সিভিল ইঞ্জিনিয়ার সংগৃহীত ছবি
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তিবিদ্যার এমন একটি শাখা, যার চাহিদা বিশ্বজুড়ে। এবং তা কখনওই কমবে না। সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে নির্মাণগত নানা রকম পরিকল্পনা, নকশা, প্রকৌশল নির্ধারণ এবং নির্মিত পরিকাঠামোগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকেন সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা। যাঁরা এই বিষয়ে নিজেদের কেরিয়ার গড়তে আগ্রহী, তাঁদের জন্য এখানে এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করা হবে।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকা ও দায়িত্ব:
সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা বিভিন্ন গণপরিবহণ ব্যবস্থা, রাস্তা, সেতু, বাড়ি, এয়ারপোর্ট, বাঁধ, জল সরবরাহ ব্যবস্থা ইত্যাদির পরিকল্পনা, নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকেন। তাঁদের কাজ হল--
১. সরকারি ও বেসরকারি পরিকাঠামো নির্মাণ, ও রক্ষণাবেক্ষণ করা।
২. দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলিকে বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করা।
৩. সার্ভে রিপোর্ট,ম্যাপ ও অন্যান্য তথ্য ঘেঁটে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী কোনও প্রকল্প প্রস্তুত করা।
৪. ডিজাইন সফটওয়ারের সাহায্যে সংবহণ ব্যবস্থা ও হাইড্রোলিক ব্যবস্থার পরিকল্পনা করা ও নকশা আঁকা।
৫. নির্মাণ কাজে ব্যয় ও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা।
৬. অনেক প্রকল্পের ক্ষেত্রে স্থানীয়, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরে অনুমতি গ্রহণ করা।
৭. মাটি ও নির্মাণ সামগ্রী পরীক্ষা করা।
কোর্স:
আগ্রহী প্রার্থীরা এই বিষয়ে ৪ বছরের বিটেক ডিগ্রি ও তার পর ২ বছরের এমটেক ডিগ্রির পড়াশুনো করতে পারেন। এ ছাড়া, কিছু কলেজে এই বিষয়ে ১-২ বছরের ডিপ্লোমাও পড়ানো হয়।
বিটেক ডিগ্রির জন্য যোগ্যতা :
শিক্ষার্থীদের দ্বাদশে কোনও স্বীকৃত বোর্ড থেকে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও অঙ্ক নিয়ে মোট ৪৫-৫০ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করতে হবে। এর পর বিভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা, যথা-জয়েন্ট এন্ট্রান্স মেন, জয়েন্ট এন্ট্রান্স অ্যাডভান্সড, পশ্চিমবঙ্গ জয়েন্ট, এমএইচটি সিইটি, বিটস্যাট-এর মতো পরীক্ষায় পাশ করে কলেজগুলির বিটেক কোর্সে ভর্তি হওয়া যাবে।
এমটেক ডিগ্রির জন্য যোগ্যতা:
যে শিক্ষার্থীরা ন্যূনতম পাশ নম্বর নিয়ে বিটেক ডিগ্রিটি পাশ করবেন, তাঁরা এর পর এমটেক কোর্সটি করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রেও গেট পরীক্ষার মতো প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতেই তাঁদের ভর্তি করা হবে।
ডিপ্লোমার জন্য যোগ্যতা:
যাঁরা দশম শ্রেণিতে ইংরেজি,বিজ্ঞান ও গণিত সহযোগে ন্যূনতম ৪৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করবেন, তাঁরা এই বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স করতে পারবে।
প্রয়োজনীয় দক্ষতা/ গুণাবলি:
১. গণিত বিষয়ে দক্ষতা
২. টেকনিক্যাল দক্ষতা
৩. বিশ্লেষণী ও সমালোচনামূলক চিন্তাধারা
৪. সমস্যা সমাধানের দক্ষতা
