কলকাতা ও ঢাকা। আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ও সত্যেন্দ্রনাথ বসু।
বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করেন, আমরা মূর্খের সম্প্রদায়, অবাক বিস্ময়ে শুনি: সৃষ্টি ও ধ্বংসের উভয়েই নাকি অণু-পরমাণুদের ক্রিয়া-প্রক্রিয়ায়-বিক্রিয়ায়। মহাশূন্যের বিরাট অনির্ণেয় বিস্তার, তার সামান্য অংশীদার সৌরমণ্ডল, সূর্যের তত্ত্বাবধানে আমাদের পৃথিবীর মতো এক ঝাঁক গ্রহ-উপগ্রহ সব কিছুই নাকি অণু-পরমাণুদের কারসাজি। হিরোশিমা-নাগাসাকির কলঙ্কের দায়েও যুক্ত পরমাণুর লীলাখেলা। হালে পদার্থবিজ্ঞানীরা আর এক ধাপ এগিয়ে গেছেন, তাঁরা আপাতত অণু-পরমাণুদের রহস্য অনুসন্ধানেই নিমগ্ন। তাঁরা খোদ সৃষ্টিকর্তার কাছাকাছি পৌঁছে যেতে চাইছেন। এটা ঔদ্ধত্য কি না, তা বিচারসাপেক্ষ। কিন্তু ভারতীয়দের, বিশেষ করে বঙ্গভাষীদের কাছে যা বাড়তি আগ্রহের সূচনা করেছে, তা এই ঈশ্বর সন্ধানের গবেষণায় একটি বিশেষ পরমাণুর উপর্যুপরি উল্লেখ: বোসন। দেশে-বিদেশে প্রকাশিত ভারী ভারী বিশ্বকোষে অবশ্যই বোসন জায়গা করে নিয়েছে। সেই সঙ্গে যোগ করা হয়েছে যে, এই পরমাণুটি আবিষ্কারের কৃতিত্ব এক ভারতীয় বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর প্রাপ্য। মজার ব্যাপার হল, বিশ্বকোষগুলিতে আলাদা করে তাঁর নামোল্লেখ সাধারণত থাকে না, তিনি নোবেল পুরস্কারজয়ী নন এই অপরাধে। অথচ বোসনের উপর গভীরতর গবেষণা চালিয়ে পরবর্তী সময়ে এন্তার পদার্থবিজ্ঞানী নোবেল জিতেছেন।
তবে যেটা আরও মস্ত কৌতূহল উদ্রেক করতে বাধ্য, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি বিশেষ অধ্যায়ের সঙ্গে বোসন আবিষ্কারের যোগসূত্র। গত শতকের প্রথম দশকে সমগ্র বঙ্গদেশ উত্তাল। ১৯০৫ সালে ইংরেজ প্রভুদের সর্বশক্তিধর প্রতিভূ লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন পূর্ববঙ্গের সঙ্গে অসম যুক্ত করে নতুন প্রদেশ স্থাপনের প্রস্তাব, যার রাজধানী হবে ঢাকা নগরী। মুখ্য উদ্দেশ্য, পিছিয়ে থাকা মুসলমান সম্প্রদায়ের অবস্থার উন্নতি ঘটানো, সেই সঙ্গে স্বদেশি নিয়ে মাতামাতি করতে থাকা হিন্দুদের একটু দাবিয়ে রাখা খুশি-হওয়া সম্ভ্রান্ত মুসলমান ব্যক্তিবর্গের সহায়তা নিয়ে। উদ্দেশ্য কিন্তু সফল হল না, স্বদেশি আন্দোলনের সুর আরও চড়ল। ইংরেজ সরকার লর্ড কার্জনকে সরিয়ে নিয়ে গেলেন। একটু ঠান্ডা মেজাজের নতুন ভাইসরয় দ্বারা পরিস্থিতির মোড় ঘোরানোর প্রয়াস, পরিশেষে ১৯১১ সালের বিখ্যাত দিল্লির দরবারে বঙ্গভঙ্গ রদের ঘোষণা। সেই সঙ্গে এটাও জানিয়ে দেওয়া যে, ভারতবর্ষের রাজধানী আর হাড়পিত্তি জ্বালানো কলকাতা নয়, দিল্লি। শেষোক্ত ঘোষণাটি নিয়ে বাঙালি হিন্দুদের আদৌ মাথাব্যথা নেই। তাঁরা বঙ্গভঙ্গ যে রদ করতে পেরেছেন, সেই আনন্দেই মাতোয়ারা।
অন্য দিকে, আশায় বুক বেঁধে থাকা মুসলমান সম্প্রদায়ভুক্তদের মন জুড়ে ক্রোধ-অভিমান— তাঁদের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, বিদেশি প্রভুরা তা রক্ষা করলেন না। তাঁদের শান্ত করতে হয়, দুধের বদলে ঘোল হিসেবে বিদেশি কর্তাব্যক্তিরা সম্ভ্রান্ত কয়েক জন মুসলমান দিকপালদের কাছে ঢাকায় একটি অতিশয় উচ্চ মানের বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব দাখিল করলেন। অক্সফোর্ড-কেমব্রিজের সমকক্ষ হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের অনুসরণেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন পদ্ধতি স্থিরীকৃত হবে, গোটা দুনিয়া থেকে ছেঁকে ছেঁকে বিখ্যাত-বিখ্যাত পণ্ডিত মনীষীদের আহ্বান করে নিয়ে আসা হবে, তাঁদের উচ্চ মানের বেতন-ভাতারও ব্যবস্থা থাকবে। চাকচিক্যসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার প্রস্তাবে মুসলমান প্রতিনিধিরা বিগলিত। তাঁরা ভেবে দেখলেন না যে, মুসলমানদের মধ্যে সাক্ষরতার পরিমাপ তিন শতাংশেরও কম, সেখানে উচ্চশিক্ষার এই মহান প্রয়াস কতটুকু কাজে দেবে। তাতে অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে কোনও প্রতিবন্ধকতা দেখা দিল না। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রভর্তি শুরু। দেশ-বিদেশ থেকে সত্যিই বিখ্যাত পণ্ডিতদের নিয়ে আসার প্রক্রিয়া অব্যাহত রইল। তাঁদের আকৃষ্ট করবার জন্য এমন উঁচু স্তরের বেতন-বিন্যাস, যা দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গভীর উষ্মার কারণ হল। পূর্ণ অধ্যাপকদের মাসিক পারিশ্রমিক সময়সীমা মেনে ১০০০-২০০০ টাকা, সহযোগী অধ্যাপক বা রিডারদের বেতনক্রম ৮০০-১৫০০ টাকা, আর সাধারণ অধ্যাপক বা লেকচারারদের জন্য নির্ধারিত হল ৪০০-৮০০ টাকা বেতনক্রম। তখনকার মূল্যমানে বিচার করলে শিক্ষাক্ষেত্রে এই গোছের অর্থার্জন যথার্থই অভাবনীয়, অকল্পনীয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম পর্বে বিলেত থেকে বেশ কয়েক জন নামী-দামি অধ্যাপক বিভিন্ন বিভাগে পড়াতে এসেছিলেন। প্রথম দু’তিন জন উপাচার্যও খাঁটি সাহেব। তা ছাড়া, ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু পণ্ডিত ব্যক্তি এই সুদূর, তখন বলতে গেলে অখ্যাত ঢাকা শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ে সানন্দে যোগ দিয়েছিলেন।
সমস্যা দেখা দিল অন্যত্র। বেশ কিছু দিন ধরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বেসর্বা আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় শুধু বঙ্গপ্রদেশ নয়, অসম ব্রহ্মদেশ এবং বিহার ও ওড়িশার বেশ কিছু অংশের প্রবশিকা পরীক্ষা পর্যন্ত। গোটা বাংলার প্রতিটি কলেজ আশুতোষবাবুর নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য। ব্রিটিশ প্রভুরা তাঁর সঙ্গে তেমন শলাপরামর্শ না করে ঢাকায় আলাদা একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করায় তিনি রেগে অস্থির। তাঁর আশঙ্কা, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়টি তাঁর ক্ষমতার গণ্ডি খর্ব করবে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখের গ্রাস সামান্য হলেও কাড়বে। তিনি খবরের কাগজে বিবৃতি দিয়ে জানালেন, যেহেতু তাঁর সঙ্গে কোনও পরামর্শ না করে ঢাকায় নতুন বিদ্যাচর্চার প্রতিষ্ঠানটির স্থাপন, তাই তিনি ওই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে কোনও রকম সহযোগিতা করবেন না। আরও এক ধাপ এগিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি অধ্যাপককে অনুজ্ঞা জ্ঞাপন করলেন, তাঁর অনুমতি ব্যতিরেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির জন্য আবেদনপত্র পাঠাতে পারবেন না। কলকাতায় গবেষণাকর্মে রত কৃতী ছাত্রদেরও এই বার্তা পাঠালেন।
‘বাংলার বাঘ’কে উপেক্ষা করার মতো বুকের পাটা খুব কম অধ্যাপক বা গবেষকের সেই পর্বে ছিল। একমাত্র ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদারকে ঢাকায় যোগ দিতে আশুতোষবাবু অনুমতি দিলেন। আর একটি ব্যতিক্রম ঘটল সাহিত্যিক-গবেষক চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে। তিনি রবীন্দ্রনাথের সহচর রূপে বহুদিন কাজ করেছেন। যদিও তিনি মাত্র বিএ পাশ, তা হলেও রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং চিঠি লিখে চারুবাবুর জন্য উপাচার্যের কাছে বিশেষ সুপারিশ করেন। উপাচার্য সম্মত হলেন। আশুতোষ মুখোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বচসায় যাওয়া বিধেয় হবে না বিবেচনা করে চুপ করে গেলেন। কিন্তু আর কারও ক্ষেত্রে ছাড় নয়। তাঁর ভ্রূকুটির পরোয়া না করে মাত্র কয়েক জন তরুণ বিজ্ঞানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক রূপে যোগ দিলেন, যাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ। সত্যেন্দ্রনাথ নিছক শিক্ষকতা থেকে গবেষণায় অধিক আগ্রহী, অথচ কলকাতার বিজ্ঞান কলেজে তাঁর বেশির ভাগ সময় লেকচার দিতেই কেটে যায়, গবেষণার সুযোগ অতি সংক্ষিপ্ত। ঢাকায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রসংখ্যা কম। গবেষণার জন্য ঢালাও আর্থিক সংস্থান, গবেষণার সুযোগও অঢেল। কলকাতায় সত্যেন্দ্রনাথ বসুর বিরাট একান্নবর্তী পরিবার। কলকাতার পাট তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তিনি হিসেব করে দেখলেন, রিডার হিসেবে ৮০০ টাকা যে মাসিক বেতন পাবেন, তা দিয়ে ঢাকায় নতুন সংসার পেতেও কলকাতাস্থ পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পাঠানো সম্ভব। অতি প্রসন্ন চিত্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর যোগদান। এম এসসি ক্লাসে মাত্র গুটিকয় ছাত্র, বি এসসি ক্লাসে সব মিলিয়ে কুড়ি জনেরও কম। সুন্দর ঝকঝকে নতুন ল্যাবরেটরি, হাতাওয়ালা বাড়ির বাগানে বসে গাছের ছায়ায় সকালবেলা নিভৃত গণিতচর্চা, বোসন আবিষ্কারের সূত্রপাত। কিন্তু বজ্র যে এমন অদ্ভুত দিক থেকে শেল হানবে, তা কে জানত? ইতিমধ্যেই ব্রিটিশ সরকার নাম-দেখানো স্বায়ত্তশাসনের ছলে মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার চালু করেছেন। এত দিন পর্যন্ত গভর্নরের উপদেষ্টামণ্ডলীতে— এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে— খোদ সাহেবরা থাকতেন। এ বার থেকে এক জন-দু’জন ভারতীয়কেও সেই কাউন্সিলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বঙ্গপ্রদেশের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে দু’জন ভারতীয় উপদেষ্টা যোগ দিলেন। এক জন মুসলিম, অন্য জন অ-মুসলিম। অ-মুসলিম পরামর্শদাতা হিসেবে যোগ দিলেন এক জন বিখ্যাত বাঙালি আইনজীবী। তাঁকে অর্থ বিভাগের দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হল। তিনি আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের প্রাক্তন ছাত্র ও পরম অনুগত। আশুতোষ তাঁকে ডেকে ফিসফাস কী বলেছিলেন, তা কারও জানা নেই। কিন্তু ১৯২২ সালের শেষের দিকে প্রাদেশিক সরকারের অর্থ বিভাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে একটি চিঠি, যার সারমর্ম হল: প্রাদেশিক সরকারের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়, অতএব ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ টাকা ছাঁটাই অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এবং সেই উদ্দেশ্যে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনক্রম হ্রাস করা হবে। পূর্ণ অধ্যাপকরা মাসিক ১০০০ টাকায় স্থিত থাকবেন, সহযোগীরা পাবেন ৫০০-১০০০ টাকা এবং সাধারণ অধ্যাপকদের বেতনক্রম হবে ২০০-৪০০ টাকা।
উপাচার্য চিঠি লিখে সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে জানালেন, তিনি দুঃখিত, কিন্তু এখন থেকে সত্যেন্দ্রনাথের মাসমাইনে ৮০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৫০০ টাকা ধার্য করা হল। পদার্থবিজ্ঞানীর মাথায় হাত। পরমাণু গবেষণা নিয়ে জটিল অঙ্ক কষা আপাতত স্থগিত। সপ্তাহে দু’তিন দিন তিনি উপাচার্যকে প্রতিবাদপত্র লিখতে বসেন। বিশ্ববিদ্যালয় যে-শর্তে তাঁকে ঢাকায় এনেছিলেন তা খেলাপ করা হচ্ছে, এটা আইনসিদ্ধ নয়। তা ছাড়া, ৫০০ টাকায় তাঁর পক্ষে কলকাতা ও ঢাকায় দুটো আলাদা আলাদা সংসার চালানো অসম্ভব। সত্যেনবাবু চিঠি দিয়ে যাচ্ছেন, উপাচার্য তাঁর অ-সহায়তা ব্যক্ত করে জবাব পাঠাচ্ছেন। এমনি করে কয়েক সপ্তাহ কাটল। সত্যেনবাবু কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করা মনস্থ করে গোছগাছ শুরু করলেন।
ফের নাটকীয় ঘটনা। গবেষণা থেকে আহৃত তাঁর প্রাথমিক সিদ্ধান্তগুলি ভিত্তি করে ইতিমধ্যে সত্যেন্দ্রনাথ একটি প্রবন্ধ রচনা করে সদ্য নোবেল পুরস্কারজয়ী অ্যালবার্ট আইনস্টাইনকে পাঠিয়েছিলেন, তাঁর অভিমতের আকাঙ্ক্ষায়। হঠাত্ ভূমধ্যসাগরবর্তী একটি সুবিখ্যাত ভ্রমণপুরী থেকে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর কাছে একটি রঙিন পোস্টকার্ড এল। আইনস্টাইন ওই ভ্রমণপুরীতে ছুটি কাটাতে এসেছিলেন, সঙ্গে এনেছিলেন সত্যেন্দ্রনাথের গবেষণাপত্রটি। তিনি মুগ্ধ, বিস্মিত, উত্তেজিত। গত দশ-বারো বছর ধরে তিনি যে-লক্ষ্যের সন্ধানে অবিশ্রান্ত চর্চা করছিলেন অথচ সফল হননি, সতেন্দ্রনাথের গবেষণা সেই অন্বেষণে সফল। পরমাণু বিষয়ে সত্যেন্দ্রনাথের আবিষ্কার পদার্থবিজ্ঞানের যুগান্তর ঘটাবে, তিনি গবেষণা পত্রটি অবিলম্বে একটি অতি-সম্ভ্রান্ত গবেষণা পত্রিকায় প্রকাশের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু সত্যেন্দ্রনাথ বসুকেও যথাশীঘ্র ইউরোপে এসে নিবিড়তর আলোচনায় বসার আহ্বান জানাচ্ছেন, সে ব্যাপারে যাবতীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা হচ্ছে। আইনস্টাইনের পোস্টকার্ডটি সত্যেন্দ্রনাথ উপাচার্যের কাছে পৌঁছে দিলেন। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকরী সমিতির জরুরি সভা ডাকলেন। রঙিন পোস্টকার্ডে বাহিত বার্তার ভিত্তিতে সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে পূর্ণ অধ্যাপক পদে নিযুক্ত করা হল। তাঁর মাসিক বেতন ৮০০ টাকা থেকে কমে ৫০০ টাকাতে না দাঁড়িয়ে বরং আরও ২০০ বেড়ে ১০০০-এ দাঁড়াল। তিনি ঢাকাতেই থেকে গেলেন এবং ফের পরমাণু গবেষণায় নিমগ্ন হলেন।
মাঝেমধ্যে আমার কৌতূহল উদ্রেক হয়, মাইনে নিয়ে এই বাগড়ায় যদি কয়েক মাসের জন্য তাঁর মনস্কতা বিঘ্নিত না হত, বোসন-সঞ্জাত কিন্তু অধিকতর তেজস্ক্রিয় অন্য পরমাণুও হয়তো তখনই তিনি গবেষণা মারফত আবিষ্কার করতে পারতেন, আজ থেকে প্রায় নব্বই বছর আগে।