Bengal Reruitment case

একক মুচলেকা নয়, ‘অযোগ্য’দের নাম প্রকাশ করতে চলেছে খোদ সরকারই

চলতি সপ্তাহে ‘অযোগ্য’ শিক্ষকদের তালিকা ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর আদালতের নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে প্রকাশে আনবে শিক্ষা দফতর।

Advertisement

অরুণাভ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২৪ ১৭:০২
Share:

আন্দোলনরত যোগ্য শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র।

সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে মুচলেকা দিয়ে স্কুলে যোগ দিতে হবে তাঁদের। চলতি মাসের ৩ তারিখ থেকে স্কুল খুলে গিয়েছে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের জন্য। আজ, সোমবার স্কুলের পঠন-পাঠন শুরু হয়েছে লম্বা ছুটির পরে। এক সপ্তাহ আগে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা স্কুলে যোগ দিলেও তাঁরা মুচলেকা দিয়ে যোগদান করেনি স্কুলে। সরকারি স্তরে এই সংক্রান্ত কোনও নির্দেশিকা দেওয়া হয়নি মুচলেকা নিয়ে। এতে আদালতের নির্দেশ অবমাননা হবে কি না, তা নিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। সূত্রের খবর, বিতর্ক এবং আদালত অবমাননা এড়াতে চলতি সপ্তাহেই শিক্ষা দফতরের তরফ থেকে সংবাদমাধ্যমে সিবিআই ও এসএসসির চিহ্নিত 'অযোগ্য' শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে।

Advertisement

বিকাশ ভবনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই এই তালিকা নিয়ে শনিবার বৈঠক হয়েছে। আদালতের নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে চলতি সপ্তাহে অযোগ্য শিক্ষকদের তালিকা ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রকাশ্যে আনবে শিক্ষা দফতর।

কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৬ স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) প্যানেলে থাকা ২৬ হাজার ৫৭৩ জন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি চলে যায়। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা। শীর্ষ আদালতের অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের ফলে আপাতত চাকরি বহাল রয়েছে তাঁদের। তবে শীর্ষ আদালত শর্ত দিয়েছে, যত দিন বিচার প্রক্রিয়া চলবে, তত দিনই চাকরিতে বহাল থাকবেন সবাই। পরে যাঁদের বিরুদ্ধে বেআইনি নিয়োগের অভিযোগ প্রমাণিত হবে, তাঁদের শুধু চাকরি বাতিল হবে না, ফেরত দিতে হবে বেতনের টাকাও। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই উল্লেখ করা আছে, যখন তাঁরা স্কুলে যোগ দেবেন তখন এই বেতন ফেরত দেওয়া সংক্রান্ত মুচলেকাও জমা দিতে হবে।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতেই এ বার 'অযোগ্য' শিক্ষকদের তালিকা প্রকাশ করার পথে হাঁটছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর।

এ প্রসঙ্গে 'যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ২০১৬ অধিকার মঞ্চ'-র পক্ষে মেহবুব মণ্ডল বলেন, “যাঁরা অবৈধ ভাবে নিযুক্ত হয়েছেন, তাঁদের আদালতের নির্দেশ মানতে হবে। তাঁদের জন্য যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা বিপদে পড়েছেন। সরকারের কোন‌ও গাফিলতিতে আমরা যদি বিপদে পড়ি, সে ক্ষেত্রে রাস্তায় নেমে যেমন আন্দোলন হবে, আইনি পথেও আন্দোলন জারি থাকবে।” অন্য দিকে, 'শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ'-এর সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারীর প্রশ্ন, “কোর্টের কাছে যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা পেশ না করে আলাদা ভাবে অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ্যে আনার প্রস্তুতি চলছে। সুপ্রিম কোর্টের কাছে কেন যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা পেশ করছে না এসএসসি?” তাঁর দাবি, এখানেই আসল সমস্যার সমাধান লুকিয়ে। তাই এই লুকোচুরি খেলা বন্ধ হোক। যোগ্যদের বিদ্যালয়ে সসম্মানে বহাল রাখা হোক এবং বঞ্চিত যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ করা হোক। আর নিয়মিত এসএসসির মাধ্যমে স্বচ্ছ ভাবে নিয়োগের ব্যবস্থা করা হোক।

অবৈধ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা স্কুলে যোগদান করলেও শিক্ষা দফতর কোন‌ও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করায় ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। কারা এই মুচলেকা নেবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রধান শিক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, যদি সরকার নির্দেশ না মানে, তাহলে আদালত অবমাননার দায় পড়বে সরকারের ঘাড়ে। তাই ভোট মিটতেই আদালতের নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে তড়িঘড়ি শিক্ষা দফতর নিজেই অযোগ্য শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীদের তালিকা প্রকাশ করতে চলেছে।

'বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি'র সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যে সব চিহ্নিত অযোগ্য শিক্ষক শিক্ষাকর্মী আছেন, তাঁদের মুচলেকার ব্যাপারে সরকার এখনও উদাসীন দেখে অবাক হচ্ছি। তবে তাঁদের ব্যাপারে যে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে বলে শোনা যাচ্ছে, তা সদর্থক। সরকারকে এটা সব সময়ে মনে রাখতে হবে যে যোগ্য -অযোগ্য আলাদা না করলে প্রকৃত যোগ্যদের চাকরি বাঁচানো মুশকিল হবে এবং তার পরিণাম হবে ভয়ানক।”

প্রধান শিক্ষকের একাংশ মনে করছেন, বেআইনি নিয়োগ কাদের হয়েছে, তা স্পষ্ট নয় এখন‌ও। ফলে কোন শিক্ষককে তার নিয়োগ বেআইনি ভাবে হয়েছে বলে মুচলেকা দেওয়া হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছেই। তাই সরকারের তালিকা প্রকাশ করা অনেকটাই যুক্তিযোগ্য।

প্রসঙ্গত, শীর্ষ আদালতে দাবি করা হয়েছিল, গরমিল ধরা পড়েছে মোট ৮৩৩৪ জনের ক্ষেত্রে। পরবর্তীকালে স্কুল সার্ভিস কমিশন যখন তথ্য যাচাই করে, তখন দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রেই একই নাম রয়েছে অনেক বার বা অনেকে নিয়োগপত্র হাতে পায়নি কিংবা কাজে যোগদান করেনি। তার পরে সেই সংখ্যাটি এসে দাঁড়ায় ৫৭৫৩ জনে। অবৈধ ভাবে নিয়োগ হয়েছে বলে চিহ্নিত, এই ব্যক্তিদেরই নামের তালিকা প্রকাশ করতে চলেছে সরকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement