—ফাইল চিত্র।
পুজোর মুখে রাজ্য সরকারের ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের প্রায় ১৬ লক্ষ ছাত্রছাত্রীকে ট্যাব কিনতে জন্য টাকা দেবে রাজ্য সরকার। শুক্রবার বিকেল থেকেই সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এই টাকা জমা পড়বে বলে বিদ্যালয় শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। পুজোর আগেই সকলের অ্যাকাউন্টে তা ঢুকে যাওয়ার কথা।
করোনা অতিমারির পরে ২০২১ সালে রাজ্য সরকার এই প্রকল্প চালু করে। প্রত্যেক বছর শিক্ষক দিবসের দিনে অর্থাৎ, ৫ সেপ্টেম্বর দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। এ বছর শুধু দ্বাদশ নয়, একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদেরও টাকা দেওয়া হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের কথা বিধানসভায় বাজেট পেশের সময়েই জানানো হয়েছিল। এ জন্য অতিরিক্ত ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দও করেছিল অর্থ দফতর।
আরজি কর-কাণ্ডের জেরে বিক্ষোভের আবহে চলতি বছরে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান বাতিল করে রাজ্য সরকার। সেই সঙ্গে বাতিল হয় ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের অর্থ বিলি। শেষ মুহূর্তে বিলি বন্ধের সিদ্ধান্ত হলেও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল শিক্ষা দফতর। রাজ্যের সব জেলার ট্রেজ়ারির ৮৭টি অ্যাকাউন্টে মোট ১,৩৩৩ কোটি ৫৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা খরচের নির্দেশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ঠিক ছিল শিক্ষক দিবসে পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো শুরু হবে। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে সেই পরিকল্পনা বাতিল করে শিক্ষা দফতর। সব ট্রেজ়ারিকে সে ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে কেন এই সিদ্ধান্ত বদল, তা স্পষ্ট করা হয়নি সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে। শুধু জানানো হয়, ‘প্রশাসনিক কারণে’ এই সিদ্ধান্ত। পরে সেই টাকা দেওয়া হবে কি না বা দিলে তা কবে, সে ব্যাপারে তখনও পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি।
এই খবর আনন্দবাজার অনলাইনে প্রকাশিত হয় গত ৩ সেপ্টেম্বর। এর পরে বিদ্যালয় শিক্ষা বিভাগের উপসচিব ভূপালচন্দ্র হালদার বলেন, ‘‘এই প্রকল্প বন্ধ হচ্ছে না। পিছিয়ে গিয়েছে। কিছু প্রশাসনিক কারণে আপাতত বরাদ্দ টাকা ফেরত নেওয়া হয়েছে।’’ তবে কত দিনের জন্য পিছিয়েছে এবং কবে টাকা দেওয়া হবে সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানাননি। শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা যায়, টাকা দেওয়া বাতিলের খবর প্রকাশের পরেই নতুন করে উদ্যোগী হয় শিক্ষা দফতর। ঠিক করা হয়, এক মাস পরে তা কার্যকর হবে। সেই মতোই এ বার সে ভাবে কোনও ঘোষণা ছাড়াই শুরু হচ্ছে টাকা বিলি। শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজো শুরু হওয়ার আগেই যাতে সকলে টাকা পেয়ে যান, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।
এই টাকা দেওয়া নিয়ে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে পুজোর ঠিক আগে ট্যাব কেনার জন্য প্রায় ১৬ লক্ষ পরিবারের কাছে ১০ হাজার টাকা করে পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত তাৎপর্যপূর্ণ বইকি। প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা দিয়ে বিদ্যালয় শিক্ষার বুনিয়াদি কাঠামোর অনেক উন্নয়ন করা যেত। যেটা সরকার চাইছে না। এই মোবাইল কেনার টাকা দেওয়ার কোনও প্রয়োজনীয়তা এখন নেই। এটা সরকারি তহবিলের অপচয় বলে আমরা মনে করি।’’
এই টাকা দিয়ে পড়ুয়ারা লেখাপড়ার জন্য আদৌ ট্যাব কেনে কি না তা নিয়েও অনেক বার প্রশ্ন উঠেছে। বাঙুর ইনস্টিটিউশন হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, ‘‘শিক্ষক দিবসে টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তা তখন স্থগিত রাখা হয়। আর পুজোর প্রাক্কালে পড়ুয়াদের ব্যাঙ্কে সেই টাকা দেওয়া হচ্ছে সরকারের তরফে। পড়ুয়ারা খুশিই হবে। তবে তারা সঠিক জিনিস কিনে তার সঠিক ব্যবহার করছে কি না অভিভাবকদের সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।’’