৫. খুঁটিয়ে দেখার দৃষ্টি
৬. সময়ের যথাযথ ব্যবহার
৭. দলগত ভাবে কাজ করতে পারার ক্ষমতা
৮. পরিকল্পনা করার ও কল্পনা করার ক্ষমতা
৯. জ্ঞান আহরণের ইচ্ছা
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের প্রকারভেদ:
১. স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার: যাঁরা বাড়ি, সেতু, রেললাইন নির্মাণের নকশা আঁকেন ও পরিকল্পনা করেন।
২.এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার: যাঁরা প্রযুক্তির সাহায্যে পরিবেশের বিভিন্ন সমস্যা যেমন দূষণ ও জমি অধিগ্রহণের সমস্যা সমাধান করে নির্মাণ কাজ করেন।
৩. ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ার: যাঁরা পরিবহণ ব্যবস্থা যেমন-রাস্তা, সেতু, রেললাইন সংক্রান্ত প্রজেক্টগুলি দেখাশোনা করেন।
৪. ওয়াটার ইঞ্জিনিয়ার: যাঁরা জলাশয় ও অন্যান্য সম্পদকে অবিকৃত রেখে কী ভাবে খরা বা বন্যা প্রতিরোধ করা যায়, সে সমস্ত বিষয়গুলি দেখেন।
৫. জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার: যাঁরা মাটি ও পাথর সংক্রান্ত তথ্যাদি পর্যালোচনা করে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কৌশলগত দিকগুলিকে কাজে লাগান। এই বিষয়টির জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় ভূতত্ত্বের বিষয়েও জানতে হয়।
চাকরির ক্ষেত্র:
এই বিষয় পড়ে শিক্ষার্থীরা সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিমানবন্দর, সুড়ঙ্গ, সেতু, দমকল পরিষেবা, খনি,বন্দর, রেল-এর মতো ক্ষেত্রগুলিতে চাকরি পেতে পারেন। এ ছাড়াও , বিভিন্ন আর্কিটেকচারাল ফার্ম, বিশ্ববিদ্যালয়, কনসালটেন্সি ফার্মেও চাকরি পেতে পারেন শিক্ষার্থীরা।
যে উল্লেখযোগ্য সরকারি কোম্পানিগুলিতে চাকরির সুযোগ রয়েছে:
১.ন্যাশনাল বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন
২. পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড
৩. আরএনভিএল রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড
৪. ভারত পেট্রোলিয়াম
৫. এনএইচপিসি এবং অন্যান্য
যে উল্লেখযোগ্য বেসরকারি কোম্পানিগুলিতে চাকরির সুযোগ রয়েছে :
১. এল অ্যান্ড টি ইন্ডিয়া লিমিটেড
২. লোধা গ্রুপ
৩. ডাব্লিউএস অ্যাটকিন্স কোম্পানি লিমিটেড
৪. ফ্লুওর কর্পোরেশন
৫. একম কর্পোরেশন এবং অন্যান্য
বেতন কাঠামো:
এই বিষয় নিয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা গোড়াতেই চাকরিক্ষেত্রে বছরে আনুমানিক ৩ লক্ষ টাকার উপর রোজগার করতে পারেন। তবে অবশ্যই এই আনুমানিক বেতনটি অভিজ্ঞতা, কোম্পানি, সরকারি না বেসরকারি ক্ষেত্র ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভর করবে।
ভারতে এই বিষয়টি পড়ার জন্য উল্লেখযোগ্য কলেজগুলি হল:
১. আইআইটি মাদ্রাজ
২. আইআইটি দিল্লি
৩. আইআইটি বম্বে
৪. আইআইটি কানপুর
৫. আইআইটি খড়্গপুর
পশ্চিমবঙ্গে এই বিষয়টি পড়ার জন্য উল্লেখযোগ্য কলেজগুলি হল:
১. যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
২. আইআইইএসটি শিবপুর
৩. হেরিটেজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি
৪. আইআইটি খড়গপুর
৫. টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি
উপরোক্ত সমস্ত তথ্য যাচাই করে শিক্ষার্থীরা এই বিষয়ে তাঁদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারেন।