মধ্যপ্রদেশের চৌথিয়া গ্রামে প্রায়শই উচ্চৈঃস্বরে আশ্চর্য ধারাবিবরণী প্রচারিত হইতেছে। কেহ প্রকাশ্যে মলত্যাগ করিতে বাহির হইলেই, বা সেই কর্মে রত হইলেই, মাইক-এ ফলাও করিয়া তাহার নাম ঘোষণা করিয়া, তাহার প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ কমেন্ট্রি চলিতেছে। বুদ্ধিটি ওই গ্রামের সরপঞ্চ, খুসলি বাই-এর। সম্প্রতি গ্রামে বেশ কিছু ব্যক্তিগত ও সর্বজনীন শৌচাগার নির্মাণ করা হইয়াছে, কিন্তু পঞ্চায়েতের বহু অনুরোধ, সচেতনতা-ক্যাম্পেন সত্ত্বেও অধিকাংশই তাহা ব্যবহার করে না। তাই প্রথমে তাহাদের লজ্জিত করিবার জন্য, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিবার কালে মোবাইলে ছবি তুলিয়া লওয়া হইতেছিল, সেই ছবি সকলের গোচরে আনা হইতেছিল। কিন্তু ইহাতে কাজ হয় নাই। তাই বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমে তাহাদের গুরুজনদিগকে সচেতন করিবার চেষ্টা চলিল। তাহাও বিফল হওয়ায়, এখন পুরুষ-মহিলা মিলাইয়া বারো জনের কমিটি গড়া হইয়াছে, যাঁহাদের কাজ পথেঘাটে নজর রাখা। সদস্যদের হাতে টর্চ ও মোবাইল ফোন। ‘অপরাধী’ নজরে আসিলেই, তাঁহারা ফোনে খবর দেন পঞ্চায়েত ভবনের ‘কন্ট্রোল রুম’-এ, তাহার পর মাইকে ধারাভাষ্য শুরু হয়। মলত্যাগীর গাড়ু বাজেয়াপ্ত করিয়া লওয়া হয়, একশত টাকা জরিমানাও হয়। এই প্রক্রিয়া শুরু হইবার পর, ওই গ্রামে প্রকাশ্যে মলত্যাগের ঘটনা কমিয়া আসিয়াছে, বিশেষত মহিলারা এখন শৌচাগার ব্যবহার শুরু করিয়াছেন। মনে রাখিতে হইবে, ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, মধ্যপ্রদেশে ৮৬.৯% মানুষ প্রকাশ্যে মলত্যাগ করেন। সেই প্রেক্ষিতে, এবং শিশুপাঠ্য গল্পের ন্যায় ‘কেমন জব্দ’ হাস্যরসটি অন্তে দোদুল্যমান বলিয়া, এই শোধন-অভিযান জরুরি, বুদ্ধিদীপ্ত ও নির্বিষ বলিয়াই প্রতিভাত হয়।
হাস্যবেগ কমিয়া আসিলে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অস্বস্তিকর প্রশ্নটি আসিয়া দাঁড়ায়। মানুষের চরম ব্যক্তিগত মুহূর্তকে তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গোষ্ঠীর প্রত্যেকের গোচরে আনিবার অধিকার কাহারও আছে কি? কোনও মানুষ মলত্যাগ করিতে বসিলে সে থাকে চূড়ান্ত অসহায় অবস্থায়, তখন তাহাকে ঘিরিয়া সোল্লাসে রসিকতা চলিলে তাহার পলাইবারও অবকাশ হয়তো থাকে না। ইহা কি অত্যাচার নহে? কেহ বলিবেন, প্রথমে তো ভাল ভাবে বুঝানো হইয়াছিল। তদুপরি, প্রকাশ্যে মলত্যাগ কাজটি তো তিরস্কারযোগ্য। ঠিক। কিন্তু এই অভ্যাস এই দেশবাসীর কয়েক শতাব্দীর। বুঝানো হইয়াছিল কয় দিন? আর, ‘ঠিক’ উপায় ফলবতী হইতেছে না বলিয়া দ্রুত ‘ভুল’ উপায়ের আশ্রয় লইলে, নীতি কোথায় মুখ লুকায়? এই বার আসিবে কার্যকারিতার কথা। এই উপায়ে তো অধিকাংশকেই শৌচাগারের দিকে ঠেলিয়া দেওয়া গিয়াছে। কিন্তু যাহা কার্যকর, তাহাই তর্কাতীত ভাবে প্রশ্রয়যোগ্য হইলে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণার্থে বলপূর্বক নির্বীর্যকরণের পক্ষেও ওকালতি করা যাইবে। কারাগারে কয়েদির মাথা থেঁতো করিলে হয়তো তাহার স্বীকারোক্তি আদায় সহজ হইয়া আসে, কিন্তু তাহা কি ঠিক ব্যবহার? ইহা অনস্বীকার্য, এই দেশে জনগণ নিজেদের ভাল কিছুতেই বুঝে না এবং সাধারণ একটি প্রক্রিয়া বলবত্ করিতেও প্রশাসনের ঘাম ছুটিয়া যায়। তখন মনে হয়, প্রক্রিয়ার ঔচিত্য লইয়া পরে ভাবা যাইবে, আগে ব্যাটাদের লাইনে আনা যাউক। কিন্তু ছাত্র যতই অবাধ্যতা করুক, তাহাকে ক্লাসের সম্মুখে উলঙ্গ করিয়া দাঁড় করাইয়া দিলে, তাহার অংক হোমওয়ার্ক হয়তো হইবে, কিন্তু হৃদয়ের ক্ষত কখনও শুকাইবে না। তাহাতে তাহার বৃহত্তর ক্ষতি হইয়া যাইবে। মাইকে ঘোষণা করিয়া মানুষকে সর্বসমক্ষে হাস্যাস্পদ করিলে, সে গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধমনোভাবাপন্ন হইয়া যাইতে পারে, তাহার আত্মসম্মানের বিসর্জনের সহিত এই গোষ্ঠীর কল্যাণের নিমিত্ত কাজ করিবার উত্সাহও নিভিয়া আসিতে পারে। শেষাবধি পরিচ্ছন্ন গ্রামের বিক্ষুব্ধ মানুষ লইয়া সরপঞ্চের সংস্কারকর্মের বিশেষ সুবিধা হইবে না।
য ত্ কি ঞ্চি ত্
ভর্তির আবেদনপত্রে ভুল থাকলে তা শোধরাতে হবে! এই অন্যায় আবদারের জন্য প্রধান শিক্ষককে জুতোপেটা করলেন অভিভাবকরা। বেশ করেছেন। স্কুলে তাঁরা তো সন্তানকে ভুল শোধরানো শেখার জন্য পাঠাচ্ছেন না। ওরা শিখুক: রোয়াব নিয়ে ভুল করো, বুক ফুলিয়ে কর্তৃপক্ষকে পেটাও। দিকে দিকে চলুক আন্দোলন: ফেল করলেও ক্লাসে উঠতে দিতে হবে, পরীক্ষায় টুকতে দিতে হবে। এখন থেকে ছাত্ররা তেজি ও লুম্পেন না হয়ে উঠলে বড় হয়ে গণধোলাই দেবে কী করে?