সম্পাদকীয় ২

সাফল্যের প্রথম ধাপ

পরিবেশের প্রশ্নে ভারতীয় রাজনীতিকরা সচেতন, এমন দাবি করিবার কোনও উপায় তাঁহারা রাখেন নাই। মনমোহন সিংহের পুনর্বণ্টনপন্থী জমানাই হউক বা নরেন্দ্র মোদীর বাণিজ্যবান্ধব শাসনকাল, পরিবেশ, অরণ্য ইত্যাদি বিষয়ে শাসকরা চর্চিত উদাসীনতায় বিশ্বাসী। এমন অবস্থায় যদি খবর আসে, গত চার বত্‌সরে ভারতের জঙ্গলে বাঘের সংখ্যা ৩০ শতাংশ বাড়িয়াছে, আনন্দমিশ্রিত বিস্ময়ই যথার্থ প্রতিক্রিয়া।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০০
Share:

পরিবেশের প্রশ্নে ভারতীয় রাজনীতিকরা সচেতন, এমন দাবি করিবার কোনও উপায় তাঁহারা রাখেন নাই। মনমোহন সিংহের পুনর্বণ্টনপন্থী জমানাই হউক বা নরেন্দ্র মোদীর বাণিজ্যবান্ধব শাসনকাল, পরিবেশ, অরণ্য ইত্যাদি বিষয়ে শাসকরা চর্চিত উদাসীনতায় বিশ্বাসী। এমন অবস্থায় যদি খবর আসে, গত চার বত্‌সরে ভারতের জঙ্গলে বাঘের সংখ্যা ৩০ শতাংশ বাড়িয়াছে, আনন্দমিশ্রিত বিস্ময়ই যথার্থ প্রতিক্রিয়া। বাঘের সংখ্যা কত, তাহা গনিবার পদ্ধতি লইয়া প্রতি বারই যে বিতর্ক চলে, এই দফায় সেই সম্ভাবনাও কম। এই বার সর্বোচ্চ মানের প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানসম্মত গণনাপদ্ধতি ব্যবহার করা হইয়াছে। ফলে, গুনতির ভুলে বাঘের সংখ্যা বাড়িয়াছে, এমন কথা বলিবার উপায় নাই। ভারতীয় জঙ্গলের এই মহানায়কের সংখ্যা যখন বিপজ্জনক হারে কমিতেছিল, তখন দেশ জুড়িয়া সাড়া পড়িয়া গিয়াছিল। হয়তো, পশুটি বাঘ বলিয়াই প্রতিক্রিয়া এমন তীব্র হইয়াছিল। এক্ষণে বোধ হইতেছে, সেই তত্‌পরতা ব্যর্থ হয় নাই। বন্য প্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ভারতে ইহা এক বিরল সাফল্য। এই সাফল্যের পিছনে কয়েকটি কারণ স্পষ্ট। চোরাশিকারীদের দৌরাত্ম্য বহুলাংশে কমিয়াছে, জঙ্গলে অবৈধ অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রেও রাশ টানা সম্ভব হইয়াছে। কর্নাটক ও বিহারের ন্যায় রাজ্যে বাঘের সংখ্যা বাড়িয়াছে, ইহা অতি সুসংবাদ। কারণ, এই রাজ্যগুলিতে দীর্ঘ দিন ধরিয়াই জনসংখ্যার চাপে জঙ্গল সঙ্কুচিত হইতেছিল। স্পষ্টতই, প্রশাসনিক ও আধিকারিক স্তরে সক্রিয়তা ব্যর্থ হয় নাই। উদাহরণটি দেখাইয়া দেয়, সদিচ্ছা থাকিলে ভারতেও এমন সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।

Advertisement

ভারত যদি সত্যই এই শিক্ষাটি গ্রহণ করে, তবে দেশের উপকার। কিন্তু মুশকিল হইল, পড়ুয়া অপেক্ষা পণ্ডিতমহাশয় হওয়াতেই ভারতের আগ্রহ অধিকতর। কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও অরণ্য মন্ত্রী ইতিমধ্যেই বলিয়া ফেলিয়াছেন, অবশিষ্ট দুনিয়া ভারতকে দেখিয়া শিখুক, কী ভাবে বাঘ বাঁচাইতে হয়। ভারতের সাফল্যটি কোনও অর্থেই ক্ষুদ্র নহে, কিন্তু আত্মপ্রচারে মাতিয়া উঠিবার পূর্বে সেই সাফল্যের বিপরীত পিঠটিও পরীক্ষা করিয়া দেখা প্রয়োজন। ওড়িশা, উত্তর প্রদেশ এবং বিশেষত অন্ধ্রপ্রদেশে বাঘের সংখ্যা গত চার বত্‌সরে কমিয়াছে। শেষোক্ত রাজ্যটিতে এই হার উদ্বেগজনক। কেন এমন হইল, সেই কারণ সন্ধান করা প্রয়োজন। ভারতে ঘন জঙ্গলের অনুপাত নিয়মিত হ্রাস পাইতেছে। বাঘের ন্যায় প্রাণীর ক্ষেত্রে এই জঙ্গল নির্বিকল্প। বন দফতরে বহু পদ খালি পড়িয়া রহিয়াছে। তাহাতে সংরক্ষণের কাজ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে। বিশ্বের গুরুঠাকুরের ভূমিকায় নামিবার পূর্বে মন্ত্রিমহোদয় এই সমস্যাগুলির দিকে তাকাইতে পারিতেন।

অবশ্য, যে কোনও প্রকল্পের সাফল্যের কৃতিত্বটি দ্রুত আত্মসাত্‌ করিয়া ফেলাও রাজনীতির অংশবিশেষ। সেই কৃতিত্বে নিজস্ব অবদান না থাকিলে দ্রুততর হওয়াই বিধেয়। তবে, কাজ করিবার বহু জায়গা এখনও পড়িয়া আছে। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ বনাম অরণ্যের উপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর অরণ্যের অধিকার, ন্যায্যত কোনটির কতখানি গুরুত্ব পাওয়া উচিত, এই প্রশ্নের এখনও মীমাংসা হয় নাই। অন্য দিকে, পর্যটন শিল্পকে কতখানি জায়গা ছাড়া যাইতে পারে, তাহাও স্থির করিতে হইবে। অপরিকল্পিত পর্যটন বন্য প্রাণী সংরক্ষণের উদ্দেশ্যটির মস্ত ক্ষতি করিতে পারে। কোন পথে হাঁটা বিধেয়, ভারত বরং তাহা আফ্রিকা বা ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলির নিকট শিখুক।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement