ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইআইইএসটি), শিবপুর, প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তনী অরুণ দেব (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র।
শিকড়ের টানে বারবার দেশে ফেরা। আপনজনের জন্য কিছু একটা করার চেষ্টা। সিনেমার গল্পে এমন চরিত্রের দেখা মিললেও বাস্তবে কি সাক্ষাৎ পাওয়া সম্ভব? প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইআইইএসটি), শিবপুরের এক প্রাক্তনী, বর্তমানে অধ্যাপক অরুণ দেব, যাঁর বয়স নব্বই ছুঁই ছুঁই। ওই প্রতিষ্ঠানে জল সংরক্ষণ, বর্জ্য মিশ্রিত জলের পুনর্ব্যবহার, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ এবং পরিবেশ রক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে গবেষণার উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে ১০ লক্ষ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৮.৬ কোটি) আর্থিক অনুদানও দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে এ-ও জানিয়েছেন, এই কাজের জন্য তিনি বারবার ফিরে আসতে চান।
আইআইইএসটি, শিবপুরের ১১তম গ্লোবাল অ্যালামনি ডে-র অনুষ্ঠানে এই অনুদানের কথা ঘোষণা করেন প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রার তথা অধ্যাপক অনির্বাণ গুপ্ত। প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা ভিএমএসআর মূর্তিকে আগেই এই ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন অরুণ। অধিকর্তার তরফে মিলেছে সবুজ সঙ্কেত। একই সঙ্গে এ-ও জানানো হয়েছে, প্রস্তাবিত প্রকল্প নিয়ে দ্রুতই কাজ শেষ করা হবে। ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা সাজানোর কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারপার্সন তেজস্বিনী অনন্তকুমার জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তনীরা হলেন কেতাবি জীবন এবং কর্মক্ষেত্রের মধ্যেকার যোগসূত্র। এই গবেষণা কেন্দ্রটি ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য এবং পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কিত বিষয়েও চর্চার সুযোগ করে দেবে।
আইআইইএসটি, শিবপুরের ১১তম গ্লোবাল অ্যালামনি ডে-র অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা, চেয়ারপার্সন-সহ অন্যান্য বিশিষ্ট আধিকারিকরা। দ্য গ্লোবাল অ্যালামনি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (গাবেসু)-র ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত।
দীর্ঘ সময় ধরে সুস্থায়ী জলনিকাশি পরিকাঠামো, বর্জ্য মিশ্রিত জলের পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে ১৯৫৭-তে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই স্নাতক আন্তর্জাতিক স্তরে গবেষণার কাজ করেছেন। পরবর্তীতে এই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ সময়ের জন্য অধ্যাপনার দায়িত্বও সামলেছেন। তবে, শুধু কাজেই থেমে নেই তাঁর জীবন। তিনি চান, প্রতিষ্ঠানের ‘স্কুল অফ ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ়’ কেন্দ্রে শুরু হোক এই বিষয়ে গবেষণাও। সচেতন হোক নতুন প্রজন্ম। এর আগে বিশ্ব ব্যাঙ্কের তরফে কলকাতা পুরসভার জন্য জল সরবরাহ এবং নিকাশি ব্যবস্থাপনার একটি প্রকল্পে গুরু দায়িত্ব পালন করেছিলেন অরুণ দেব। তিনি জানিয়েছেন, শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের নবীন প্রজন্মের জন্যও কিছু করতে চান।
এত বিষয় থাকতে ওয়াটার অ্যান্ড ওয়েস্ট ওয়াটার ইঞ্জিনিয়ারিং, পরিবেশ বিদ্যা চর্চায় জোর কেন? উত্তরে অরুণ বলেন, “জল জীবনের অংশ। পরিবেশ রক্ষার দায়িত্বও আমাদের। বর্জ্য মিশ্রিত জলের কারণে হয়ে চলা দূষণ রোধ করার জন্য শুধুমাত্র সচেতন হওয়াটাই যথেষ্ট নয়। ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যার সাহায্যে সার্বিক পরিকাঠামোতেও আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব। তাই শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও যত দিন সম্ভব, এই ভাবনাকে বাস্তবায়িত করার জন্য যা যা প্রয়োজন, সবটাই করতে চাই।”