Performing Arts Therapy

শিল্পের আশ্রয়ে মনের ক্ষত নিরাময়, ভিন্নধারার পাঠ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে

গান, নাচ, আঁকা, নাটক, মূকাভিনয়, হাতের লেখা অভ্যাস— এই সবই বিভিন্ন জটিল রোগের উপশমের পথ সুগম করার সম্ভাবনা রাখে।

Advertisement

স্বর্ণালী তালুকদার

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৫ ১৯:১৮
Share:
Specially abled people demonstrate various arts.

বিভিন্ন শিল্পকলার প্রদর্শন করেন বিশেষ ভাবে সক্ষমরা। নিজস্ব চিত্র।

অবচেতন মনের গভীরে প্রবেশের পথ খুঁজতে কখনও কখনও নাচ, গান, কবিতা, নাটকের মতো শিল্পকলার আশ্রয় নিতে হয় বিশেষজ্ঞদের। পোশাকি ভাষায় এই পদ্ধতির নাম পারফর্মিং আর্টস থেরাপি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মনের ক্ষত নিরাময়ে এই থেরাপি যথেষ্ট প্রচলিত। এই থেরাপি কী ভাবে শুশ্রুষা এবং আশ্রয়ের ভরসা যোগাতে পারে, তা নিয়েই বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয়ের পারফর্মিং আর্টস থেরাপি সেন্টারের তরফে দু’দিন ধরে এই আলোচনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা। প্রথম দিনে আধ্যাত্মিক সঙ্গীত কী ভাবে মন এবং শরীরের যন্ত্রণা, পুরোনো ট্রমার উপশমের মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করেন কুমার চট্টোপাধ্যায়। দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে থিয়েটার অ্যান্ড এডুকেশন নিয়ে কর্মরত কিংশুক দাস বডি মুভমেন্ট এবং এক্সপ্রেশন থিয়োরির ক্লাস করান পড়ুয়াদের। উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক, সঙ্গীত, নৃত্য বিভাগের পড়ুয়ারাও এই আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। অংশগ্রহণকারীদের মিউজ়িক, মুভমেন্ট, ড্রামা,আর্ট অ্যান্ড প্লে-র মতো থেরাপি, সাইকোলজি এবং ফিজ়িয়োলজির মতো বিষয়ের মাধ্যমে মানুষকে উজ্জীবিত করার পদ্ধতি সম্পর্কেও শেখানো হয়।

Expert talks about effectiveness of body movement and expression theory.

বডি মুভমেন্ট এবং এক্সপ্রেশন থিয়োরির প্রাসঙ্গিকতা বোঝাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ। নিজস্ব চিত্র।

সেন্টারের ডিরেক্টর নুপুর গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, শুধু মাত্র নাচ বা গানের চর্চার মাধ্যমে শিল্প সৃজনের আকাঙ্ক্ষাকে বাড়িয়ে তোলা নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনে এ সবের ব্যবহারিক বা প্রায়োগিক দিকগুলির বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। কারণ শুধুমাত্র জ্ঞান অর্জনই লক্ষ্য নয়, পরবর্তীকালে পেশাগত ভাবে এর গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে যথেষ্ট। হাতেকলমে প্রশিক্ষণ পেলে তার পথ সুগম হয়ে ওঠে।

Advertisement

সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর রেমন্তী মতিলাল জানিয়েছেন, জনমানসে এই বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতির বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালের সঙ্গে কাজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন বিভাগের রোগীদের সঙ্গে পড়ুয়ারা সরাসরি কথা বলে যাতে হাতেকলমে এই থেরাপি প্রয়োগ করতে পারেন, তার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “পরবর্তীকালে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত একটি করে হলেও কর্মশালার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে। যাতে শিক্ষাগ্রহণের স্তরেই মনের ক্ষত সম্পর্কে সহজে বলতে পারা কিংবা সাবলীল ভাবে অবচেতনের ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পড়ুয়াদের সমস্যা না হয়।”

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন ডিরেক্টর নুপুর গঙ্গোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

আলোচনা সভায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আবাসিকরা নাচ, গানের মতো শিল্পকলার প্রদর্শন করেন। উল্লেখ্যে এই সংস্থাগুলিতেই পারফর্মিং আর্টস নিয়ে পড়াশোনা সম্পূর্ণ করেছেন, এমন পড়ুয়ারা কাজ করছেন। তাঁরা মূলত বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশুদের এই থেরাপির মাধ্যমে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে থাকেন।

এই বিষয়ে সেন্টারের প্লে থেরাপি বিশেষজ্ঞ কুন্তী দে জানিয়েছেন, শিল্পের বিভিন্ন মাধ্যমের সাহায্যে মনের অবচেতনের সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করা এবং তা প্রয়োজনে ব্যক্তি বিশেষে প্রয়োগ করার পদ্ধতি যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ। তবে, এই কাজের শেষে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সমাজের মূল স্রোতে তাঁরাও ফিরে এসেছেন, যাঁরা একটা সময় আলোর মুখই দেখতে চাননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement