আরতি ঝা। সংগৃহীত ছবি।
প্রবল গরমেও ঘরের পাখা বন্ধ। অভাবের সংসার ঠিকই। কিন্তু সে কারণে ফ্যান খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে, এমনটা নয়। আসলে প্রস্তুতি চলছে পরীক্ষার। দেশের অন্যতম কঠিন পরীক্ষা ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট (নিট) আন্ডারগ্র্যাজুয়েট (ইউজি)-র। ডাক্তারির স্নাতকের প্রবেশিকাতে এমন কঠিন অধ্যবসায়ই সাফল্য নিয়ে এসেছে ২১ বছরের আরতি ঝা এর জীবনে। দেশের ২০ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৯২ তম স্থান দখল করে নিয়েছেন আরতি। ওবিসি ক্যাটাগরিতে তাঁর স্থান ৩৩।
গত ১৩ জুনই চলতি বছরের নিট ইউজি-র ফল প্রকাশ করেছে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ)। গত ৭ মে হয়েছিল পরীক্ষা। এ বারে ২০ লক্ষের মধ্যে প্রায় ১১ লক্ষ ৪৫ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন পরীক্ষায়।
আগরা শহরের বাসিন্দা আরতি। বাবা বিশ্বম্ভর ঝা পেশায় ট্রাক মেকানিক, মা গৃহবধূ। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে ট্রাক সারানো যাঁর কাজ, তাঁর মেয়েই যে সর্বভারতীয় স্তরে এমন ফল করতে পারে, তা কল্পনাতেও আনতে পারেননি বিশ্বম্ভর। সংবাদসংস্থাকে তিনি জানিয়েছেন, পরীক্ষায় ভাল ফলের জন্য কেমন ভাবে তাঁর মেয়ে দিনের পর দিন ঘরের ফ্যান বন্ধ করে প্রস্তুতি চালিয়েছে, যাতে পড়তে পড়তে ঘুমে চোখ না জুড়িয়ে আসে। পরীক্ষার জন্য উপেক্ষা করেছে নিজের অসম্ভব মাথা যন্ত্রণাকেও। বিশ্বম্ভর জানিয়েছেন, আর্থিক প্রতিকূলতার বাধা পেরিয়ে তাঁদের পরিবার থেকে এই প্রথম কেউ ডাক্তার হতে চলেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই মেয়ের এই সাফল্যে আনন্দে উদ্বেল গোটা পরিবার।
ছোট থেকেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বুনত আরতি। পরীক্ষায় এই র্যাঙ্কের পর তাঁর ইচ্ছে দেশের সেরা প্রতিষ্ঠানে নয়া দিল্লির এমস থেকে এমবিবিএস পড়ে ভবিষ্যতে নিউরোলজিস্ট হওয়ার। আরতি জানিয়েছেন, তাঁর সাফল্যের জন্য সম্পূর্ণ কৃতিত্বই তাঁর পরিবারের। তিনি জানিয়েছেন, পরিবারের সবাই, বিশেষ করে বাবা যদি তাঁর ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে বিশ্বাস না করতেন, তা হলে কোনও দিনই এমন ফল করা সম্ভব হত না। বাবা-ই তাঁর অনুপ্রেরণা। যে কোনও কাজে বাবা-ই অনবরত উৎসাহ যুগিয়ে গিয়েছেন। ব্যর্থ হলে কী ভাবে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে সামনে এগোতে হয়, তা-ও শিখিয়ে দিয়েছেন বাবা-ই।
পরিবারে আরতি ছাড়াও রয়েছেন তাঁর দুই ভাই, যাঁরা স্টাফ সিলেকশন কমিশনের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। আরতির দিদি বিবাহিত।
আরতি জানিয়েছেন, তাঁর কাছেও এই সাফল্য অভাবনীয়। একই সঙ্গে তাঁর মনে পড়ছে, পরীক্ষার প্রস্তুতির সেই কঠিন দিনগুলিও। ২০১৮ তে সিবিএসই বোর্ড থেকে ৮৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে দ্বাদশ পাশের পরে নিট ইউজি-র প্রস্তুতির জন্য এক বছর সময় নেন আরতি। সেই সময়ে একটি বেসরকারি স্কুলে ৫০০০ টাকা বেতনে ছাত্রছাত্রীদের পড়াতেন। সেই টাকা দিয়েই নিট ইউজি-র প্রস্তুতির জন্য কোচিং ক্লাসে ভর্তি হন তিনি। পরীক্ষার জন্য কঠোর অধ্যবসায় শুরু করেন ২০২০-র পর থেকে। পাশাপাশি বাড়িতেও টিউশন পড়াতে থাকেন দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদেরও।
আরতি জানিয়েছেন, প্রথমে ঘড়ি ধরে না পড়ে বিভিন্ন টপিক মন দিয়ে পড়তেন। এর পর কোচিং ক্লাসে ভর্তি হওয়ার পর থেকে নিয়মিত ৬-৮ ঘণ্টা করে পড়াশোনা শুরু করেন। পদার্থবিদ্যা এবং রসায়নে ভাল ছাত্রী হলেও বায়োলজি বা জীবনবিজ্ঞানের জায়গাটা একটু নড়বড়ে হওয়ায় ক্রমাগত এনসিইআরটি (ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং) জীবনবিজ্ঞান-এর পাঠ্যবই খুঁটিয়ে পড়তেন তিনি। আর তাতেই হয়েছে বাজিমাত।
ভবিষ্যতের পরীক্ষার্থীদের জন্য তাঁর টিপস, নিজেদের ভুলভ্রান্তির জায়গাগুলি চিহ্নিত করে, সেগুলি শুধরে ক্রমাগত অনুশীলন, পরিশ্রম এবং অধ্যবসায় চালিয়ে গেলেই পরীক্ষায় নিশ্চিত ভাবে সফল হবেন তাঁরা।