মিছিলের মুখ। হরেকৃষ্ণ কোঙার (সামনে বাঁ দিকে), জ্যোতি বসু (হরেকৃষ্ণবাবুর ঠিক পিছনে) ও সহযাত্রীরা।
সম্ভবত ১৯৬৭ সাল, কিংবা তার পরের বছরও হতে পারে। জাতীয় কৃষিপণ্য মূল্য কমিশনের হাল ধরে আছি, নতুন দিল্লির কৃষি ভবনে দফতর। সরকারি পরিবেশে ঈষৎ হাঁসফাঁস বোধ করি, তবে বেশ কিছু প্রাপ্তিও আছে। সারা দেশের প্রত্যন্তে ঘুরছি, বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষি ব্যবস্থার বিন্যাস নিয়ে জ্ঞানান্বিত হচ্ছি, হতদরিদ্র তথা ভূমিহীন কৃষকদের কী পরিমাণ শোষণ করা হয় এবং কী বিচিত্র ফন্দিফিকিরে, সে সম্পর্কে অবহিত হই, সেচ-সচ্ছল রাজ্যগুলিতে কুলাক সম্প্রদায়ের ক্রমবর্ধমান দাপট সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার সঞ্চয় ঘটে। শীত ঋতু, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল ভারতে খেলতে এসেছে, দিল্লিতে অনুষ্ঠিত টেস্ট ম্যাচের অন্তিম দিনে লোভ সামলাতে না পেরে দুপুরের দিকে দফতর থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে খেলা দেখতে চলে গেলাম।
পড়ন্ত অপরাহ্ণে দফতরে প্রত্যাবর্তন করে শুনি, হরেকৃষ্ণ কোঙার আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে ফিরে গেছেন। জীবনে এতটা লজ্জা অনুভব খুব কমই করেছি। শুধু লজ্জা নয়, আত্মধিক্কারও! ছ’মাস দেশ ভ্রমণ করে জাতীয় কৃষিসমস্যা সম্বন্ধে যতটুকু ধ্যানধারণা আমার পক্ষে আয়ত্ত করা সম্ভব, হরেকৃষ্ণবাবুর সঙ্গে আধ ঘণ্টা আলাপেই তা প্রাঞ্জলতর করে বুঝিয়ে দিতেন তিনি। ভারতবর্ষের প্রতিটি প্রান্তের ভূমি-সমস্যার খুঁটিনাটি এবং সমস্যাগুলির উৎস তাঁর নখদর্পণে। বেশির ভাগ সময় নিজের রাজ্যে কাটিয়েছেন, মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোনও ভাষায় বাগ্বিনিময়ের সুযোগ তাঁর সীমিত। অথচ প্রয়োজনে নতুন দিল্লির ভারী ভারী মন্ত্রী-আমলাদের সঙ্গে অনভ্যস্ত ভাষাতেও সরল-সচ্ছল বক্তব্য অনায়াসে উপস্থাপন করতে পারতেন। তাঁর সিদ্ধান্তের সঙ্গে তাঁদের মতদ্বৈধ ঘটলেও হরেকৃষ্ণ কোঙার সম্পর্কে অপার শ্রদ্ধাজড়িত মুগ্ধতাবোধে কদাপি চিড় ধরেনি।
একমাত্র লাতিন আমেরিকা বাদ দিয়ে গোটা পৃথিবীতে বামপন্থীরা এই মুহূর্তে গভীর দুর্দশাগ্রস্ত, আমাদের দেশেও তথৈবচ, আর আমাদের রাজ্যে তাঁরা তিন দশকেরও অধিক কাল প্রশাসনের দায়িত্বে থাকার পরও আপাতত ল্যাজে-গোবরে। সুতরাং এটা স্বাভাবিক যে, এ বছর হরেকৃষ্ণ কোঙারের (১৯১৫-১৯৭৪) জন্মশতবর্ষ, আদৌ কোনও শোরগোল নেই। (অতি সম্প্রতি তাঁর অনুজ ও সহযোদ্ধা বিনয় কোঙারের মৃত্যুসংবাদ পরিবেশনের সূত্রে সংবাদপত্রে তথ্যটির সামান্য উল্লেখ দেখা গেল।) বর্ধমান জেলার গ্রামাঞ্চলে বর্ধিষ্ণু অগ্রক্ষত্রিয় পরিবারে তাঁর জন্ম। গত শতকের গোড়ার দশকগুলিতে দেশব্যাপী স্বদেশপ্রেমের প্লাবন, সদ্য-তরুণ হরেকৃষ্ণও ভেসে গেলেন, সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে যোগদান প্রায় অবধারিতই ছিল। অতঃপর গ্রেফতার, বিচার, শাস্তি, আন্দামানে সেলুলার কারাগারে বন্দি, কারাভ্যন্তরেই মার্ক্সবাদে দীক্ষা, মুক্তির পর নিজের জেলায় ফিরে কমিউনিস্ট পার্টির পরম আত্মপ্রত্যয়ী কর্মী। আশ্চর্য সংগঠন প্রতিভা, গভীর তত্ত্বজ্ঞানের সঙ্গে সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানের সংশ্লেষণ, বিভিন্ন স্তরের মানুষজনের সঙ্গে নম্রতার সঙ্গে হার্দ্যতার মিশ্রণ, সমালোচনা ধৈর্য ধরে শোনবার মতো বিনয় তাঁর খ্যাতি দ্রুত ছড়িয়ে দিল। দেশ জুড়ে যে কৃষক আন্দোলন ক্রমশ সংঘবদ্ধ হচ্ছিল, কয়েক বছরের মধ্যে হরেকৃষ্ণ কোঙার তারও নেতৃত্বে উত্তীর্ণ হলেন, সারা ভারত কিষান সভার সম্পাদক হলেন।
যে কোনও পরিবেশে ভাষা ব্যবহারের উচ্চাবচতা ডিঙিয়ে নিজের চিন্তাভাবনা সহজ সচ্ছলতার সঙ্গে ব্যক্ত করার প্রতিভা সকলের থাকে না। স্বাধীনতা-উত্তর অধ্যায়ে দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে বামপন্থী আন্দোলন যখন ক্রমশ সংগঠিত হচ্ছিল, তার নেতাদের মধ্যে সম্ভবত কেরলের নেতারাই সর্বত্রগামিতায় অগ্রগণ্য ছিলেন। নাম্বুদিরিপাদ-গোপালন প্রমুখ বেশ কয়েক জন যখন-তখন কর্ষণরত কৃষি-মজুরের সঙ্গে আলাপচারিতায় আত্মার আত্মীয় বনে যেতে পারতেন, কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে তাঁদের সমস্যা নিয়ে বিশদ আলোচনায় মগ্ন হতেন, রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে সাদামাটা চায়ের দোকানে ঘরোয়া আড্ডায় মেতে উঠতেন, আবার রাজধানীতে প্রশাসনের উচ্চতম কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় অবিশ্বাস্য পারদর্শিতা প্রদর্শন করতে পারতেন। মনে পড়ছে, প্রথম সাধারণ নির্বাচন সাঙ্গ, লোকসভায় কংগ্রেস দলের একচ্ছত্র প্রভাব, সাকুল্যে পঁচিশ জন সাংসদ নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি বৃহত্তম বিরোধী শক্তি, জওহরলাল নেহরু একটু ব্যঙ্গের সুরে বামপন্থীদের উদ্দেশে বাক্যবাণ নিক্ষেপ করলেন: ‘তোমরা তো বিপ্লবী, সংসদীয় গণতন্ত্র বিশ্বাস করো না, তা হলে এখানে এসেছ কেন?’ সঙ্গে সঙ্গে কৃষক-মজুরদের মেঠো নেতা গ্রাম্য চেহারার গোপালনের দৃপ্ত জবাব, ‘আপনাদের সংসদীয় ব্যবস্থাকে ভিতর থেকে ধ্বংস করতে!’
এবংবিধ সর্বচারিতা বাংলার বামপন্থী নেতাদের মধ্যে কিন্তু বিরল ছিল। প্রমোদ দাশগুপ্তের নীরব সংগঠন প্রতিভা প্রায় তুলনাহীন। অন্তরালে থেকে দলীয় পত্রিকা প্রকাশের দায়িত্ব পালন করেছেন, রাজ্য দফতর থেকে প্রতিটি জেলা সংগঠনের সঙ্গে সতত যোগাযোগ রক্ষার গুরুভার কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন, জেলায় জেলায় সফর করতে তেমন দেখা যেত না, তবু তাঁর এক আশ্চর্য দক্ষতা— অমুক জেলার অমুক মহকুমার অমুক গ্রামে সর্বদা মাথা নিচু করে থাকা দলীয় কর্মীটির দিননির্বাহের খুঁটিনাটি প্রমোদ দাশগুপ্তের জানা। এই প্রতিভার জন্যই তিনি দলীয় সংগঠনের অবিসংবাদিত নেতা, দলীয় সদস্যদের অতি নিকটজন, অথচ প্রকাশ্য সভাসমিতিতে তাঁর অনাগ্রহ, জাতীয় সংগঠনের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক সমিতির অত্যন্ত ক্ষমতাবান সদস্য হওয়া সত্ত্বেও রাজ্যের বাইরে যেতে আদৌ পছন্দ করতেন না।
জ্যোতি বসুর সম্পূর্ণ অন্য ধাঁচের ব্যক্তিত্ব। স্বাচ্ছন্দ্যের নিরাপদ ঘেরাটোপে কাটানো শৈশব-কৈশোর-প্রথম যৌবনের স্মৃতি পিছনে ফেলে রেল শ্রমিক আন্দোলনে যুক্ত হয়ে যত্রতত্র ঘুরে বেড়ানো, কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা সংগ্রহ, মিতবাক মানুষটির বাংলা ও ভাঙা-ভাঙা হিন্দিতে বলতে শেখা, শ্রমিক প্রতিনিধি হিসেবেই বিধানসভায় প্রবেশ, অতঃপর তাঁর অভাবনীয় উন্মোচন— বিধানসভায় দলের সর্বসাকুল্যে মাত্র তিন সদস্য, দেশভাগের পর দুইয়ে দাঁড়াল, ইংরেজি বলতে পারেন বলেই সম্ভবত তাঁকে নেতা নির্বাচন করা হয়েছিল। তিনি একাই সহস্র, রাজ্যসুদ্ধ দুর্গত মানুষদের যেন একক রক্ষাকর্তা। শহুরে মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি তাঁর কাটা-কাটা কথার ছটায় আকীর্ণ বক্তৃতা শুনে মাত। কিন্তু কোথায় রহিল বাধা, তিনি তাঁর দূরত্বেই থেকে গেলেন, যা সম্ভবত তিনি নিজেও পছন্দ করতেন। বিশেষ করে তিনি যখন গ্রামাঞ্চলে দলের কাজে যেতেন, গ্রামবাসীদের অভিভূত শ্রদ্ধা কুড়োতেন, জ্যোতি বসু তাঁদের নেতা, পথপ্রদর্শক, অথচ দূরাগত নক্ষত্র-নিরীক্ষণের মতো তাঁর দিকে তাঁদের অপার বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকা। সময় গড়ায়, জ্যোতি বসু অবলীলায় দলের সর্বভারতীয় নেতা, রাজ্য প্রশাসনে প্রবেশের অনেক আগে থেকেই স্থিতধী রাজনীতিবিদ বলে তাঁর প্রখ্যাতি। প্রমোদ দাশগুপ্ত ও জ্যোতি বসু দলীয় আদর্শে অবিচল থাকলেও তত্ত্বকথায় নিজেদের জড়াতেন না (তবে দু’জনের মধ্যে একটু ফারাকও ছিল: বিনোদনের জন্য প্রমোদবাবু দর্শন ইতিহাস বা তাত্ত্বিক কোনও বই পড়তে পছন্দ করতেন, জ্যোতিবাবু হালকা কোনও রহস্যকাহিনি।)।
হরেকৃষ্ণ কোঙার আন্দামানে বন্দি অবস্থায় প্রচুর তত্ত্বের বই তো পড়েইছিলেন, মুক্ত হয়ে অখণ্ড বঙ্গে কৃষক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে তত্ত্বাদিকে অভিজ্ঞতার নিরিখে বিচার-বিশ্লেষণের পূর্ণ সুযোগ গ্রহণে তিনি অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে। বিপন্ন ভাগচাষি, স্বল্প জমির মালিক ও ভূমিহীন নিঃস্ব দরিদ্রতম খেতমজুরদের ক্ষোভ এবং মনোবেদনা তাঁর কাছে সংগ্রামের সর্বপ্রধান হাতিয়ার। তাঁদের মনের কথা তিনি অপ্রতিরোধ্য রাজনৈতিক দাবিতে পরিণত করলেন: আইনি ঊর্ধ্বসীমার বাইরে বহু জমি এক শ্রেণির জমিদার-জোতদার বেনামিতে দখলে রেখেছে— পুলিশ আসুক, জমিদার-জোতদারদের গুন্ডাবাহিনী আসুক, জোট বাঁধা কৃষককুল রক্ত ঝরিয়ে সেই দখল নেওয়া জমিতে তাদের অধিকার রক্ষা করবে। স্পষ্ট করে জানালেন, বর্গাদারদের যখন-তখন উৎখাতের পালা শেষ করতে হবে, ভাগচাষিদের তাদের চাষ করা জমিতে আইনি অধিকার দিতে হবে এবং তা বংশানুক্রমী হবে, খেতমজুরদের ন্যূনতম মজুরিতে আইনের সিলমোহর লাগাতে হবে। এই আন্দোলনের অগ্রপুরুষ হরেকৃষ্ণবাবু তখন গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে বেড়াচ্ছেন, সাধারণ মানুষ তাঁর দৃপ্তকণ্ঠে নিজেদের স্বপ্নকে উচ্চারিত হতে দেখছে, শাঁসালো জোতদারদের ঘরে ঘরে ত্রাস-কান্নার রোল।
এই আন্দোলন শোষিত-লাঞ্ছিত কৃষক সম্প্রদায়কে যে প্রেরণা জুগিয়েছিল গত শতকের মধ্য দশকগুলিতে, পশ্চিম বাংলায় বামপন্থী রাজনৈতিক শক্তিবৃদ্ধির তা অন্যতম প্রধান উৎস। সেই দুর্ধর্ষ আন্দোলনের হোতা রূপে প্রমোদ দাশগুপ্ত ও জ্যোতি বসুর পাশাপাশি হরেকৃষ্ণ কোঙারের নামোল্লেখও সমান প্রাসঙ্গিক। তিনি নিজে তাঁর দ্বারা স্ফুরিত আন্দোলনের পরিপূর্ণতা দেখে যেতে পারেননি। তাঁর মৃত্যুর কয়েক বছর পর বামফ্রন্ট রাজ্যে সরকার গড়ে প্রথম পর্বেই তাঁর স্বপ্নকে আইনবদ্ধ করে। ইতিহাসের বিচিত্র পরিহাস, তাঁর নেতৃত্বে ও পরিচালনায় যে-দল গ্রামে গ্রামে ভূমিহীনদের জমি পাইয়ে দিয়েছিল, পরের প্রজন্মের দলীয় নেতৃত্বের অযোগ্যতা ও অ-বিচক্ষণতায় মাত্র কয়েক দশক বাদে গরিবদের জমি ছিনিয়ে বড় আদমিদের উপহার দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। আমার অবশ্য একটি অনুতাপ থেকেই গেছে। খেতমজুর, গরিব কৃষকরা দু’এক ছটাক জমির মালিক হলেন, কিন্তু তার পর কী? সদ্য যাঁরা জমির মালিক হয়েছেন, তাঁদের সেই মালিকানা পরস্পরের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার যে-জাদু সমবায় আন্দোলনে নিহিত, তা নিয়ে হরেকৃষ্ণবাবু কী ভেবেছিলেন, তা আর জানবার উপায় নেই।
শুরু করেছিলাম একটি ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ দিয়ে, শেষও করছি অনুরূপ এক কাহিনি পেশ করে। ১৯৭৫ সালের জুন মাসের শেষ সপ্তাহ। ইন্দিরা গাঁধী জরুরি অবস্থা জারি করেছেন, সর্বত্র দুঃশাসনের বজ্র আঁটুনি। খবর এল, উল্ফ ল্যাডিজেনস্কি প্রয়াত হয়েছেন। কৃষিপণ্য মূল্য কমিশনে থাকাকালীন আমার মস্ত সৌভাগ্য হয় রাশিয়া-জাত মার্কিন ভূমিসংস্কার-বিশেষজ্ঞ ল্যাডিজেনস্কির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার। তিনি ভারত সরকারকে ভূমিসমস্যার সূত্র ও সমাধান নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন। তাঁর দেওয়া ভয়ঙ্কর সব সংস্কার-প্রস্তাব পড়ে শ্রেণিস্বার্থ-আকুল মন্ত্রীরা ভীত, সন্ত্রস্ত। প্রতিবেদনগুলি ফাইলের পাহাড়ের তলায় সযত্নে চাপা পড়ে রইল। ব্যর্থমনোরথ ল্যাডেজিনস্কি এ-সব বৃত্তান্ত নিয়ে আমার সঙ্গে যে আলাপ শুরু করলেন, তা ক্রমে পরম হৃদ্যতায় পরিণত হয়। ১৯৭৫ সালে তাঁর মৃত্যুর পরে মুম্বইয়ে ‘ইকনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি’র অনুরোধে একটি স্মরণী লিখে পাঠালাম। তাতে এমন কয়েকটি পঙক্তি ছিল: ‘ল্যাডিজেনস্কি নিজে কোনও রাজনৈতিক দর্শন বোধহয় বিশ্বাস করতেন না, কিন্তু রাজনৈতিক আদর্শবাদীদের সঙ্গে মত বিনিময় প্রতিবিনিময় নিয়ে বরাবরই আগ্রহী ছিলেন। দিল্লি থেকে কোনও কাজে যখনই আমায় কলকাতায় যেতে হত, প্রতিবার তিনি অনুরোধ করতেন— হরেকৃষ্ণ কোঙারের নতুন কোনও বই বেরিয়ে থাকলে আমি যেন মনে করে তাঁর জন্য নিয়ে যাই, তিনি অনুবাদ করিয়ে নেবেন কাউকে দিয়ে।’ সেন্সরের দফতর থেকে লেখাটি ফেরত এনে দেখা গেল নজরদারদের কাঁচি চালনায় পঙক্তিগুলি বিলুপ্ত। কিন্তু যে ইতিহাসধারায় হরেকৃষ্ণ কোঙার বিশ্বাস করতেন, যা ত্বরান্বিত করতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তা কি অত সহজে বিলোপ করা সম্ভব?