Child Safety

পরীক্ষা

তালিকায় ভারত কত নম্বরে? প্রশ্নটি ‘কত নম্বর পাইয়া ফেল করিল’ জিজ্ঞাসা করিবার মতো প্রহসন হইয়া দাঁড়াইয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:১৭
Share:

শিশুরা খুশি হয় কিসে? লেবাননের এক বালিকার উত্তর, ‘সকলে খুশি হইলে আমরাও খুশি হই।’ সত্য এমনই সরল। শৈশবকে আনন্দময় করিতে হইলে কেবল পুষ্টি-শিক্ষা-স্বাস্থ্যের সূচক গনিয়া লাভ হইবে না। শিশুর পরিবেশ-পরিমণ্ডলকে সার্বিক ভাবে উন্নত, স্বচ্ছ, আনন্দময় করা প্রয়োজন। ইঁদুরের উৎপাত, কুকুরের ভয়, আবর্জনার স্তূপকে ‘শিশুদের সমস্যা’ বলিয়া সচরাচর দেখা হয় না। কিন্তু আর্জেন্টিনার শিশুরা জানাইয়াছে, এইগুলি তাহাদের সুস্থ জীবন বিঘ্নিত করিতেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি শিশুদের কথাকে তুচ্ছ করে নাই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, রাষ্ট্রপুঞ্জের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) এবং ‘ল্যানসেট’ পত্রিকা সম্প্রতি একটি রিপোর্টে শিশুর উন্নয়ন ও নিরাপত্তার পরিস্থিতি বিচার করিয়াছে, এবং নানা সুপারিশ করিয়াছে। তাহাতে শিশুর সামগ্রিক পরিবেশের নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের উপায় সন্ধান করা হইয়াছে। নগরায়ণের ঝোঁকে গোটা বিশ্বে পরিকল্পনা-বহির্ভূত জনবসতি গড়িয়া উঠিয়াছে, বিশ্বের চল্লিশ শতাংশ শিশু সেই সকল এলাকার বাসিন্দা। অতিরিক্ত লোকের চাপ, দারিদ্র, পানীয় জল ও শৌচ-নিকাশির মতো মৌলিক পরিষেবার অভাব শিশুদেরও বিপন্ন করিতেছে। উপরন্তু রান্নার জন্য ব্যবহৃত জৈব জ্বালানির ধোঁয়া শিশু ও মহিলাদের ক্ষতি করিতেছে বেশি। অতিরিক্ত গরম কিংবা ঠান্ডা, বিপজ্জনক রেলপথ বা রাস্তার নৈকট্য, অগ্নি-নিরাপত্তার অভাব, মদ্যাসক্তি ও হিংস্রতা, এমন নানা সমস্যা গোটা বিশ্বে শৈশবকে দীর্ণ করিতেছে। শিশুর নিরাপত্তার এমন বহুমাত্রিক শর্ত মানিবার জন্য ডাক দিয়াছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ।

Advertisement

তালিকায় ভারত কত নম্বরে? প্রশ্নটি ‘কত নম্বর পাইয়া ফেল করিল’ জিজ্ঞাসা করিবার মতো প্রহসন হইয়া দাঁড়াইয়াছে। শিশু নিরাপত্তার নিরিখে ভারতের স্থান হইয়াছে একশত বত্রিশটি দেশের পর। আশ্চর্য নহে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পুষ্টির নিরিখে ভারত উন্নতি করিয়াছে, কিন্তু উন্নত দেশের সমকক্ষ হয় নাই। এমনকি বেশ কিছু প্রতিবেশী দেশের তুলনায় শিশু উন্নয়নের প্রচলিত নানা সূচকে পিছাইয়া আছে ভারত, তাহাও নূতন কথা নহে। বার বার একই আক্ষেপ করিয়া লাভ কী? বরং বুঝিতে হইবে, নূতন বিপত্তি উপস্থিত। পরীক্ষায় নম্বর বাড়াইবার জন্য ভারতের নেতারা কোমর বাঁধিতে বাঁধিতেই বদলাইয়া গিয়াছে প্রশ্নপত্র। এখন শিশু-উন্নয়নে নম্বর পাইতে হইলে দূষণ-বিমুক্তি, মাদক নিয়ন্ত্রণ হইতে পথ-নিরাপত্তা, নানা নূতন পরীক্ষায় বসিতে হইবে।

সরকারি আধিকারিকদের ধমক দিয়া শিশুমৃত্যু আর শিশুশিক্ষার কয়েকটি সূচকে উজ্জ্বল নম্বর বসাইয়া ‘উন্নয়ন’-এর ডঙ্কা বাজাইবার দিন নাই। ‘সুস্থায়ী উন্নয়ন’-এর অভ্যন্তরে শিশুর সার্বিক নিরাপত্তার যে সকল শর্ত রাখা হইয়াছে, তাহাতে ফাঁকি ধরা পড়িবেই। শিশুর ‘খেলিবার অধিকার’-কে স্বীকৃতি দিয়া, সব শিশুর জন্য ‘নিরাপদ ক্রীড়া ও বিনোদন’-এর স্থান দিতে পারিবে ক’টি ভারতীয় শহর? শিশুদের নিশানা করিয়া অতিরিক্ত চিনি ও স্নেহপদার্থযুক্ত ক্ষতিকর খাদ্যের (‘ফাস্ট ফুড’) বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণের কতটুকু ক্ষমতা রহিয়াছে সরকারের? নিজের সমকামী বা উভকামী যৌন-পরিচয় ঘোষণা করিবে যে কিশোর বা কিশোরী, তাহাকে আশ্বাস দিতে, সম্মান করিতে সরকার সমর্থ? বড়ই কঠিন পরীক্ষায় ফেলিয়াছে শিশুরা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement