত্রে জোটের আসন হবে ১৭। তা ছাড়া, বিজেপি-র তিন কাউন্সিলর ভোটাভুটিতে কোন দিকে যান, সেটাও দেখার। এই সব অঙ্কের প্রেক্ষিতেই শহর কংগ্রেস সভাপতি অমল দাস এ দিন বলেন, “বোর্ড গঠনের ব্যাপারে আমরা এখনও আশাবাদী।”