WBCS মেইন্স পরীক্ষা সংগৃহীত ছবি
এই বছরের মতো ডব্লিউবিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শেষ। গত ১৯ জুন এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি বারের মতোই এ বারও বহু ছাত্রছাত্রী ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় বসেছেন। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে অনেকগুলি সেন্টারে পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস কমিশন এই পরীক্ষার আয়োজন করেছে। দুপুর ১২টা থেকে ২.৩০ পর্যন্ত পরীক্ষা চলে। যে হেতু এটি প্রিলিমিনারি ধাপের পরীক্ষা ছিল, তাই একটি মাত্র পেপারেরই পরীক্ষা হয়। এই পেপারে মোট ২০০ নম্বর থাকে। মোট আটটি বিষয়ের উপরে অবজেক্টিভ টাইপ প্রশ্ন করা হয়।
এ তো গেল এ বছরের ডব্লিউবিসিএস প্রিলিমসের কথা। এ বার সামনেই মেইন্স পরীক্ষার নোটিস বেরোবে। কী ভাবে মেইন্সের প্রস্তুতি নেবেন, এ বার সে কথায় আসা যাক।
মেইন্স পরীক্ষায় রচনাধর্মী ও অবজেক্টিভ— দু’ধরনের প্রশ্নই আসে। ছ’টি আবশ্যিক বিষয়ের উপর মোট ২০০ নম্বরের একটি পরীক্ষা দিতে হয়। এই পরীক্ষার জন্য মোট ৩ ঘণ্টা সময় ধার্য করা হয়। এই ছ’টি আবশ্যিক বিষয় হল-
১.বাংলা/হিন্দি/উর্দু/নেপালি সাঁওতালি (রচনাধর্মী প্রশ্ন)
২. ইংরেজি (রচনাধর্মী প্রশ্ন)
৩. জেনারেল স্টাডিজ ১ (অবজেক্টিভ প্রশ্ন)
৪. জেনারেল স্টাডিজ ২ (অবজেক্টিভ প্রশ্ন)
৫. ভারতের সংবিধান ও ভারতের অর্থনীতি (অবজেক্টিভ প্রশ্ন)
৬. পাটিগণিত ও রিজনিং-এর পরীক্ষা (অবজেক্টিভ প্রশ্ন)
মেইন্স পরীক্ষার আবশ্যিক বিষয়গুলির বিস্তারিত সিলেবাস নিচে দেওয়া হল:
১. পেপার ১-এর জন্য— বাংলা, উর্দু, হিন্দি, নেপালি, সাঁওতালি-চিঠি লেখা, রিপোর্ট লেখা, প্রেসি লেখা, ইংলিশ থেকে বাংলা, উর্দু, হিন্দি, নেপালি ও সাঁওতালিতে অনুবাদ ও কম্পোসিশন।
২.পেপার ২-এর জন্য— বিষয় ইংলিশ— চিঠি লেখা, রিপোর্ট লেখা, প্রেসি লেখা, বাংলা, উর্দু, হিন্দি, নেপালি ও সাঁওতালি থেকে ইংলিশে অনুবাদ ও কম্পোজিশন।
৩. পেপার ৩-এর জন্য— জেনারেল স্টাডিজ ১-এ— ভারতের ইতিহাস (বিশেষ ভাবে জাতীয় আন্দোলনের ইতিহাস), ভারতের ভূগোল (বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের ভূগোল)
৪. পেপার ৪-এর জন্য— জেনারেল স্টাডিজ ২-এ— বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি, পরিবেশ (জীববৈচিত্র ও কোস্টাল নিয়ন্ত্রণ জোন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, ওজোন স্তর ও অন্যান্য সমস্যা), সাধারণ জ্ঞান ও সাম্প্রতিক ঘটনাবলি
৫. পেপার ৫-এর জন্য— ভারতের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও অর্থনীতি, ভারতের সংবিধান, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক ও কেন্দ্রীয় তহবিল রাজ্যকে হস্তান্তর, ভারতের অর্থনীতি (পঞ্চবর্ষ নীতির পরিকল্পনা ও লক্ষ্য, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার আর্থিক নীতি ও কর্তব্য, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় আর্থিক কমিশন, ভারত সরকারের ফিস্কাল নীতি)।
৬. পেপার ৬-এর জন্য— পাটিগণিত ও রিজনিং— লজিকাল ডিডাকশন, যুক্তির ধার, বাক্যের তাৎপর্য, চিত্র দেখে অনুমান, ক্রম ও বর্ণক্রম, সংখ্যাক্রম, সাদৃশ্যের পরীক্ষা, চিহ্নের ব্যাখ্যা, গাণিতিক ধাঁধা, অড ম্যান আউট, পার্সেপশন টেস্ট, নন ভার্বাল রিজনিং ও সঠিক বিন্যাসক্রম নির্বাচন করা।
এ ছাড়াও গ্রুপ ‘এ’ ও ‘বি’-র পরীক্ষার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত একটি ঐচ্ছিক বিষয়ের উপর দু’টি পেপার থাকে। ঐচ্ছিক বিষয়ের দু’টি পেপারের প্রতিটিতেই ২০০ নম্বর করে থাকে। এ ক্ষেত্রে সমস্ত প্রশ্নাবলী রচনাধর্মী হয় ও ৩ ঘণ্টা ধরে এই পরীক্ষা চলে। এই ঐচ্ছিক বিষয়গুলি হল—
১.হিন্দি
২. সাঁওতালি
৩. স্ট্যাটিসটিক্স
৪.ম্যানেজমেন্ট
৫.আইন, কমার্স ও অ্যাকাউন্টেন্সি
৬. তুলনামূলক সাহিত্য
৭. কম্পিউটার সায়েন্স
৮. সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
৯. ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং
১০. সংস্কৃত
১১. আর্কিটেকচার
১২. অর্থনীতি
১৩. দর্শন
১৪. ফিজিওলজি
১৫. ইংলিশ
১৬. অ্যানিম্যাল হাজব্যান্ডরি ও ভেটেরিনারি সায়েন্স
১৭. মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
১৮. রাষ্ট্রবিজ্ঞান
১৯. সাইকোলজি
২০. পালি
২১. ভূগোল
২২. বোটানি
২৩. ফরাসি
২৪. জুলোজি
২৫. পারসি
২৬. রসায়ন
২৭. জিওলজি
২৮. ইতিহাস
২৯. গণিত
৩০. সমাজবিদ্যা
৩১. অ্যানথ্রোপোলজি
৩২. চিকিৎসা বিজ্ঞান
৩৩. পদার্থবিদ্যা
মেইন্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তবেই ইন্টারভিউ বা পার্সোনালিটি টেস্টের জন্য ডাকা হয়। মেন্স পরীক্ষা ও ইন্টারভিউয়ে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা হয়।
এ বার দেখে নেওয়া যাক, প্রস্তুতির সময় কী কী জিনিস মাথায় রাখতে হবে:
১. পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের প্যাটার্ন ও সিলেবাস খুব ভাল করে খুঁটিয়ে দেখে নিতে হবে, যাতে পরীক্ষায় কী কী প্রশ্ন আসতে পারে বা কোথা থেকে প্রশ্ন আসতে পারে, তার একটু আঁচ পাওয়া যায়।
২. পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি তৈরি করে নিতে হবে এবং কঠোর ভাবে সেই রুটিন মেনে পড়াশুনো চালিয়ে যেতে হবে।
৩. যে কোনও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বিগত বছরের প্রশ্নপত্রের প্যাটার্ন কেমন ছিল, তা যাচাই করে নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিগত বছরগুলিতে কোন প্রশ্নগুলি বেশি বার এসেছে এবং কোন বিষয়ের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তা খেয়াল রাখা উচিত।
৪. প্রস্তুতি পর্বে রোজ বাড়িতে মক টেস্ট দেওয়ার অভ্যাসও করতে হবে। প্রতিটি বিষয়ের উপর নিজের দক্ষতা যাচাই করে নেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত এই পরীক্ষা দেওয়া জরুরি। এর থেকে আপনি বুঝতে পারবেন, কোন কোন বিষয়ের কোন কোন জায়গা আপনাকে আরও মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে বা, কোন কোন জায়গায় উন্নতির জন্য আপনাকে আরও পরিশ্রম করতে হবে। এ ছাড়াও মক টেস্ট দিলে আপনার স্পিডও বাড়বে, যাতে আপনি পরীক্ষাকেন্দ্রে অতি সহজেই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আসতে পারবেন। এই সব মক প্রশ্নপত্র আপনি অনলাইন বা অফলাইন যে কোনও জায়গাতেই পেয়ে যাবেন।
প্রিলিমসের রেজাল্ট ও কাট অব নম্বরের লিস্ট কমিশনের তরফ থেকে এখনও প্রকাশ করা হয়নি ঠিকই, কিন্তু তাই বলে হাত গুটিয়ে বসে থেকে এই সময়টা নষ্ট না করে মেইন্স পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করে দিন। কে বলতে পারে হয়তো আপনিই হয়ে উঠবেন ভবিষ্যতের কোনও নামকরা আমলা!