সম্পাদকীয় ২

বিপথগামী

ভারতের দিকে শ্রীলঙ্কা যখন মুখ ফিরাইতে উত্‌সুক, ভারতের আর এক প্রতিবেশী মলদ্বীপ কিন্তু তখন নয়াদিল্লি হইতে দূরত্ব রচনায় অধিকতর আগ্রহী। ভারতবন্ধু বলিয়া পরিচিত সে-দেশের বর্তমান বিরোধী নেতা মহম্মদ নসিদকে ‘সন্ত্রাসবাদ’-এর অভিযোগে টানিয়া-হ্যাঁচড়াইয়া চোর-ডাকাতের মতো আদালতকক্ষে টানিয়া আনার দৃষ্টিকটু অশালীনতা লইয়া নয়াদিল্লি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এমনকী রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আপত্তি জানাইলে মলদ্বীপ সরকার সেই আপত্তি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করিয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৫ ০০:০০
Share:

ভারতের দিকে শ্রীলঙ্কা যখন মুখ ফিরাইতে উত্‌সুক, ভারতের আর এক প্রতিবেশী মলদ্বীপ কিন্তু তখন নয়াদিল্লি হইতে দূরত্ব রচনায় অধিকতর আগ্রহী। ভারতবন্ধু বলিয়া পরিচিত সে-দেশের বর্তমান বিরোধী নেতা মহম্মদ নসিদকে ‘সন্ত্রাসবাদ’-এর অভিযোগে টানিয়া-হ্যাঁচড়াইয়া চোর-ডাকাতের মতো আদালতকক্ষে টানিয়া আনার দৃষ্টিকটু অশালীনতা লইয়া নয়াদিল্লি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এমনকী রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আপত্তি জানাইলে মলদ্বীপ সরকার সেই আপত্তি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করিয়াছে। উপরন্তু সে দেশের বিদেশমন্ত্রী জানাইয়াছেন, মলদ্বীপ কোনও বিদেশি সরকারের কাছ হইতে কোনও পরামর্শ বা নির্দেশ লইতে প্রস্তুত নয়। এমন একটা সময়ে মহম্মদ নসিদকে এই ভাবে সাধারণ কয়েদির মতো গ্রেফতার করিয়া আদালতে তোলা হইতেছে এবং তাহার সমর্থনে মলদ্বীপের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নও টানিয়া আনা হইতেছে, যাহার অল্প দিনের মধ্যেই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক মলদ্বীপ সফর পাকা হইয়া গিয়াছে।

Advertisement

প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দ্বীপপুঞ্জ কি তবে নয়াদিল্লির উদার অভিভাবকত্ব ছাড়িয়া বেজিংয়ের বংশ-যবনিকার আড়ালে আশ্রয়সন্ধানী? মলদ্বীপকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে একটি রাষ্ট্র হিসাবে তুলিয়া ধরার ক্ষেত্রে ভারতের অবদানই সর্বাধিক। কিন্তু কিছু কাল হইল নসিদের প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল্লা ইয়ামিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর হইতেই মলদ্বীপ বেজিংয়ের দিকে ঝুঁকিতে শুরু করিয়াছে। চিন বিপুল বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির সম্ভার লইয়া মলদ্বীপকে আপন প্রভাব-বলয়ের ভিতর টানিয়া আনিতে সচেষ্ট। ভারতের আরও দুশ্চিন্তার কারণ, এই ক্ষুদ্র দ্বীপপুঞ্জ হইতে দলে-দলে মুসলিম তরুণরা সিরিয়া ও ইরাকে চলিয়াছে ইসলামি রাষ্ট্রবাদীদের খিলাফত কায়েম করার দিবাস্বপ্ন পূরণের জন্য। এ ধরনের একশত যোদ্ধা ওয়াহাবি ও সালাফি ইসলামের কট্টরপন্থী জেহাদের মতাদর্শে দীক্ষিত হইয়া মলদ্বীপে ফিরিয়া আসিয়াছে হয় হতাশাগ্রস্ত ও নির্মোহ হইয়া, নয়তো নূতন যোদ্ধা সংগ্রহ করিয়া ইরাক-সিরিয়ায় প্রেরণ করার ঠিকা লইয়া। উভয় সম্ভাবনাই এই দ্বীপপুঞ্জের স্থিতি ও শৃঙ্খলার পক্ষে বিপদস্বরূপ।

ভারতের খিড়কি দরজার কাছে বৈরী মনোভাবাপন্ন একটি ক্ষুদ্র দ্বীপপুঞ্জের আস্ফালন স্বস্তিকর নয়। বিশেষত সেই রাষ্ট্রের শাসকরা যদি বেজিংয়ের দিকে ক্রমশই ঢলিয়া পড়িতে থাকেন এবং দেশের মাটিকে জেহাদি তৈয়ারির কারখানায় পরিণত হইতে দেন। শেষোক্ত বিষয়টি বেজিংয়ের পক্ষেও স্বস্তিকর হইতে পারে না। চিনের উত্তর-পশ্চিমে সুবৃহত্‌ শিনজিয়াং প্রদেশে উইগুর জনজাতির জেহাদিরা যে ভাবে ব্যাপক হিংসা ছড়াইতেছে, তাহার প্রেক্ষিতে মলদ্বীপের জেহাদিরাও বেজিংয়ের কাছে তীব্র মাথাব্যথার কারণ হইয়া উঠিতে পারে। প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের সরকার তাঁহার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মহম্মদ নসিদের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ খুঁজিয়া পাইলেন, আর সিরিয়া-ইরাক-ফেরত জেহাদিদের অবাধে বিচরণ করিতে ও শক্তি সঞ্চয় করিতে দিতেছেন। এই নীতি কিন্তু এক দিন তাঁহার শাসনের বিরুদ্ধেই ব্যুমেরাং হইয়া ফিরিতে পারে। নরেন্দ্র মোদী আগামী সপ্তাহে মলদ্বীপ সফরে গিয়া নিশ্চয় ওই নবীন গণতন্ত্রকে তাহার সাংবিধানিক রীতিপদ্ধতি এবং আইনের শাসনের সীমানা সম্পর্কে বক্তৃতা দিবেন। তাহা শুনিবার ও প্রণিধান করিবার সময়, ধৈর্য এবং বিচক্ষণতা মলদ্বীপের আছে কি না, তাহা কিন্তু ভবিষ্যত্‌ই বলিবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement