75 Years celebration

৭৫ বছর উদ্‌যাপনে র‍্যালি শহরতলির স্কুলে, বিশেষ কর্মসূচিতে শামিল অভিভাবক এবং প্রাক্তনীরাও

১৯৫০ সালে ১৬ জানুয়ারি ছোট কুঁড়ে ঘরের ছাউনিতে গুটি কয়েক পড়ুয়াকে নিয়ে শুরু হয়েছিল পথচলা। বর্তমানে স্কুলে তৈরি হয়েছে একাধিক বিষয়ের পৃথক ল্যাব, চালু হয়েছে ইংরেজি মাধ্যমের পড়াশোনাও।

Advertisement

স্বর্ণালী তালুকদার

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৪৬
Share:

পড়ুয়ার হাতে মশাল তুলে দেন স্কুলের বর্তমান এবং প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক। নিজস্ব চিত্র।

৭৫ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে সেজে উঠেছে উষুমপুর আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়। উত্তর ২৪ পরগনার আগরপাড়ার এই স্কুলে বাংলা মাধ্যমে পঠনপাঠনের সুবিধা পায় দেড় হাজারের বেশি পড়ুয়া। শহরতলি এবং পার্শ্ববর্তী শিল্পাঞ্চলের বাচ্চাদের জন্য চলতি বছর থেকে শুরু হয়েছে ইংরেজি মাধ্যমও। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৌমিক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, দেরিতে সরকারি অনুমোদন পাওয়ায় আপাতত ষষ্ঠ শ্রেণিতেই হবে ইংরেজি মাধ্যমের ক্লাস। পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ থেকে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস করানো হবে উভয় মাধ্যমে।

Advertisement

৭৫ তম বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। নিজস্ব চিত্র।

স্কুলের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে টানা চার দিন বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। ১৫ জানুয়ারি স্কুলের তরফে সমস্ত পড়ুয়া, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং পরিচালন সমিতির সদস্যদের নিয়ে র‍্যালির আয়োজন করা হয়েছিল। তাতে অংশগ্রহণ করেছিলেন অভিভাবক, স্কুলের প্রাক্তনী-সহ স্থানীয় বাসিন্দারাও। পতাকা উত্তোলন এবং মশাল জ্বালিয়ে র‍্যালির সূচনা করা হয়। প্রতিটি ক্লাসের পড়ুয়ারা সাম্প্রতিক বিষয়ে নিজস্ব ভাবনা প্রকাশের জন্য ট্যাবলো সাজিয়েছিল। সেই ট্যাবলোগুলিই প্রদক্ষিণ করে আগরপাড়ার বেশ কিছু এলাকা। স্কুলের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক শঙ্করলাল দাস বলেন, “স্কুলের প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষিকা পড়ুয়াদের সন্তান স্নেহে পাঠদান করেন। পরিবর্তনের নিয়মমাফিক উন্নত পরিকাঠামোর মাঝে যাতে শৃঙ্খলার অবমাননা না হয়, সেটাই হবে আগামীদিনের লক্ষ্য।”

কোনও ট্যাবলোয় নারী স্বাধীনতার বার্তা, আবার কোনওটায় শিশুশ্রম বিরোধী ভাবনা। এ ছাড়াও বিভিন্ন ভাষার চর্চা, সংবিধানের ৭৫তম বর্ষপূর্তি, মোবাইল ব্যবহারের অপকারিতা, বৃক্ষরোপণের উপকারিতার মতো নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আর্কষণীয় ট্যাবলো সাজিয়েছে পড়ুয়ারা। স্কুলের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক দেবাশিস মণ্ডল জানান, এই স্কুল একাধিক পরিবর্তনের সাক্ষী। এই বিশাল কর্মযজ্ঞে শামিল হওয়াটাও তাই এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

Advertisement

বিভিন্ন বিষয় ভাবনায় সেজেছিল একাধিক ট্যাবলো। নিজস্ব চিত্র।

ট্যাবলোয় বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি, বিষয়বস্তুর সাপেক্ষে সেজেছিল স্কুলের পড়ুয়ারাও। পাশাপাশি, স্কুলের স্কাউট টিম, সাংস্কৃতিক বিভাগের তরফেও এই র‍্যালিতে বিভিন্ন প্রদর্শন হয়। তার সঙ্গেই প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা চলে। স্কুলের দর্শন বিভাগের শিক্ষিকা মৌমিতা রায় ১৬ বছর এই স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। তাঁর মতে, নারী স্বাধীনতা বা স্বনির্ভরতার পাঠ খাতায় কলমে দেওয়া হলেও তার বাস্তব প্রয়োগ খুবই কম। তাই স্কুলস্তরে আরও বেশি সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে।

নারী স্বাধীনতার বার্তা নিয়ে পথযাত্রায় স্কুলের পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।

বর্তমানে ৩৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে নিয়ে পঠনপাঠন চলছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, স্কুলছুট রুখতে এবং কম খরচে ইংরেজি মাধ্যমে পঠনপাঠনের আওতায় সব পড়ুয়াদের আনতে যদি এক বা একাধিক স্কুল মার্জ করার নির্দেশিকা জারি করা হয়, সে ক্ষেত্রে নতুন করে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করা হতে পারে। কারণ স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা ১,০০০-এরও বেশি। তবে, স্কুলে একাধিক বিষয়ের জন্য পৃথক ল্যাব তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি, দ্রুতই অনলাইনে স্কুলে কোন পড়ুয়া প্রবেশ করছে, তা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থাও করা হবে।

স্কাউট গ্রুপের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে হাঁটল স্কুলপড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।

স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক দিলীপ কুমার দে, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শান্তিনাথ কুণ্ডু-সহ বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের প্রাক্তনীরাও স্কুলের ৭৫তম বর্ষপূর্তির এই অনুষ্ঠানে শামিল হয়েছেন। অতীতের স্মৃতি হাঁকড়ে সকলেই এদিন আপ্লুত হয়ে পড়েন। স্কুলের বাংলা বিভাগের শিক্ষক বিভূতিভূষণ বিশ্বাস বলেন, “১৯৫০ সালে ১৬ জানুয়ারি ছোট কুঁড়ে ঘরের ছাউনিতে গুটি কয়েক পড়ুয়াকে নিয়ে পথচলা শুরু হয়েছিল। সেই সময় অতিক্রম করে বর্তমানে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে জায়গা করে নিতে পেরেছে এই স্কুল, যা অন্তত গৌরবের বিষয়।”

পড়ুয়াদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে শামিল অভিভাবকরাও। নিজস্ব চিত্র।

তবে, ইংরেজি মাধ্যম চালু হওয়ায় খুশি অভিভাবকরা। তবে তাঁদের একাংশের মত, শুরুতেই বাংলার ভিত পোক্ত হওয়া প্রয়োজন। তার পরে অন্য ভাষায় চর্চা করা যেতে পারে। চলতি সপ্তাহের ১৬, ১৭, এবং ১৮ জানুয়ারি স্কুলে বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement