Madhyamik 2025

মাধ্যমিকের দ্বিতীয় দিনে দুর্ঘটনা! যন্ত্রণাকে জয় করেই বাকি পরীক্ষার প্রস্তুতি ইমনের

তাকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় কাছের ন’পাড়া জেনারেল হাসপাতালে।

Advertisement

সুচেতনা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:০৯
Share:
প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

দুর্ঘটনাও দমিয়ে রাখতে পারেনি তাকে। মাধ্যমিকের দ্বিতীয় দিন ইংরেজি পরীক্ষা দিয়ে বাকি সকলের মতোই বাড়ি ফিরছিল ইমন। পরীক্ষা ভাল হওয়ায় পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে তাই আনন্দে জড়িয়ে ধরেছিল মাকে। অটো ধরে বাড়ি ফেরার পথে আচমকাই ঘটে অঘটন। সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় জীবনের গতিপথ। তবু লক্ষ্যে অবিচল এই কিশোর।

Advertisement

বরাহনগর নরেন্দ্রনাথ বিদ্যামন্দিরের ছাত্র ইমন মণ্ডল। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার জন্য সারা বছর ধরেই প্রস্তুতি নিয়েছিল সে। পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল বাড়ির অদূরেই বরাহনগর রামেশ্বর হাইস্কুলে। ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলা পরীক্ষার পর ১১ ফেব্রুয়ারি ছিল ইংরেজি। বন্ধুদের মতো ইমন-এরও পরীক্ষা ভাল হয়েছিল। পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষারত মা’কে তাই বেরিয়েই জড়িয়ে ধরে বলেছিল “পরীক্ষা খুব ভাল হয়েছে, মা। খুব খুশি আমি”।

পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার অটোতে উঠে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আচমকা দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয় ইমন ও তার মা। এক চিলতে রাস্তায় পাশের বাইক ও অটোকে জায়গা দিতে গিয়েই ঘটে যায় বিপত্তি। অটোর ধারে বসায় আঘাতটা বেশ জোরেই লাগে ইমনের। পা নাড়াতে পারছিল না সে। সঙ্গে সঙ্গে সেই অটো করেই তাকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় কাছের ন’পাড়া জেনারেল হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে আরজি কর হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। এর পর দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ইমনকে। জানা যায়, তার ফিমার বোন বা ঊরুর হাড় ভেঙে গিয়েছে। প্রয়োজন অপারেশনের।

Advertisement

ইমনের মা বন্দনা মণ্ডল বলেছেন, “পরীক্ষার প্রথম দিনে রাস্তাঘাটে পুলিশি সক্রিয়তা দেখা গেলেও দ্বিতীয় দিনে রাস্তায় ফের যানজট দেখা যায়। এক চিলতে রাস্তায় একাধিক অটো, বাইক থাকাতেই আজ আমার ছেলের এই অবস্থা।”

তিনি জানিয়েছেন, ছেলেকে অনেকেই পরের বছর আবার পরীক্ষা দেওয়ার বা এ বছর বাকি বিষয়গুলির জন্য রাইটার নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু কোনও কথাই কানে তোলেনি সে। ইমনের কথায়, “সারা বছর দিনরাত এক করে পড়েছি। যতোই কষ্ট হোক, পরীক্ষা আমি দেবই। এর জন্য কারওর সাহায্য বা দয়া আমি চাই না।”

একরোখা এই ছেলের কথাকে মেনে নিয়েছে তার পরিবার থেকে স্কুল। এই মুহুর্তে অপারেশন জরুরি হলেও ছেলের জেদের কাছে নতিস্বীকার করে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে অপারেশনের তারিখ। এখন হাসপাতালের বেডে শুয়েই যাতে ইমন পরীক্ষা দিতে পারে, তার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পর্ষদের অনুমতি নিয়েছে তার পরিবার। সেখানেই পায়ে প্লাস্টার আর ট্র্যাকশন নিয়ে চলছে পরীক্ষার প্রস্তুতি। একদিকে, শুধু পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতেই হিমশিম পরীক্ষার্থীরা। অন্য দিকে, ইমনকে মাধ্যমিকের পাশাপাশি জীবনের কাছেও দিতে হচ্ছে পরীক্ষা। লক্ষ্যে অবিচল ইমন, এ বারও জয় ছিনিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement